রোববার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

হজের প্রতিদান ও অনাদায়ের শাস্তি

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১ মে ২০২৩, ০৭:০৬ পিএম

শেয়ার করুন:

হজের প্রতিদান ও অনাদায়ের শাস্তি

হজ ইসলামি শরিয়তের অন্যতম স্তম্ভ। আর্থিক ও দৈহিকভাবে সামর্থ্যবান নারী-পুরুষের ওপর জীবনে একবার হজ করা ফরজ। ইরশাদ হয়েছে, ‘প্রত্যেক সামর্থ্যবান মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ।’ (সুরা আলে ইমরান: ৯৭)

হজের ফজিলত
হজের অসংখ্য সওয়াব ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। হাদিসে এসেছে, রাসুল (স.) বলেন, ‘তোমরা হজ-ওমরা সঙ্গে সঙ্গে করো। কেননা, এ দুটি দারিদ্র্য ও গোনাহ এভাবে দূর করে, যেভাবে হাঁপর লোহা ও সোনা-রুপার ময়লা দূর করে। আর মকবুল হজের বিনিময় জান্নাত’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ২৮৮৭)


বিজ্ঞাপন


সাধারণত যে আমলে কষ্ট বেশি, তার সওয়াব ও ফজিলত তত বেশি। তাই রাসুল (স.)-এর প্রতি ঈমান আনার পর জিহাদ ও হজকে সর্বোত্তম আমল বলা হয়েছে। একবার রাসুল (স.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘সর্বোত্তম আমল কোনটি?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনা।’ প্রশ্ন করা হলো, ‘তারপর কোনটি?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা।’ আবার প্রশ্ন করা হলো, ‘এরপর কোনটি?’ তিনি বললেন, ‘হজে মাবরুর তথা মকবুল হজ।’ (বুখারি: ১৫১৯)

হজ নিষ্পাপ হওয়ার মাধ্যম। রাসুল (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে হজ করল এবং এসময় অশ্লীল ও গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকল, সে নবজাতক শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসবে।’ (বুখারি: ১৫২১)

আরও পড়ুন: হজের ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতসমূহ

রাসুলুল্লাহ (স.) হজের বিনিময় জান্নাত বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন—العمرة إلى العمرة كفارة لما بينهما، والحج المبرور ليس له جزاء إلا الجنة এক ওমরা আরেক ওমরা পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহর ক্ষতিপূরণ হয়ে যায়। আর হজে মাবরুরের প্রতিদান তো জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়। (সহিহ বুখারি:: ১৭৭৩; সহিহ মুসলিম: ১৩৪৯; মুসনাদে আহমদ: ৭৩৫৪; সহিহ ইবনে হিববান: ৩৬৯৫) 


বিজ্ঞাপন


হজ না করার পরিণাম
সামর্থ্য থাকার পরও হজ না করার পরিণাম ভয়াবহ। ফরজ হজ ত্যাগ করলে ইহুদি-নাসারার মতো মৃত্যু হবে বলে হাদিসে সতর্ক করা হয়েছে। ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন- ‘যে ব্যক্তি হজ করার সামর্থ্য রাখে, তবুও হজ করে না, সে ইহুদি হয়ে মৃত্যুবরণ করল কি খ্রিস্টান হয়ে, তার কোনো পরোয়া আল্লাহর নেই।’ (ইবনে কাসির: ১/৫৭৮)

আর কেউ যদি হজ অস্বীকার করে বা কোনো ধরনের অবহেলা প্রদর্শন করে তবে সে আল্লাহর জিম্মার বাইরে বলে বিবেচিত হবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন- ‘মানুষের মধ্যে যারা সেখানে (বায়তুল্লাহ) পৌঁছার সামর্থ্য রাখে তাদের ওপর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ গৃহের হজ করা ফরজ। আর কেউ যদি অস্বীকার করে, তাহলে জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিজগতের প্রতি মুখাপেক্ষী নন।’ (সুরা আলে ইমরান: ৯৭)

আরও পড়ুন: কোন প্রকার হজ সর্বোত্তম?

এছাড়াও হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ তাআলা হজ না করার পরিণতি সম্পর্কে বলেছেন, ‘যে বান্দাকে আমি দৈহিক সুস্থতা দিয়েছি এবং আর্থিক প্রাচুর্য দান করেছি, অতঃপর (গড়িমসি করে) তার পাঁচ বছর অতিবাহিত হয়ে যায় অথচ আমার দিকে (হজব্রত পালন করতে) আগমন করে না, সে অবশ্যই বঞ্চিত।’ (ইবনে হিব্বান: ৩৭০৩)

হজ জীবনে একবার ফরজ
হজ জীবনে একবারই ফরজ। কেউ যদি একাধিকবার করে, তবে তা হবে নফল হজ।’(বুখারি: ৭২৮৮)

যাদের ওপর হজ ফরজ, যত দ্রুত সম্ভব হজ আদায় করা উত্তম। যেখানে মানুষের জীবন-মরণের এক সেকেন্ডের নিশ্চয়তা নেই, সেখানে এক বছর অনেক দীর্ঘ সময়। তাই রাসুল (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি হজ করার ইচ্ছে করেছে, সে যেন তাড়াতাড়ি তা করে নেয়।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১৭৩২)

হজ ফরজ হওয়ার শর্ত
পাঁচটি শর্তসাপেক্ষে হজ ফরজ হয়। ১) মুসলিম হওয়া ২) আকল থাকা বা বিবেকবান হওয়া অর্থাৎ পাগল না হওয়া ৩) বালেগ বা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া ৪) আজাদ বা স্বাধীন হওয়া অর্থাৎ কারো গোলাম না হওয়া এবং ৫) দৈহিক ও আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান হওয়া। তবে মহিলাদের ক্ষেত্রে আরেকটি শর্ত যুক্ত হবে, সেটি হলো- সঙ্গে ‘মাহরাম’ (যেসব পুরুষের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত জায়েজ) থাকা।

ফরজ হজ আদায়ে গাফিলতি নয়
স্মরণ রাখতে হবে, জাকাত ফরজ না হয়েও কারো ওপর হজ ফরজ হতে পারে। কেননা হজ ও জাকাতের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য রয়েছে। যেমন, জাকাতের সম্পর্ক নির্ধারিত নিসাবের সঙ্গে। হজের সম্পর্ক মক্কায় আসা-যাওয়ার খরচের সঙ্গে।

সুতরাং স্থাবর সম্পত্তির কিছু অংশ বিক্রি করে কেউ যদি হজ আদায় করতে সক্ষম হয় এবং হজ থেকে ফিরে এসে বাকি সম্পত্তি দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে, তাহলে তার ওপর হজ ফরজ। (ইমদাদুল আহকাম: ২/১৫২; আহসানুল ফতোয়া: ৪/৫১৬)

একইভাবে ব্যবসায়ীর দোকানে যে পরিমাণ পণ্য আছে, তার কিছু অংশ বিক্রি করলে যদি হজ করা সম্ভব হয় এবং ফিরে এসে যদি বাকি পণ্য দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা যায়, তাহলে তার ওপরও হজ ফরজ। (ইমদাদুল আহকাম: ২/১৫৩)

মুসলিম সমাজে একটি ভুল ধারণা প্রচলিত আছে, সেটি হলো- আগে মাতা-পিতার হজ করাবে, পরে নিজের কথা চিন্তা করবে; এটি সঠিক চিন্তা নয়, বরং সামর্থ্য থাকলে তাঁদের নিয়ে একসঙ্গে হজ করবে। অন্যথায় আগে নিজের ফরজ আদায় করবে। (রহিমিয়া: ৮/২৮২)

আবার অনেকে মনে করেন, সন্তানের বিয়ে দেওয়ার পর হজ আদায় করতে হয়। এ কথাও ইসলাম সমর্থিত নয়। ইসলামের দৃষ্টিতে সন্তানের বিয়ে জরুরি ঠিক আছে, তাই বলে সন্তানের বিয়ের জন্য হজে বিলম্ব করা যাবে না। (রহিমিয়া: ৮/২৭৬)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সামর্থ্যবানদের হজের গুরুত্ব সম্পর্কে সঠিক উপলব্ধি দান করুন। আর্থিকভাবে অক্ষম হজপ্রত্যাশীদের সক্ষমতা দান করুন এবং মকবুল হজ নসিব করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর