রোববার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

হজপালনে ধাপে ধাপে যেসব কাজ করতে হয়

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ মে ২০২৩, ০৭:৪৬ পিএম

শেয়ার করুন:

হজপালনে ধাপে ধাপে যেসব কাজ করতে হয়

হজ ইসলামি শরিয়তের অন্যতম স্তম্ভ ও ফরজ ইবাদত। ইরশাদ হয়েছে, ‘প্রত্যেক সামর্থ্যবান মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ’ (সুরা আলে ইমরান: ৯৭)

হজে তিনটি ফরজ কাজ করতে হয়। মিকাত থেকে ইহরাম বাঁধা, আরাফা ময়দানে নির্দিষ্ট সময় অবস্থান করা এবং তাওয়াফে জিয়ারত। এছাড়াও হজের ৯টি ওয়াজিব হলো— ১) সাফা-মারওয়া সাত বার সায়ি করা ২) ইহরাম বাঁধার কাজটি মিকাত পার হওয়ার পূর্বেই সম্পন্ন করা ৩) আরাফায় অবস্থান সূর্যাস্ত পর্যন্ত দীর্ঘায়িত করা ৪) মুজদালিফায় রাতযাপন ৫) মুজদালিফার পর কমপক্ষে দুই রাত মিনায় যাপন করা ৬) কঙ্কর নিক্ষেপ করা ৭) হাদি (পশু) জবাই করা (তামাত্তু ও কেরান হাজিদের জন্য) ৮) চুল কাটা ৯) বিদায়ী তাওয়াফ।


বিজ্ঞাপন


হজের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত রয়েছে। যেমন, ইহরাম বাঁধার পূর্বে গোসল করা, শরীরে সুগন্ধি ব্যবহার করা ও দুই রাকাত নামজা পড়া, সাদা রঙের কাপড় দিয়ে পুরুষের জন্য ইহরাম বাধা, তাওয়াফে কুদুম, আরাফার রাতে মিনাতে রাতযাপন, মক্কায় থাকাকালীন বেশি বেশি তাওয়াফ, যথাযথ সময়ে ইজতিবা ও রমল করা, তালবিয়া পাঠ (প্রথম তালবিয়া ইহরাম বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য আবশ্যক) হাজরে আসওয়াদকে চুমু খাওয়া, দোয়া ও জিকির পড়া, সাফা-মারওয়া পাহাড়ে আরোহন করা ইত্যাদি।

উল্লেখিত কাজগুলোই করতে হয় একজন হাজিকে। হজের মূল আনুষ্ঠানিকতার সময় ৫ দিন তথা ৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত। এই পাঁচ দিন হাজিদের যেসব কাজ ধারাবাহিকভাবে সম্পন্ন করতে হয়, তা নিচে তুলে ধরা হলো—

আট জিলহজের আগের কাজ
১) মিকাত থেকে ইহরাম বাঁধবেন। (ইহরাম বাঁধার জন্য হাদিস দ্বারা নির্ধারিত কাবা শরিফের চারদিকের নির্দিষ্ট স্থানগুলোকে মিকাত বলা হয়)

২) কাবা ঘরে ওমরার তাওয়াফ করবেন।


বিজ্ঞাপন


৩) সাঈ করবেন।

৪) চুল কেটে হালাল হয়ে যাবেন।

আট জিলহজের (তারউইয়্যার দিনের) কাজ
১) নিজ বাসস্থান থেকে ইহরাম বেঁধে হজের নিয়ত করে সূর্যোদয়ের পর মিনায় রওনা হবেন, যেন জোহরের আগে মিনায় পৌঁছতে পারেন। সেখানে জোহর, আসর, মাগরিব, এশা ও ফজরের সালাত আদায় করবেন। এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এখানে আদায় করা মোস্তাহাব এবং ততক্ষণ এখানে অবস্থান করা সুন্নত।

নয় জিলহজের (আরাফার দিনের) কাজ
১) সূর্যোদয়ের পর আরাফাতের ময়দানে রওনা হবেন। (এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত তথায় অবস্থান করা হজের অন্যতম রোকন। সকালে মিনা থেকে রওনার সময় তাকবির বলবেন-‘আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওআল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর, ওয়া লিল্লাহিল হামদ’)

২) আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে হজের খুতবা শুনবেন এবং নিজ নিজ তাবুতে জোহরের প্রথম ওয়াক্তে জোহর ও আসর পড়বেন একত্রে পরপর দুই দুই রাকআত করে।

৩) সূর্যাস্তের পর মাগরিবের নামাজ না পড়েই মুজদালিফায় রওনা করবেন। মাগরিব-এশা সেখানে গিয়ে (এক আজানে আলাদা আলাদা ইকামতে একসঙ্গে ধারাবাহিকভাবে) পড়বেন।

৪) মুজদালিফায় রাত যাপন করে ফজর পড়বেন প্রথম ওয়াক্তে অন্ধকার থাকতেই।

৫) আকাশ ফরসা হওয়া পর্যন্ত কেবলামুখী হয়ে হাত তুলে দীর্ঘসময় দোয়া ও মোনাজাতে মশগুল থাকবেন।

৬) বড় জামরায় নিক্ষেপের জন্য ৭টি কঙ্কর এখান থেকে কুড়াতে পারেন।

দশ জিলহজের (ঈদের দিনের) কাজ
১) বড় জামরায় ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন। (তা জোহরের আগেই সম্পন্ন করবেন)

২) কঙ্কর নিক্ষেপের পরে মিনায় কোরবানি করবেন।

৩) চুল কাটাবেন। অতঃপর ইহরামের কাপড় বদলিয়ে সাধারণ পোষাক পরে ফেলবেন। (মাথা ন্যাড়া করে হজের ইহরাম থেকে হালাল হওয়ার মাধ্যমে সাধারণ কাজ করতে পারলেও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকতে হবে)

৪) তাওয়াফে ইফাদা (তাওয়াফে জিয়ারত) করবেন। এদিন না পারলে এটি ১১ বা ১২ তারিখেও করতে পারবেন এবং এরসঙ্গে সাঈও করবেন। (তাওয়াফে জিয়ারত বা ইফাদা হলো হজের মুল তাওয়াফ, যা বাদ পড়লে হজ সম্পন্ন হবে না। আর ১২ জিলহজ সূর্য ডোবার আগে তাওয়াফে জিয়ারত না করতে পারলে দম বা কোরবানি কাফফারা আদায় করতে হবে।)

এগার জিলহজের (আইয়ামে তাশরিক ১ম দিন) কাজ
১) দুপুরের পর সিরিয়াল ঠিক রেখে প্রথমে ছোট, মধ্যম ও এরপরে বড় জামরায় প্রত্যেকটিতে ৭টি করে কংকর নিক্ষেপ করবেন।

২) মিনায় রাত্রি যাপন করবেন।

বার জিলহজের (আইয়ামে তাশরিক ২য় দিন) কাজ
১) পূর্বের নিয়ম অনুযায়ী ৩টি জামরায় ৭+৭+৭=২১টি কংকর নিক্ষেপ করবেন। দুপুরের আগে কংকর নিক্ষেপ করবেন না।

২) সূর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করবেন। তা না পারলে দিবাগত রাতও মিনায় কাটাবেন।

তের জিলহজের (আইয়ামে তাশরিক ৩য় দিন) কাজ
১) যারা গত রাত মিনায় কাটিয়েছেন তারা আজ দুপুরের পর পূর্ব দিনের নিয়মেই ৭টি করে মোট ২১ টি কংকর মারবেন। অতঃপর মিনা ত্যাগ করবেন।

বিদায়ী তাওয়াফ
সর্বশেষ ফেরার আগে বিদায়ী তাওয়াফ করবেন।

উল্লেখ্য, প্রতি বছর ৭ জিলহজ হাজিদের উদ্দেশ্যে মসজিদে হারামে হজের নিয়মাবলী ও করণীয় সম্পর্কে বয়ান পেশ করা হয়। তাই এই বয়ান শোনা হাজিদের জন্য উপকারী। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হজের মূল পাঁচ দিন উল্লেখিত কাজগুলো যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। সকল হাজিকে হজে মাবরুর নসিব করুন। আমিন।

হজের ধারাবাহিক কার্যাবলী, হজে যেসব কাজ ধাপে ধাপে করা হয়, হজের ৫ দিনের আমল 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর