মানুষের প্রয়োজনীয় অন্যান্য খরচের মতো হজে যাওয়ার খরচও সাধারণত প্রতিবছর বাড়ে। এবছরও হজের খরচ বেড়েছে। তবে তা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। এবছর সরকারিভাবে হজ প্যাকেজের সর্বনিম্ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা। যা গতবারের তুলনায় দেড় লাখ থেকে দুই লাখ ২১ হাজার পর্যন্ত বেশি।
গত বছর সরকারিভাবে হজে যেতে প্যাকেজ ধরা হয়েছিল ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। সেবছর কোরবানি ছাড়া প্যাকেজের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪ লাখ ৬২ হাজার ১৪৯ টাকা। এর আগে ২০২০ সালে সর্বনিম্ন প্যাকেজটির মূল্য ধরা হয়েছিল জনপ্রতি ৩ লাখ ৬১ হাজার ৮০০ টাকা।
বিজ্ঞাপন
অন্যদিকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনে এ বছর সর্বনিম্ন খরচ হবে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। এর বাইরে প্রত্যেক হাজিকে কোরবানি বাবদ নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিতে হবে। গতবছর বেসরকারিভাবে এজেন্সিগুলোর 'সাধারণ প্যাকেজ'র মাধ্যমে হজ পালনে খরচ হয়েছিল ৫ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা। এবার তা প্রায় দেড় লাখ টাকা বৃদ্ধি পেলো।
বাংলাদেশ থেকে এ বছর হজে যেতে পারবেন এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। এদের মধ্যে সরকারিভাবে যেতে পারবেন ১৫ হাজার হজযাত্রী, বাকিদের যেতে হবে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়। নিচে বিভিন্ন দেশের হজের খরচ তুলে ধরা হলো।
বাংলাদেশ
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এবার সরকারিভাবে হজ পালনে খরচ হবে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা। অন্যদিকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনে এ বছর সর্বনিম্ন খরচ হবে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। এর বাইরে প্রত্যেক হাজিকে কোরবানি বাবদ নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিতে হবে।
ভারত
২০২০ সালের নভেম্বরে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গে ২০১৯ সালে হজে যেতে জনপ্রতি খরচ হয়েছিল প্রায় ৩ লাখ টাকা। কিন্তু পরের বছর এই খরচ বাড়িয়ে ৪ লাখ ২৩ হাজার ৫৭১ টাকা নির্ধারণ করেছিল রাজ্যের হজ কমিটি। তবে এই বছর হজের প্যাকেজ ঘোষণা করা হলেও এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত খরচের তথ্য জানানো হয়নি। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ভারতে হজে ভর্তুকি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
পাকিস্তান
চলতি বছর হজের খরচ এখনো চূড়ান্ত করেনি দেশটির সরকার। তবে পাকিস্তান ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মুহাম্মদ উমর বাট কিছুদিন আগে জানিয়েছেন, এবার হজে যেতে জনপ্রতি ৩ লাখ ১১ হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা খরচ হতে পারে।
ইন্দোনেশিয়া
জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়া। অন্যান্য দেশের তুলনায় হজযাত্রায় দেশটির মুসলমানদের অনেক কম টাকা খরচ করতে হয়। সেখানে হজে যেতে হলে জনপ্রতি ২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৫৩ টাকা খরচ হয়। হজযাত্রায় আরও টাকা লাগলে সেটি সরকারের ‘হজ ফান্ড ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি’ থেকে ভর্তুকি দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে ইন্দোনেশিয়ার তৎকালীন ধর্মমন্ত্রী লুকমান হাকিম দাবি করেছিলেন, আসিয়ানভুক্ত দেশের মধ্যে ইন্দোনেশিয়া থেকে হজে যেতে একজন মুসল্লিকে সবচেয়ে কম টাকা খরচ করতে হয়।
মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়া থেকে হজে যেতে সর্বনিম্ন ২ লাখ ১৮ হাজার ৭৫৪ টাকা ও সর্বোচ্চ ২ লাখ ৫৮ হাজার ৬০০ টাকা দিতে হয়। গত বছরের ২২ এপ্রিল দেশটির সরকার হজে যাওয়ার এই খরচ ঘোষণা করে। এতে বলা হয়েছে, বি-৪০ গ্রুপের (যে পরিবারের মাসিক আয় ৯৬ হাজার টাকার কম) মুসল্লিদের জন্য ২ লাখ ১৮ হাজার ৭৫৪ টাকা। আর যেসব পরিবারের মাসিক আয় এর চেয়ে বেশি, তাদের খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৬০০ টাকা। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ধর্ম বিভাগের মন্ত্রী ইদ্রিস আহমাদ সম্প্রতি জানিয়েছেন, প্রতিবছর হজে ভর্তুকি হিসেবে সরকার ৬০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়।
বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয় নির্ধারিত হজের খরচ
ধর্ম মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালের হজের খরচের যে হিসাব দিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে:
বিমান ভাড়া ১৯৭৭৯৭ টাকা,
মক্কা ও মদিনায় বাড়ি ভাড়া ২০৪৪৪৪.৯১ টাকা,
জেদ্দা, মক্কা, মদিনা-মুযদালিফা,আল-মাশায়েরের পরিবহন ব্যয় ৩৫১৬২.৪৩ টাকা,
বাস সার্ভিস ২৮৩৯ টাকা,
জমজম পানি ৪২৫.৮৫ টাকা,
তাঁবু, ম্যাট্রেস, বিছানা, চাদর, বালিশ কম্বল, খাবার সরবরাহে মোয়াল্লেম সেবার সার্ভিস চার্জ ১৬০৬৩০.৬২ টাকা,
মক্কায় লাগেজ পরিবহন ৫৮৭.৬৭ টাকা,
মক্কা-মদিনা-আরাফাত-মুজদালিফা-মিনা-মক্কা বাস ভাড়া ১৯৩৩৩.৫৯ টাকা,
দেশে ফেরার সময় মক্কা-মদিনা থেকে লাগেজ পরিবহন ৮৫১.৬৭ টাকা
ভিসা ফি ৮৫১৭ টাকা
স্বাস্থ্য বীমা বাবদ সৌদি সরকারকে দেয়া ফি ৯৪৬.৮১ টাকা
আইটি কার্ড, লাগেজ ট্যাগিং, আইটি সার্ভিস ইত্যাদি ৮০০ টাকা
হজযাত্রীদের কল্যাণ তহবিল ২০০ টাকা
প্রশিক্ষণ ফি ৩০০ টাকা
খাওয়া খরচ ৩৫০০০ টাকা
হজ গাইড ১৫১৭৮.১০ টাকা
(তথ্যসূত্র: ডয়চে ভেলে, বিবিসি)