শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

হজে নারী-পুরুষের মাথা মুণ্ডানোর বিধান

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২ জুলাই ২০২২, ০১:৫৫ পিএম

শেয়ার করুন:

হজে নারী-পুরুষের মাথা মুণ্ডানোর বিধান

হজের মৌসুমে মাথা মুণ্ডন করা বা ছাঁটান একটি বিশেষ ইবাদত। এটি হজ-ওমরার ওয়াজিব বিধান। কারণ, মাথার চুল মুণ্ডন বা কর্তন ছাড়া ইহরামের নিষেধাজ্ঞাগুলো শেষ হয় না। ওমরাতে মাথা মুণ্ডন করতে হয় সায়ি করার পর মারওয়ায়, আর হজে কোরবানির পর মিনায়। হজ ও ওমরাতে মাথা মুণ্ডন বা ছাