বৃহস্পতিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

চাঁদরাতে যেসব আমল মিস করবেন না

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ মার্চ ২০২৫, ০৬:০১ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

ইসলামে যে রাতগুলো ফজিলতে পরিপূর্ণ, সেসবের অন্যতম ঈদের রাত। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার চাঁদ দেখা গেলেই শুরু হয়ে যায় ঈদের রাত। সেই রাতকেই আমরা চাঁদরাত বলি। এই রাতে সাধারণত আমরা অযথা আড্ডা, ঘোরাঘুরি, বিনোদন কিংবা ঘুমিয়ে সময় কাটিয়ে দিই। অথচ ইসলামে এই রাতে ইবাদতের মর্যাদা অসামান্য। এই রাতকে বলা হয়ে থাকে পুরস্কারের রাত। হাদিসে এসেছে, চাঁদরাতের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। 

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার রাত, রজব মাসের প্রথম রাত, অর্ধ শাবানের রাত এবং দুই ঈদের রাত—এই পাঁচ রাতে কোনো দোয়া করে; তার কোনো আবেদনই ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ৭৯২৭)


বিজ্ঞাপন


মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, যে ব্যক্তি পাঁচটি রাত (ইবাদতের মাধ্যমে) জাগ্রত থাকবে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। যিলহজ মাসের ৮ ও ৯ তারিখের রাত, ঈদুল আজহার রাত, ইদুল ফিতরের রাত এবং ১৫ শাবানের রাত। (আত তারগিব ওয়াত তারহিব লিল মুনজেরি: ২/৯৮, হাদিস: ১৬৫৬)

আরও পড়ুন
ঈদের নামাজের নিয়ম
ঈদের নামাজ আংশিক ছুটে গেলে করণীয়

ঈদের রাতে ইবাদতকারীর আরেকটি বিশেষ ফজিলত হলো- তার অন্তর কেয়ামতের দিন মরবে না। হজরত আবু উমামা বাহেলি (রা.) বর্ণনা করেন, নবী (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাতে আল্লাহর কাছে সওয়াবপ্রাপ্তির নিয়তে ইবাদত করবে, তার হৃদয় সেদিনও জীবিত থাকবে, যেদিন সকল হৃদয়ের মৃত্যু ঘটবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৭৮২)

হজরত উবাদা ইবনে সামেত (রা.) বর্ণিত অন্য হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার রাতকে (ইবাদতের মাধ্যমে) জীবিত রাখবে তার অন্তর ওই দিন মরবে না, যেদিন অন্যদের অন্তর মরে যাবে। (আল মুজামুল আওসাত ১/৫৭, হাদিস: ১৫৯)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন
ঈদের দিন যে নামাজ পড়া নিষেধ
ঈদের দিন কোলাকুলির বিধান

চাঁদরাতে যে আমল করবেন
১. চাঁদরাতের প্রথম সুন্নত ও ফরজে কিফায়া আমল হলো সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে চাঁদ দেখা। চাঁদ দেখলে বা চাঁদ দেখার সংবাদ নিশ্চিত হলে দোয়া পড়া সুন্নত। (তিরমিজি: ৩৪৫১)
২. রমজানের ঈদের রাতে পুরুষদের মাগরিব, এশা ও ফজর নামাজ মসজিদে জামাতের সঙ্গে পড়ার চেষ্টা করবেন। নারীরাও ঘরে ফরজ নামাজ আদায় করবেন। 
৩. রাতের ইবাদতের জন্য বিশেষভাবে পবিত্রতা অর্জন করা এবং ইবাদতের উপযোগী ভালো কাপড় পরা সুন্দর একটি আমল। 
৪. মাগরিবের পর আউওয়াবিন নামাজ পড়া।
৫. শেষ রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার চেষ্টা করা। 
৬. রাত জেগে অন্যান্য নফল ইবাদত যেমন দুই রাকাত করে যত সম্ভব নফল নামাজ, তাহ্যিয়াতুল অজু, তওবার নামাজ, সালাতুল হাজাত, সালাতুত তসবিহ, সালাতুস শোকর ইত্যাদি পড়া। 
৭. কোরআন তেলাওয়াত করা। সুরা ইয়াসিন, সুরা রহমান, সুরা ওয়াকিয়া, সুরা মুলক, সুরা মুজাম্মিল, সুরা মুদ্দাচ্ছির, সুরা ফাতহ, সুরা নাবা, তিন কুল, আয়াতুল কুরসি, সুরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো ইত্যাদি তেলাওয়াত করা যায়। 
৮. দোয়া-জিকির ও দরুদ পাঠ। মাসনুন যেকোনো দোয়া এবং বেশি বেশি দরুদ শরিফ পাঠ করা যেতে পারে। এছাড়াও হাদিসে বর্ণিত যেকোনো জিকির বা তাসবিহ, তাহলিল ও তাকবির পাঠ করা সবসময়ের জন্যই উত্তম আমল।
৯. তাওবা- ইস্তিগফার করা। আল্লাহ তাআলা তাওবা-ইস্তেগফারকারীদের অনেক ভালোবাসেন।

বরকতময় ঈদের রাত বা চাঁদরাতে অযথা কথা-কাজে লিপ্ত হওয়া, বাজারে-মার্কেটে ঘোরাঘুরি করা উচিত নয়। আসুন আমরা নিজেদের সবসময় সর্বক্ষেত্রে দ্বীনের পথে সম্পৃক্ত রাখি। বিশেষ করে ঈদের রাতে নিজেদের ইবাদত থেকে গাফেল না করি। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন