শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

‘মানুষকে পরামর্শ দেই, কিন্তু আমরাই হজে যেতে পারি না’

কাজী রফিক
প্রকাশিত: ১৬ জুন ২০২৩, ১১:৫৬ এএম

শেয়ার করুন:

‘মানুষকে পরামর্শ দেই, কিন্তু আমরাই হজে যেতে পারি না’

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি হজ। প্রত্যেক মুসলমানেরই ইচ্ছে থাকে শেষ বয়সে হলেও জীবনে একবার হজ করা। আর সেই হজের জন্য অনেকেই দীর্ঘ সময় ধরে অর্থ সঞ্চয় করেন। তবুও হজের জন্য টাকা জমাতে ব্যর্থ হন অনেকেই।

আবার হজে যাওয়ার জন্য মুসল্লিরা পরামর্শ নেন মসজিদের খতিব, ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের কাছ থেকে। মুসল্লিদের হজে যেতে উদ্বুদ্ধ করার কাজটা করেন তারা। তবে এই খতিব, ইমাম আর মুয়াজ্জিনরাই অনেকে আর্থিক কারণে হজে যেতে পারেন না।


বিজ্ঞাপন


মূলত মসজিদের খতিব, ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের বেতন-ভাতা খুবই কম। তাদের মতে, এই বেতনে সংসার চালানোও কঠিন।

তবে অভাবে থাকলেও হতাশা নেই মসজিদের বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের। তারা প্রত্যাশা করেন, জীবনে একবারের জন্য হলেও মহানবীর রওজা জিয়ারতের। হজ করার। যদিও আর্থিক কারণে সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত থেকে যান অনেকেই।

বরিশালের বরগুনা জেলার বাসিন্দা আহাজার পেয়াদা। জীবনের প্রায় অর্ধেকটা সময় পার করেছেন মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পালন করে। তবে হজে যাওয়া হয়নি।

আহাজারের নাতনি রেহানা বেগম ঢাকা মেইলকে বলেন, নানার খুব ইচ্ছা ছিল হজ করার৷ কিন্তু সেই সামর্থ্য তার ছিল না। তাই হজে যেতে পারেননি। অথচ তার পরামর্শে, তার কথামতো অনেক মানুষ হজে গেছে।


বিজ্ঞাপন


আহাজার মারা গেছেন দুই যুগ বেশি। দিনে দিনে আরও বেড়েছে হজে যাওয়ার খরচ। ফলে বর্তমানে অনেক ইমাম, মুয়াজ্জিন আর্থিক কারণে হজে যেতে পারছেন না।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাইতুল আবরা জামে মসজিদের খতিব মুফতি তাওহিদুল ইসলাম। দায়িত্ব পালন করছেন দীর্ঘদিন। শত শত মানুষকে হজে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন, দিয়েছেন দিকনির্দেশনা। কিন্তু এখনো মক্কা দেখা হয়নি তাওহিদুল ইসলামের।

কারণ জানতে চাইলে আর্থিক অনটনের কথাই তুলে ধরেন এই খতিব। তার মতে, স্থানীয় আরও অন্তত ৩০টির বেশি মসজিদের খতিব এখনো হজ করতে পারেননি। যদিও তারা মানুষকে হজে যাওয়ার শিক্ষা দিয়ে আসছেন বছরের পর বছর।

তাওহিদুল ইসলামের প্রত্যাশা, দেশের ধনাঢ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এসব খতিব, ইমাম ও মুয়াজ্জিনের হজের ইচ্ছে পূরণে এগিয়ে আসবে।

hajj

ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে এই খতিব বলেন, বাংলাদেশের সচেতন ব্যক্তি ও সামর্থ্যবানরা চাইলে নিজেরা বাইতুল্লাহ দেখতে পারেন এবং অনেককে সে সুযোগ করে দিতে পারেন। তবে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে সেটি তারা করতে পারছেন না। যারা চান আল্লাহর রাস্তায় দান করতে, হজ তাদের জন্য একটা মাধ্যম হতে পারে। কারণ আমাদের অনেকেই আছে যাদের ইচ্ছে আছে, শুধুমাত্র সামর্থ্যের কারণে হজে যেতে পারেন না। তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য, হজের মতো এত বড় ইবাদতে তাদেরকে সাহায্য করার মতো অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এ দেশে আছে। শুধু তাদের এগিয়ে আসতে হবে। ইহকালের জন্য আল্লাহ যাদের সামর্থ্যবান করেছেন, তাদেরকে পরকালের ফিকিরও করতে হবে।

তিনি বলেন, আল্লামা শেখ সাদী (র.) তার প্রসিদ্ধ গুলিস্তা নামক কিতাবের ৮ নম্বর অধ্যায়ের প্রথম পৃষ্ঠায় এই হেকমত নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, সম্পত্তি জীবন উপভোগ করার জন্য। জীবন মাল জমা করার জন্য না। কিছু লোক একজন জ্ঞানী লোককে প্রশ্ন করলো যে, সৌভাগ্যবান কে এবং হতভাগা কে? ওই জ্ঞানী লোক উত্তরে বলল, সৌভাগ্যবান ওই ব্যক্তি যিনি মাল-সম্পত্তির মাধ্যমে বৈধভাবে জীবন উপভোগ করলো, আর বাকি সম্পত্তি আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে রাখলো। আর হতভাগা ওই ব্যক্তি যে মাল-সম্পত্তির মাধ্যমে জীবনকে বৈধভাবে উপভোগ করল না। সম্পত্তি রেখে গেল।

একই মসজিদের মুয়াজ্জিন হাফেজ হাতেম আলীও হজে যাওয়ার আকাঙ্খা পোষণ করেন। পরক্ষণেই বলে ওঠেন, যাব তো! টাকা তো নাই। ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ একদিন মিলায়া দিবে।

মোহাম্মদপুরের বাইতুত তাকওয়া জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন মাওলানা আব্দুল কাদির। হজে যেতে বিত্তবানদের পরামর্শ ও সহযোগিতা করে আসছেন শিক্ষা জীবন থেকে। চাকরি জীবনেও এসেছেন এক যুগের বেশি। তবে হজে যাওয়ার সামর্থ্য হয়ে ওঠেনি আজও।

ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, সরকার যদি আমাদের জন্য খরচটা কমাতো, তাহলে আমাদের জন্য সুবিধা হয়। মানুষকে পরামর্শ দেই, কিন্তু আমরাই যেতে পারি না। আমার চেনা অনেক খতিব সাহেব, ইমাম সাহেবও হজ করতে পারেননি। আমি তো মুয়াজ্জিন।

মাওলানা আব্দুল কাদির বলেন, আমরা তো কারও কাছে চাইতে পারব না। সামর্থ্যবানরা যদি এগিয়ে আসে আমাদের মতো অনেক মানুষের হজ করা সম্ভব হবে। যারা দান করবেন, তারাও নিজেদের আখিরাতের জন্য বড় সঞ্চয় গড়ে তুলতে পারবেন।

কারই

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর