পবিত্র কাবার কারণে সুদূর প্রাচীনকাল থেকেই মক্কা অতি পরিচিত নগরী। কাবাঘরের সঙ্গে প্রথম নবী আদম (আ.) ছাড়াও ইবরাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.)-এর স্মৃতি জড়িয়ে আছে। আর মহানবী (স.)-এর আগমন মক্কা নগরীকে নিয়ে গেছে মর্যাদার শীর্ষে। ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে আরও জড়িয়ে রয়েছে নানা পাহাড় ও পর্বতের গুহা। নিচে নবী-রাসুলদের স্মৃতিময় কিছু পাহাড়-পর্বত নিয়ে আলোচনা করা হলো।
জাবালে নুর
ইসলামের ইতিহাসে নবীজির (স.) স্মৃতি বহনকারী একটি মর্যাদাপূর্ণ পাহাড়ের নাম জাবালে নুর। এই পাহাড়ের হেরা গুহায় পবিত্র কোরআন নাজিলের সূচনা হয়েছিল। সে হিসেবে জাবালে নুর একটি বরকতময় পাহাড় এবং এখানে আল্লাহ দোয়া কবুল করেন বলে মুসলমানের বিশ্বাস। বায়তুল্লাহ শরিফ থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত এ পাহাড়। এর মূল উচ্চতা ৫৬৫ মিটার।
বিজ্ঞাপন
সাফা ও মারওয়া
পবিত্র কাবার খুব কাছেই অবস্থিত সাফা ও মারওয়া পাহাড়। মুসলিম মিল্লাতের পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.), তাঁর স্ত্রী হাজেরা (আ.) এবং তাঁদের সন্তান ইসমাইল (আ.)-এর স্মৃতির স্মারক হিসেবে হজ ও ওমরা পালনকারীদের সাফা-মারওয়া পাহাড় সায়ি করা ওয়াজিব। সায়ি করার সময় আল্লাহ দোয়া কবুল করেন। কাবা থেকে সাফার দূরত্ব ৩৩০ ফুট এবং মারওয়ার দূরত্ব এক হাজার ১৫০ মিটার। সাফা থেকে মারওয়ার দূরত্ব হচ্ছে এক হাজার ৪৮০ মিটার। পাহাড় দুটি মসজিদুল হারামের অংশ। সাফা ও মারওয়ার সংশ্লিষ্ট ঘটনার আবহে জমজম কূপের সৃষ্টি হয়।
জাবালে রহমত
নবীজির ঐতিহাসিক বিদায় হজের ভাষণের স্থান এই জাবালে রহমত। এখানে দাঁড়িয়ে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে তিনি বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। আরাফার ময়দানের পূর্ব দিকে অবস্থিত জাবালে রহমত। হজের অন্যতম অংশ হিসেবে হাজিরা আরাফার ময়দানে অবস্থান করেন—ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে তা ফরজ। জাবালে রহমতও দোয়া কবুল হওয়া স্থানগুলোর অন্যতম।
বিজ্ঞাপন
জাবালে সাওর
পবিত্র মক্কা শরিফ থেকে তিন মাইল দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত ঐতিহাসিক সাওর পাহাড়। এ পাহাড়ের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৭৪৮ মিটার। হিজরতের সময় মহানবী (স.) ও আবু বকর (রা.) এই পাহাড়ের একটি গুহায় তিন দিন আত্মগোপন করে ছিলেন। সাওর পর্বতের গুহায় অবস্থানের কারণে আবু বকর (রা.)-এর মর্যাদায় কোরআনের আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। মক্কায় আগমনকারী মুসলিমদের কাছে এই পাহাড়ও বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। জাবালে সাওরের পাদদেশ বা চূড়ায় দোয়া কবুল করা হয়।
জাবালে আবি কুবাইস
মুসলিম ঐতিহাসিকরা জাবালে আবি কুবাইসকে পৃথিবীতে সৃষ্ট প্রথম পাহাড়গুলোর একটি মনে করেন। বায়তুল্লাহ শরিফের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে এর অবস্থান। জাবালে আবি কুবাইস কাবাঘরের সবচেয়ে নিকটবর্তী পাহাড়। সমুদ্রস্তর থেকে এই পাহাড়ের উচ্চতা অন্তত ৪২০ মিটার। কোনো কোনো ঐতিহাসিকের দাবি, নুহ (আ.)-এর বন্যার সময় হজরে আসওয়াদ এই পাহাড়ের ওপর রাখা ছিল। জাবালে আবি কুবাইস মহানবী (স.)-এর একটি মুজেজার সাক্ষী। মহানবী (স.)-এর ইশারায় চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হলে দুই খণ্ডের মধ্যে হেরা পর্বত দৃশ্যমান হয় এবং দুই খণ্ডের এক খণ্ড আবি কুবাইস পাহাড় বরাবর ছিল।
ওয়াদিয়ে ইবরাহিম
পবিত্র মক্কার অন্যতম প্রধান উপত্যকা ওয়াদিয়ে ইবরাহিম। পূর্ব দিকে শারায়ে থেকে দক্ষিণে কাকিয়া হয়ে উপত্যকাটি হারাম শরিফের সঙ্গে মিলেছে। পবিত্র কোরআনে ইবরাহিম (আ.)-এর মুখে এই উপত্যকার দিকে ইঙ্গিত করে আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে, ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমার বংশধরদের কতককে বসবাস করালাম অনুর্বর উপত্যকায় তোমার পবিত্র ঘরের কাছে।’ (সুরা ইবরাহিম: ৩৭)
ওয়াদিয়ে জাহির
ঐতিহাসিকভাবে প্রসিদ্ধ একটি উপত্যকা ওয়াদিয়ে জাহির। পবিত্র কাবাঘরের ছয় কিলোমিটার উত্তরে এটি অবস্থিত। অসংখ্যবার মহানবী (স.) ওয়াদিয়ে জাহির অতিক্রম করেছেন। এই উপত্যকার আরো কয়েকটি নাম রয়েছে; যেমন—ওয়াদিয়ে ফাখ, তরিকুল আশার ও উম্মুল জুদ ইত্যাদি।
ওয়াদিয়ে মুহাসসার
মুজদালিফা ও মিনার সংযোগ উপত্যকার নাম ওয়াদিয়ে মুহাসসার। নবুওয়তপূর্ব জাহেলি যুগে পবিত্র কাবা শরিফ ধ্বংস করতে এসে বাদশাহ আবরাহা ও তার হস্তিবাহিনী এখানেই ধ্বংস হয়। উপত্যকাটি দুই কিলোমিটার দীর্ঘ।
আল্লাহ তাআলা সকল নবীপ্রেমিককে মক্কা-মদিনা জিয়ারত এবং তাঁরই স্মৃতিবিজড়িত পাহাড়-পর্বতগুলো স্বচক্ষে দেখার তাওফিক দান করুন। আমিন।