হজ ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ ও ফরজ ইবাদত। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘প্রত্যেক সামর্থ্যবান মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ’ (সুরা আলে ইমরান: ৯৭)। স্বাধীন, বোধশক্তিসম্পন্ন সামর্থ্যবান বান্দার ওপর আল্লাহ তাআলার দেওয়া এই ফরজ দায়িত্ব জীবনে একবারই আদায় করতে হয়।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন রাসুলুল্লাহ (স.) আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন, ‘হে লোকসকল! আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর হজ ফরজ করেছেন। সুতরাং তোমরা হজ করো। এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! প্রতি বছর কি হজ করতে হবে? তিনি চুপ রইলেন এবং লোকটি এভাবে তিনবার জিজ্ঞেস করল। অতপর রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, আমি যদি হ্যাঁ বলতাম, তাহলে তা (প্রতি বছর) ফরজ হয়ে যেতো, কিন্তু তোমাদের পক্ষে তা করা সম্ভব হতো না।’ (সহিহ মুসলিম: ১৩৩৭ (৪১২); মুসনাদে আহমদ: ১০৬০৭; সহিহ ইবনে হিববান: ৩৭০৪; নাসায়ি: ৫/১১০)
বিজ্ঞাপন
হজ আর্থিক ও দৈহিক ইবাদত। তাই যাদের ওপর হজ ফরজ, যত দ্রুত সম্ভব হজ আদায় করা উত্তম। যেখানে মানুষের জীবন-মরণের এক সেকেন্ডের নিশ্চয়তা নেই, সেখানে এক বছর অনেক দীর্ঘ সময়। যে বছর হজ ফরজ হয়, ওই বছরই তা আদায় করা উচিত। অযথা বিলম্ব করা গুনাহ। হজ একবার ফরজ হলে তা আর কখনো মাফ হয় না। (আহসানুল ফতোয়া: ৪/৫২৮)
কেননা রাসুল (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি হজ করার ইচ্ছে করেছে, সে যেন তাড়াতাড়ি তা করে নেয়’ (সুনানে আবু দাউদ: ১৭৩২)। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি হজের ইচ্ছা করে সে যেন তা দ্রুত আদায় করে নেয়। কেননা মানুষ কখনো অসুস্থ হয়ে পড়ে, কখনো সম্পদ খরচ হয়ে যায়, কখনো সমস্যার সম্মুখীন হয়’ (ইবনে মাজাহ: ২০৭)। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য হাদিসে রাসুল (স.) বলেছেন, ‘ফরজ হজ আদায়ে তোমরা বিলম্ব করো না। কারণ তোমাদের কারো জানা নেই তোমাদের পরবর্তী জীবনে কী ঘটবে।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৮৬৭; সুনানে কুবরা বায়হাকি: ৪/৩৪০)
অনেকে মনে করেন, সন্তানের বিয়ে দেওয়ার পর হজ আদায় করতে হয়। অথচ এ কথা ইসলাম সমর্থিত নয়। ইসলামের দৃষ্টিতে সন্তানের বিয়ে জরুরি ঠিক আছে, তাই বলে সন্তানের বিয়ের জন্য হজে বিলম্ব করা যাবে না। (রহিমিয়া: ৮/২৭৬)
হজ জীবনে একবার ফরজ বলে যারা এত বড় ফরজিয়াত আদায় করতে অযথা বিলম্ব করে, তারা সারা জীবনের গুনাহ মাফের অবিশ্বাস্য সুযোগ থেকে, এমনকি জান্নাত থেকেও বঞ্চিত হতে পারেন।
কেননা হাদিসে রাসুল (স.) বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ করেছে, যার মধ্যে সে অশ্লীল কথা বলেনি বা অশ্লীল কার্য করেনি, সে হজ থেকে ফিরবে সেদিনের মতো (নিষ্পাপ অবস্থায়) যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিলেন’। (সহিহ বুখারি: ১৫২১)। অর্থাৎ সে কবিরা-সগিরা, প্রকাশ্য-গোপনীয় সব গুনাহ থেকে ওইরূপ মুক্ত হয়ে ফিরে আসে, যেরূপ একজন শিশু গুনাহ মুক্ত হয়ে জন্মগ্রহণ করে। (ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী: ৩/৩৮২)
বিজ্ঞাপন
আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, العمرة إلى العمرة كفارة لما بينهما، والحج المبرور ليس له جزاء إلا الجنة এক ওমরা থেকে আরেক ওমরা পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহর ক্ষতিপূরণ হয়ে যায়। আর হজে মাবরূরের প্রতিদান তো জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়। (সহিহ বুখারি: ১৭৭৩; সহিহ মুসলিম: ১৩৪৯; মুসনাদে আহমদ: ৭৩৫৪; সহিহ ইবনে হিববান: ৩৬৯৫)
উপরন্তু সামর্থ্য থাকার পরও হজ না করার পরিণাম ভয়াবহ। ফরজ হজ ত্যাগ করলে ইহুদি-নাসারার মতো মৃত্যু হবে বলে হাদিসে সতর্ক করা হয়েছে। ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, من أطاق الحج فلم يحج فسواء عليه مات يهوديا أو نصرانيا
যে ব্যক্তি হজ করার সামর্থ্য রাখে, তবুও হজ করে না, সে ইহুদি হয়ে মৃত্যুবরণ করল কি খ্রিস্টান হয়ে, তার কোনো পরোয়া আল্লাহর নেই। (ইবনে কাসির: ১/৫৭৮)
হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ হজ না করার পরিণতি সম্পর্কে বলেছেন, ‘যে বান্দাকে আমি দৈহিক সুস্থতা দিয়েছি এবং আর্থিক প্রাচুর্য দান করেছি, অতঃপর (গড়িমসি করে) তার পাঁচ বছর অতিবাহিত হয়ে যায় অথচ আমার দিকে (হজব্রত পালন করতে) আগমন করে না, সে অবশ্যই বঞ্চিত।’ (ইবনে হিব্বান: ৩৭০৩)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সামর্থ্যবানদের হজের গুরুত্ব সম্পর্কে সঠিক উপলব্ধি দান করুন। সবাইকে সঠিকভাবে হজ আদায়ের তাওফিক দান করুন। আমিন।