বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ল ৪ হাজার ১৩২ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯ জুন ২০২২, ০৪:১৩ পিএম

শেয়ার করুন:

স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ল ৪ হাজার ১৩২ কোটি টাকা
ফাইল ছবি

করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলা ও পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্যখাতের সার্বিক উন্নয়নকে অগ্রাধিকারে রেখে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ খাতে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এবার স্বাস্থ্যখাতে ৩৬ হাজার ৮৬৩ টাকা কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ছিল ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। চলতি বছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরে ৪ হাজার ১৩২ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্যে মোট বরাদ্দের মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা খাতে ২৯ হাজার ২৮১ কোটি ও স্বাস্থ্য শিক্ষা খাতে সাত হাজার ৫৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বিকাল ৩টায় বাজেট উপস্থাপনাকালে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এই তথ্য জানান।

বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, করোনা মোকাবিলা ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে নেওয়া উদ্যোগগুলো আমরা আগামী অর্থবছরেও অব্যাহত রাখব। মহামারি মোকাবিলায় গৃহীত কার্যক্রমসহ করোনা পরবর্তী সময়েও চলমান থাকবে।

স্বাস্থ্যখাতের সার্বিক উন্নয়নকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা হচ্ছে। এধারা অব্যাহত রাখতে আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৩৬ হাজার ৮৬৩ টাকা কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আগের বাজেটের শতকরা ১১ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি।

মুস্তফা কামাল আরও বলেন, ‘৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ৬টি মূল প্রতিপাদ্য বিষয়ের উন্নয়ন পদক্ষেপের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘মানবস্বাস্থ্য, আত্মবিশ্বাস, কর্মসংস্থান, আয় ও অর্থনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরিয়ে আনতে কোভিড-১৯ থেকে দ্রুত পুনরুদ্ধার’। বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিয়ে জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে জনগণের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনা, অর্থনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক রেখে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সরকার নিরন্তর বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।


বিজ্ঞাপন


স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করাই হবে সরকারের মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অন্যতম লক্ষ্য।’

‘সরকার বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ এ গড় আয়ুষ্কাল ৮০ বছরসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন এবং জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি ২০১১ এর কর্মকৌশল অনুযায়ী সর্বস্তরের জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা ও সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে নানাবিধ কৌশল গ্রহণ করছে। এর মধ্যে ৪র্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচি গ্রহণ, হেলথ কেয়ার ফাইন্যান্সিং স্ট্রাটেজি (২০১২-২০৩২) প্রণয়ন অন্যতম।’

নাগরিকদের সুস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা নিশ্চিতে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘নাগরিকের সুস্বাস্থ্য এবং সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য করোনা অতিমারির ক্রান্তিকাল সফলভাবে উত্তরণপূর্বক সরকার স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা খাতের উন্নয়নে অধিকতর গুরুত্ব দিয়েছে। যেনো সকল নাগরিক সুলভে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পায় এবং সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী হিসেবে গড়ে উঠে। কোভিড-১৯ হতে জনজীবন সুরক্ষার জন্য দ্রুত পরিকল্পনা গ্রহণ ও বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। Covid-19 Bangladesh Preparedness and Response Plan তৈরি করে, সে পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে।

করোনা সংক্রমণরোধে সরকারের প্রধান কার্যক্রমসমূহ হচ্ছে- দেশব্যাপী ৮৭৯টি কোভিড টেস্টিং ল্যাব স্থাপন, সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসায় ৮৯টি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল প্রস্তুত করা, সারাদেশে মোট ১৩ হাজার ১৯৩টি কোভিড আইসোলেশন বেড ও এক হাজার ১৭৪টি কোভিড আইসিইউ বেড প্রস্তুত রাখা, ১১৯টি কেন্দ্রে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপন, তিন ধাপে প্রায় ১০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ, ৫০ শয্যায় উন্নীত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসমূহে ১০টি করে জুনিয়র কনসালটেন্ট (বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক) এর পদ সৃষ্টি ইত্যাদি।

এছাড়া, দায়িত্ব পালনকালীন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুজনিত কারণে ক্ষতিপূরণ ও করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্মানি দেওয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপের ফলে কোভিড-১৯ অতিমারি আমরা সফলভাবে মোকাবেলা করতে পেরেছি।’

আগামীর পরিকল্পনার কথা জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ৮টি বিভাগীয় হাসপাতালে ১০০ শয্যার ক্যান্সার ইউনিট স্থাপন প্রকল্প চলমান রয়েছে। এছাড়া, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫০ শয্যা এবং জেলা সদর হাসপাতালে ১০ শয্যার ডায়ালাইসিস ইউনিট স্থাপন প্রকল্প চলমান রয়েছে। সৌদি অর্থায়নে সিলেট, বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী এবং ফরিদপুরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিট স্থাপন প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শুরু করেছি। জেলা পর্যায় ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণে সরকারি হাসপাতালভিত্তিক চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ৫ হাজার শয্যা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক বিশ্বমানের হাসপাতালে রূপান্তর ও পুনঃনির্মাণে ফিজিবিলিটি স্টাডি প্রকল্প, পাবনা মানসিক হাসপাতালকে আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণ এবং বিভাগীয় পর্যায়ের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসমূহে পূর্ণাঙ্গ মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ইউনিট স্থাপন প্রকল্প গ্রহণের লক্ষ্যে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আমরা মহাখালীতে বঙ্গবন্ধু হেলথ সিটি স্থাপনের পরিকল্পনা করেছি।

আগামী দিনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘সাংবিধানিক দায়িত্ব হিসেবে সুলভে মানসম্মত স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও পরিবার কল্যাণ (এইচএনপি) সেবা প্রদানের মাধ্যমে একটি সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী গড়ে তোলায় সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সে লক্ষ্যে স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর উন্নয়ন কর্মসূচি (৪র্থ এইচএনপিএসপি) এর আওতায় বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পাশাপাশি সর্বস্তরের জনগণকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনার ফলে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সম্পর্কিত এমডিজি লক্ষ্য অর্জনে অসাধারণ সফলতা দেখিয়েছে। আমরা দৃঢ় প্রত্যয়ী যে, এর ধারাবাহিকতায় আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসমূহ (এসডিজি) অর্জন করতে সক্ষম হবে। এছাড়া বাজেটে স্বাস্থ্য শিক্ষাখাতে তুলনামূলক মান উন্নয়ন ও গবেষণা বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হচ্ছে বলে জানান মুস্তফা কামাল।

এমএইচ/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর