রোববার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

হজের বিশেষ স্থান ও পরিভাষা পরিচিতি

আল ফাতাহ মামুন 
প্রকাশিত: ১৬ জুন ২০২৩, ০৮:২০ এএম

শেয়ার করুন:

হজের বিশেষ স্থান ও পরিভাষা পরিচিতি

হজ ইসলামের অন্যতম রোকন ও ফরজ বিধান। প্রত্যেক সামর্থ্যবান মানুষের ওপর জীবনে একবার হজ করা ফরজ। হজের হুকুম-আহকাম ও নবীজির স্মৃতিধন্য পবিত্র মক্কা-মদিনার অলি-গলি মুসলমানদের জন্য স্বপ্নের মতো। তাই প্রত্যেক হজযাত্রী হজে যাওয়ার আগে থেকেই পবিত্র কাবা ও মসজিদে নববির মর্যাদাপূর্ণ স্থানগুলো এবং হজ সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক কার্যাবলীর সঙ্গে পরিচিত। এখানে হজের গুরুত্বপূর্ণ আমল ও পবিত্র স্থানগুলোর পরিভাষা-পরিচিত তুলো ধরা হলো।

ইহরাম: ইহরাম অর্থ কোনো বিষয়কে হারাম বা নিষিদ্ধ করা। বিশ্ব-সংসারের সব বন্ধন মুক্ত হয়ে, সব অন্যায় থেকে বিরত হয়ে এক আল্লাহর ধ্যান ছাড়া সব কিছু বিসর্জন দেওয়ার সংকল্প করা হলো ইহরাম। সাধারণ পরিধেয় পোশাকের পরিবর্তে সাদা সেলাইবিহীন দুটি থানকাপড়ের একটি পরা ও অন্যটি কাঁধের ওপর ফেলে শরীরের ঊর্ধ্বাংশ ঢেকে নেওয়াকে ইহরাম বলা হয়। ইহরাম পরেই দুই রাকাত নামাজ আদায় করে হজের সংকল্প অর্থাৎ নিয়ত করতে হয়।


বিজ্ঞাপন


হারাম শরিফ: পবিত্র কাবা ঘরের চারপাশের বিশাল মসজিদকে বলা হয় হারাম বা হেরেম শরিফ।

তালবিয়াহ: তালবিয়াহ হলো বিশেষ কিছু আরবি শব্দের সমাহার। যেমন_'লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি'মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাকা লাব্বাইক।' এই শব্দসমষ্টিকে সব সময় একনিষ্ঠ হয়ে পাঠ করতে হয়। এই শব্দসমষ্টি পাঠ করাকেই তালবিয়াহ পাঠ বলে। ইহরাম শুরু করেই তালবিয়াহ পাঠ শুরু করতে হয়। তালবিয়াহ দ্বারা একদিকে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হওয়ার প্রতিজ্ঞা ঘোষণা করা এবং অন্যদিকে এই উপস্থিতির দ্বারা বিশ্বপ্রভুর অনুগ্রহ ভিক্ষার প্রার্থনা করা হয়। তালবিয়াহ পুরুষরা উচ্চ আওয়াজে এবং মহিলারা নিম্ন আওয়াজে পড়বে।

RR2

তাওয়াফ: পবিত্র কোরআনে বায়তুল্লাহকে তাওয়াফ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাওয়াফ অর্থ প্রদক্ষিণ করা। কাবা ঘরের হাজরুল আসওয়াদের কোণ থেকে সর্বদা বাঁ হাত কাবাঘরের দিকে রেখে এই তাওয়াফ করতে হয়। যেখান থেকে শুরু সেখান পর্যন্ত এলে এক চক্কর হয়। আরবিতে প্রতি চক্করকে 'সাওত' বলে। একটি তাওয়াফ সম্পন্ন হয় সাত চক্কর বা সাওত প্রদক্ষিণ করলে। তাওয়াফ শেষে দুই রাকাত সালাত আদায় করতে হয়।


বিজ্ঞাপন


তাওয়াফে কুদুম: মক্কা শরিফ পৌঁছেই যে তাওয়াফ করা হয়, তাকে তাওয়াফে কুদুম বলে।

তাওয়াফে জিয়ারত: ১০ জিলহজ মিনায় কোরবানি দিয়ে বা ১১ অথবা ১২ তারিখে মিনা থেকে মক্কা শরিফে এসে যে তাওয়াফ করতে হয়, তাকে তাওয়াফে জিয়ারত বলে। এটি হজের ফরজ রোকন। একে তাওয়াফাল হজ বা হজের তাওয়াফও বলা হয়।

তাওয়াফে বিদা: হজের সব কাজ শেষ করে দেশে ফেরার বা মক্কা শরিফ ত্যাগ করার আগে যে তাওয়াফ করতে হয়, তাকে তাওয়াফে বিদা বা বিদায়ী তওয়াফ বলে।

সায়ি: সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে সাতবার দ্রুতপদে অতিক্রম করাকে সায়ি বলে। সায়ি অর্থ হাঁটা ও দৌড়ানোর মাঝামাঝি অবস্থায় দ্রুতপদে হেঁটে চলা। সাফা পাহাড় থেকে সায়ি শুরু করতে হয়। সাফা থেকে শুরু করে মারওয়া পৌঁছলে একবার সায়ি গণ্য হবে আবার মারওয়া থেকে সাফায় এলে আরেকবার গণ্য হবে। এভাবে মারওয়ায় গিয়ে সপ্তম সায়ি পূর্ণ হবে। যাঁরা নিজেরা দ্রুতপদে যেতে পারবেন না বা হাঁটতে পারবেন না, তাঁদের জন্য ওখানেই হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা আছে। এতে বসে সায়ি করতে পারবেন। এর জন্য টাকা দিয়ে হুইল চেয়ার ভাড়া করতে হবে।

রমল: রমল শব্দের অর্থ হলো হাঁটা ও দৌড়ানের মাঝামাঝি অবস্থায় বীরদর্পে চলা। যেসব তাওয়াফের পর সায়ি করতে হয়, সেসব তাওয়াফের প্রথম চক্করে বীর বিক্রমে কাঁধ হেলিয়ে সজোরে ঘন ঘন পা ফেলে দ্রুতপদে চলাকে 'রমল' বলে।

মাকামে ইব্রাহীম: কাবাঘরের পূর্ব দিকে হজরত ইব্রাহীম (আ.)-এর পদচিহ্ন সংবলিত একটি পাথর কাচের বেড়ির মধ্যে রাখা আছে। এই পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে হজরত ইব্রাহীম (আ.) কাবাঘর নির্মাণ করেছিলেন। এই রক্ষিত পাথরের আশপাশই মাকামে ইব্রাহীম নামে পরিচিত।

হাতিম: কাবা শরিফসংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম দিকে অর্ধবৃত্তাকার দেয়ালঘেরা জায়গাকে 'হাতিম' বলে। এটি দোয়া কবুলের অন্যতম একটি স্থান।

মিজাবে রহমত: মিজাব আরবি শব্দ। মিজাব অর্থ হলো নল। হাতিমের মধ্যে একটি পাথরের ওপর পবিত্র কাবাঘরের ছাদের পানি পড়ার জন্য যে স্বর্ণের নল আছে, সেই নলটিকেই মিজাবে রহমত বলে। কখনো বৃষ্টি হলে এই বরকতময় পানি সংগ্রহের জন্য ভিড় জমে যায়।

মুলতাজিম: পবিত্র কাবাঘরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে একখণ্ড বেহেশতি পাথর লাগানো আছে। এখান থেকে কাবাঘরের দরজা পর্যন্ত দেয়ালের অংশটিকে মুলতাজিম বলে। এটি দোয়া কবুলের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান।

বাবুস সালাম: মসজিদুল হারামের পূর্ব দিকের যে দরজা দিয়ে প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বেশির ভাগ সময়ই কাবা শরিফে প্রবেশ করতেন, তাকেই বাবুস সালাম বলা হয়।

বাবুল বিদা: এটি মসজিদুল হারামের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের দরজা। বহিরাগত হাজিরা সাধারণত কাবাঘরকে সামনে রেখে এই দরজা দিয়ে বের হয়ে আসেন।

রোকনে ইয়েমেনি: রোকন শব্দের অর্থ হলো 'কোণ'। ইয়েমেন দেশের দিকের কোণকে রোকনে ইয়েমেনি বলে। কাবা শরিফের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণটি হলো রোকনে ইয়েমেনি। অনুরূপভাবে বায়তুল্লাহ শরিফ থেকে ইরাক ও সিরিয়ার দিকের কোণকে যথাক্রমে রোকনে ইরাকি ও রোকনে শামি বলা হয়।

