রোববার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

তাকবিরে তাশরিক ২৮ জুন ফজর থেকে পড়তে হবে

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৭ জুন ২০২৩, ১২:৫৩ পিএম

শেয়ার করুন:

তাকবিরে তাশরিক ২৮ জুন ফজর থেকে পড়তে হবে

এখন চলছে ১৪৪৪ হিজরির জিলহজ মাস। আরবি এই মাসের ৯ তারিখ ফজর থেকে বিভিন্ন দেশের মুসলমানরা (নিজ দেশের হিসাব অনুযায়ী) তাকবিরে তাশরিক পড়া শুরু করবেন। আমাদের দেশে তাকবিরে তাশরিক পড়া শুরু হবে আগামী ২৮ জুন বুধবার থেকে। ২ জুলাই রোববার আছর নামাজ পর্যন্ত এই তাকবির পড়তে হবে। মূলত আরবি জিলহজ মাসের ৯ তারিখ ফজর নামাজের পর থেকে ১৩ তারিখ আছর পর্যন্ত সময়কে তাশরিকের দিন বলা হয়। এই সময়ে প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর অন্তত একবার ‘আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর ওয়া লিল্লাহিল হামদ’ এই তাকবির পড়া ওয়াজিব। এটিকে তাকবিরে তাশরিক বলা হয়। (হেদায়া: ১/২৭৫)

ফরজ নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়া হোক বা একাকী, ওয়াক্তের মধ্যে পড়া হোক বা কাজা, নামাজি ব্যক্তি মুকিম হোক বা মুসাফির, শহরের বাসিন্দা হোক বা গ্রামের সবার ওপর ফরজ নামাজের পর একবার তাকবিরে তাশরিক বলা ওয়াজিব। (দুররে মুখতার: ২/১৮০) তাকবিরে তাশরিক ২০২৩


বিজ্ঞাপন


তাশরিকের দিনগুলোতে প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর পুরুষদের ওপর উচ্চৈঃস্বরে একবার তাকবিরে তাশরিক বলা ওয়াজিব। আর নারীরা নিচু স্বরে পড়বে,  যাতে নিজে শোনে। (শামি: ২/১৭৮)

ফরজ নামাজের পর তাকবির বলতে ভুলে গেলে, স্মরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকবির পড়ে নেবে। তবে হ্যাঁ, নামাজের বিপরীত কোনো কাজে লিপ্ত হয়ে গেলে, যেমন, কথা বলা, নামাজের স্থান থেকে উঠে পড়া ইত্যাদি হলে তাকবির বলতে হবে না, বরং ওয়াজিব ছুটে যাওয়ার কারণে আল্লাহর কাছে তওবা করবে। (শামি: ৬/১৭৯)

তাকবিরে তাশরিক
ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻛﺒﺮ، ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ، ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ ﻭﻟﻠﻪ ﺍﻟﺤﻤﺪ উচ্চারণ: ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ’ অর্থ: আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই। আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

তাকবিরে তাশরিকের পটভূমি
বুখারি শরিফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি (রহ.) বলেন, যখন হজরত ইবরাহিম (আ.) স্বীয় পুত্র ইসমাঈল (আ.)-কে জবাইয়ের উদ্দেশ্যে গলায় ছুরি রাখলেন, আল্লাহর নির্দেশে হজরত জিবরাঈল (আ.) একটি দুম্বা নিয়ে দুনিয়ায় আগমন করছিলেন। কিন্তু জিবরাঈল (আ.)-এর আশঙ্কা ছিল, তিনি দুনিয়াতে পৌঁছার আগেই ইবরাহিম (আ.) জবাইপর্ব সমাপ্ত করে বসবেন। ফলে তিনি আসমান থেকে উঁচু আওয়াজে বলে উঠলেন- ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার।’


বিজ্ঞাপন


ইবরাহিম (আ.) আওয়াজ শুনে আসমানের দিকে নজর ফেরাতেই দেখতে পেলেন জিবরাঈল (আ.) একটি দুম্বা নিয়ে আগমন করছেন। ফলে তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলে উঠলেন- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর।’ পিতার কণ্ঠে এই কালিমা শুনতেই ইসমাঈল (আ.) উচ্চারণ করলেন- ‘আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’ একজন ফেরেশতা আর দুজন প্রিয়নবীর এ বাক্যমালা আল্লাহর খুব পছন্দ হয়। তাই কেয়ামত পর্যন্ত এই বাক্যমালা আইয়ামে তাশরিকে প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর পড়াকে ওয়াজিব করে দিয়েছেন। (ফতোয়ায়ে শামি: ২/১৭৮, ইনায়া শরহুল হিদায়া: ১/৪৬৪)

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যেন তারা নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে।’ (সুরা হজ: ২৮) 

বিশিষ্ট সাহাবি ও মুফাসসির ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, এখানে নির্দিষ্ট দিন বলতে ‘আইয়ামে তাশরিক’ ও ‘আল্লাহর স্মরণ’ বলতে তাকবিরে তাশরিক বোঝানো হয়েছে। (বুখারি, অধ্যায় দুই ঈদ) ইবনে কাসিরের বর্ণনা অনুযায়ী, এখানে নির্দিষ্ট দিনসমূহ দ্বারা আইয়ামে তাশরিক উদ্দেশ্য এবং জিকির দ্বারা তাকবিরে তাশরিক উদ্দেশ্য।

তাকবিরে তাশরিকের ফজিলত
রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, এই দিনগুলোতে তাকবিরে তাশরিকের আমলের চেয়ে অন্য কোনো দিনের আমল উত্তম নয়। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, জিহাদও কি (উত্তম) নয়? নবী করিম (স.) বলেন, ‘জিহাদও নয়। তবে সে ব্যক্তির কথা ভিন্ন, যে নিজের জান ও মালের ঝুঁকি নিয়ে জিহাদে যায় এবং কিছুই নিয়ে ফিরে আসে না।’ (সহিহ বুখারি: ৯৬৯)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাকবিরে তাশরিকের গুরুত্ব উপলব্ধি করার এবং নির্দিষ্ট সময়ে যথানিয়মে তাকবিরটি পড়ার তাওফিক দান করুন। ৯ জিলহজ ফজর থেকে ২৩ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর তাকবিরে তাশরিক পড়ার মাধ্যমে আল্লাহর বড়ত্ব, একত্ববাদের ঘোষণা ও প্রশংসাসহ যথাযথ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করার তাওফিক দান করুন। আমিন। তাকবিরে তাশরিক ঈদুল ফিতর, আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ, তাশরিক শব্দের অর্থ কি, তাকবিরে তাশরিকের ফজিলত, ওয়ালিল্লাহিল হামদ এর অর্থ, তাকবীরে তাশরিক পড়ার নিয়ম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর