হজ ইসলামি শরিয়তের অন্যতম স্তম্ভ ও ফরজ ইবাদত। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে হজের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘প্রত্যেক সামর্থ্যবান মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ’ (সুরা আলে ইমরান: ৯৭)।
হজের মাসায়েল না জানার কারণে অনেকে হজ ফরজ হওয়ার পরও অবহেলা করে থাকেন। এটি উচিত নয়, বরং রাসুল (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি হজ করার ইচ্ছে করেছে, সে যেন তাড়াতাড়ি তা করে নেয়।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১৭৩২)।
বিজ্ঞাপন
যার ওপর হজ ফরজ
পাঁচটি শর্তসাপেক্ষে হজ ফরজ হয়। ১) মুসলিম হওয়া ২) আকল থাকা বা বিবেকবান হওয়া অর্থাৎ পাগল না হওয়া ৩) বালেগ বা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া ৪) আজাদ বা স্বাধীন হওয়া অর্থাৎ কারো গোলাম না হওয়া এবং ৫) দৈহিক ও আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান হওয়া। তবে মহিলাদের ক্ষেত্রে আরেকটি শর্ত যুক্ত হবে, সেটি হলো- সঙ্গে ‘মাহরাম’ থাকা। (ফতোয়ায়ে শামি: ২/৪৫৫)
মাহরাম হচ্ছে- যাদের সঙ্গে কখনো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যায় না। যেমন— পিতা, পুত্র, আপন ও সত্ভাই, দাদা-নানা, আপন চাচা ও মামা, ছেলে বা নাতি, জামাতা, শ্বশুর, দুধভাই, দুধ ছেলে প্রমুখ। তবে একা একা দুধভাইয়ের সঙ্গে এবং যুবতি শাশুড়ির জামাতার সঙ্গে যাওয়া নিষেধ। (রদ্দুল মুখতার: ২/৪৬৪)
যেসব কারণে ফরজ হজ আদায়ে গড়িমসি বেশি
বিজ্ঞাপন
যেসব কারণে ফরজ হজ আদায়ে সমাজে বেশি অজ্ঞতা দেখা যায়, তার মধ্যে জাকাতের নিসাবের সঙ্গে হজকে গুলিয়ে ফেলা অন্যতম। কেউ একরকম নিশ্চিত হয়ে বসে থাকেন যে, তার ওপর এখনও হজ ফরজ হয়নি। যার কারণে কোনো বিশেষজ্ঞের কাছেও যাওয়ার প্রয়োজনবোধ করেন না তিনি।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, জাকাত ফরজ না হয়েও কারো ওপর হজ ফরজ হতে পারে। কেননা হজ ও জাকাতের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য রয়েছে। যেমন, জাকাতের সম্পর্ক নির্ধারিত নিসাবের সঙ্গে। হজের সম্পর্ক মক্কায় আসা-যাওয়ার খরচের সঙ্গে।
সুতরাং স্থাবর সম্পত্তির কিছু অংশ বিক্রি করে কেউ যদি হজ আদায় করতে সক্ষম হয় এবং হজ থেকে ফিরে এসে বাকি সম্পত্তি দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে, তাহলে তার ওপর হজ ফরজ। (ইমদাদুল আহকাম: ২/১৫২; আহসানুল ফতোয়া: ৪/৫১৬)
একইভাবে ব্যবসায়ীর দোকানে যে পরিমাণ পণ্য আছে, তার কিছু অংশ বিক্রি করলে যদি হজ করা সম্ভব হয় এবং ফিরে এসে যদি বাকি পণ্য দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা যায়, তাহলে তার ওপরও হজ ফরজ। (ইমদাদুল আহকাম: ২/১৫৩)
মুসলিম সমাজে একটি ভুল ধারণা প্রচলিত আছে, সেটি হলো- আগে মাতা-পিতার হজ করাবে, পরে নিজের কথা চিন্তা করবে; এটি সঠিক নয়, বরং সামর্থ্য থাকলে তাঁদের নিয়ে একসঙ্গে হজ করবে। অন্যথায় আগে নিজের ফরজ আদায় করবে। (রহিমিয়া: ৮/২৮২)
আবার অনেকে মনে করেন, সন্তানের বিয়ে দেওয়ার পর হজ আদায় করতে হয়। অথচ এ কথা ইসলাম সমর্থিত নয়। ইসলামের দৃষ্টিতে সন্তানের বিয়ে জরুরি ঠিক আছে, তাই বলে সন্তানের বিয়ের জন্য হজে বিলম্ব করা যাবে না। (রহিমিয়া: ৮/২৭৬)
উপরোক্ত অজ্ঞতার কারণে এখনও অনেকে হজ থেকে গাফেল হয়ে আছেন। তাই হজ সম্পর্কে যাবতীয় বিধিবিধান জেনে নেওয়া মুসলিম হিসেবে সবার জন্য বাঞ্ছনীয়। ফরজ হজ আদায় না করলে ইহুদি-নাসারার মতো মৃত্যু হবে বলে হাদিসে সতর্ক করা হয়েছে। ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি হজ করার সামর্থ্য রাখে, তবুও হজ করে না, সে ইহুদি হয়ে মৃত্যুবরণ করল কি খ্রিস্টান হয়ে, তার কোনো পরোয়া আল্লাহর নেই। (ইবনে কাসির: ১/৫৭৮)
অন্যদিকে হজের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে হজ করল এবং এসময় অশ্লীল ও গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকল, সে নবজাতক শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসবে’ (বুখারি: ১৫২১)। আর ‘মাবরুর হজের বিনিময় জান্নাত ভিন্ন অন্য কিছু নয়।’(বুখারি: ১৬৫০)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সামর্থ্যবানদের হজের গুরুত্ব সম্পর্কে সঠিক উপলব্ধি দান করুন। আর্থিকভাবে অক্ষম হজপ্রত্যাশীদের সক্ষমতা দান করুন। আমিন।