বাবুস সাফা: তাওয়াফ শেষ করে এই দরজা দিয়ে সায়ি করার জন্য সাফা পাহাড়ের দিকে যাওয়া হয়।

জমজম: আল্লাহর নির্দেশে অলৌকিকভাবে প্রবাহিত হওয়া একটি প্রাচীন ঝরনার নাম জমজম। এটি হজরত হাজেরা ও হজরত ইসমাইল (আ.)-এর জীবনের ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত। এই পানি দাঁড়িয়ে কেবলামুখী হয়ে পান করতে হয়। পানি পান করার সময় পড়তে হয়_'আল্লাহুম্মা ইনি্ন আসআলুকা ইলমান নাফিয়ান রিজকান ওয়াসিয়ান ওয়া শিফাউন মিন কুলি্ল দায়িন।'

মিনা: মিনা বা মুনা আরবি শব্দ। মিনা অর্থ প্রবাহিত। এটি মক্কা শরিফ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে পাঁচ মাইল দূরের একটি প্রান্তর। এখানে সব হাজিকেই ৮ জিলহজ পৌঁছতে হয়। এখান থেকে ৯ জিলহজ আরাফাতের উদ্দেশে রওনা হতে হয়। ৯ জিলহজ দিবাগত রাত ছাড়া ১৩ তারিখ পর্যন্ত হাজিদের এখানেই থাকতে হয়। শয়তানকে পাথর মারার জায়গাও এটি।

আরাফাত: মক্কা শরিফ থেকে পূর্ব দিকে প্রায় ১৪ মাইল বা ২২ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার দূরে পর্বতবেষ্টিত এক বালুকাময় প্রান্তরের নাম আরাফাত। এখানেই ৯ জিলহজ জোহর নামাজের পর অবস্থান করার মাধ্যমেই হজের প্রথম ও প্রধান কাজ সম্পন্ন করা হয়। আরাফা আরবি শব্দ। আরাফা শব্দের অর্থ চিনতে পারা। বেহেশত থেকে নিক্ষিপ্ত হওয়ার পর হজরত আদম ও হাওয়া (আ.) এখানেই পরস্পরকে চিনতে পেরেছিলেন। আরাফাতে অবস্থানকালে নামাজ, প্রার্থনা ও তালবিয়াহ পড়ার মধ্যে তন্ময় হয়ে থাকতে হয়।

জাবালে রহমত: এটি আরাফাতের মাঠের একটি পাহাড়। হজের সময় এরই সন্নিকটে অবস্থান করতে হয়। এই পাহাড়ের পাদদেশ থেকেই হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিদায় হজের ঐতিহাসিক মনোমুগ্ধকর ভাষণ প্রদান করেছিলেন। আর দায়িত্ব পালনে পূর্ণতা অর্জনের প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলেন।

ওকুফে আরাফা: ওকুফ অর্থ অবস্থান। আর ওকুফে আরাফা অর্থ আরাফার মাঠে অবস্থান করা। ৯ জিলহজ জোহর নামাজের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফার মাঠে অবস্থান করাকে ওকুফে আরাফা বলে। এই এলাকার মধ্যে অবস্থান না করলে হজ হবে না। এই জায়গা পিলার দিয়ে সীমানা করা আছে। এটা হজের ফরজ কাজ।

মসজিদে নামিরা: আরাফাতের ময়দানের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সুবৃহৎ হলো 'মসজিদে নামিরা'। এখানে ফেরেশতা জিব্রাইল (আ.) হজরত ইব্রাহীম (আ.)-কে হজের নিয়মকানুন শিক্ষা দিয়েছিলেন। এখানেই হজরত আদম (আ.) ও বিবি হাওয়া (আ.) পরস্পরকে চিনতে পেরেছিলেন।

RR11

মুজদালিফা: মিনা ও আরাফার মাঝখানের একটি জায়গার নাম মুজদালিফা। আরাফা থেকে ফিরে এখানে রাত যাপন করতে হয়। হজরত আদম (আ.) ও বিবি হাওয়া আরাফাত থেকে ফিরে এখানে রাতবাস করেছিলেন বলে বর্ণনা পাওয়া যায়।

জামরাত: মিনায় শয়তানকে পাথর মারার জন্য নির্ধারিত স্থান। এখানে হাজিদের নিয়মমতো শয়তানকে পাথর মারতে হয়। যখন হজরত ইব্রাহীম (আ.) হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানির জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন শয়তান এ জায়গায় তাঁকে বিরত রাখার জন্য তাঁর মধ্যে দুর্বলতা সৃষ্টির মাধ্যমে বাধা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। সেই ঘটনা স্মরণ করে এখানে শয়তানকে পাথর মারা হয়।

রমি: রমি শব্দের অর্থ ছোড়া বা নিক্ষেপ করা। মিনায় শয়তানকে পাথর মারাকে রমি বলে।

জাবালে নুর: এটি সেই পাহাড়, যার চূড়ায় অবস্থিত বিখ্যাত গারে হেরা বা হেরা গুহা। এখানেই হজরত মুহাম্মদ (সা.) নবুয়তের আগে ছয় মাস নির্জনে ধ্যান করেছিলেন এবং পবিত্র কোরআনের প্রথম আয়াত এখানেই অবতীর্ণ হয়।

জাবালে আবু কোবায়েস: এটি সাফা পাহাড়সংলগ্ন একটি সুউচ্চ পাহাড়। এটি মসজিদুল হারাম থেকে দেখা যায়। এই পাহাড়ের নাম আবু কোবায়েস। কাবা গৃহের নির্মাণকাজ শেষ করে হজরত ইব্রাহীম (আ.) আল্লাহর নির্দেশে এই পাহাড়ের চূড়ায় আরোহণ করে লোকদের হজের জন্য আহ্বান করেছিলেন। হাজরে আসওয়াদকে বেহেশত থেকে এনে প্রথম এই পাহাড়ে রাখা হয়েছিল। এই পাহাড়ে দাঁড়িয়ে প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) অবিশ্বাসীদের চ্যালেঞ্জের উত্তরস্বরূপ অঙ্গুলির নির্দেশে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করেছিলেন। হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর এই চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করাকে শাক্কাল কামার বলে।

মাউলুদুন নবী (স.): সাফা বাজারের সনি্নকটে আবদুল মোত্তালিবের বাড়ি। এখানেই হজরত মুহাম্মদ (সা.) জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে এ বাড়িটিকে একটি সাধারণ গ্রন্থাগার করা হয়েছে।

দারে আরকাম: সাফা পাহাড়ের নিকটবর্তী জায়গা। এখানে প্রিয়নবী (সা.) ও তাঁর আসহাবসহ কিছুদিন অন্তরালে বাস করেছিলেন। এখানেই হজরত ওমর (রা.) ইসলাম গ্রহণ করেন।

মসজিদে আকাবা: মক্কার অদূরে আকাবা নামক একটি জায়গায় হিজরতের আগে মদিনার ৬০ জন তীর্থযাত্রী এখানে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং মদিনায় গিয়ে তাঁরা ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন। এখানে তাঁরা হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে সব ধরনের সাহায্যের আশ্বাস দেন। এই স্থানে নির্মিত মসজিদের নাম হলো মসজিদে আকাবা।

আইয়ামে তাশরিক: ৯ থেকে ১৩ জিলহজ পর্যন্ত দিনগুলোকে একত্রে আইয়ামে তাশরিক বা তাশরিকের দিন বলে।

দম: এহরাম অবস্থায় কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি বা নিষিদ্ধ কোনো কাজ করে ফেললে তার ক্ষতিপূরণস্বরূপ যে কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব হয়ে যায় তাকে 'দম' বলে। দম হেরেমের সীমানার মধ্যে দিতে হয়।

মিকাত: পবিত্র ভূমি মক্কা শরিফে প্রবেশের জন্য চতুর্দিকে নির্দিষ্ট দূরত্বে বিশেষ জায়গাকে সীমারেখা করে পোস্ট বা খুঁটি পুঁতে রাখা আছে। এদের মিকাত বলা হয়। হজ ও ওমরাকারীদের এই স্থান অতিক্রম করার আগেই এহরাম বাঁধতে হবে এই উদ্দেশ্যে যে তাঁরা হজ ও ওমরা করার জন্য প্রস্তুত আছেন ও সংকল্পবদ্ধ হয়েছেন।

লেখক: প্রাবন্ধিক

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর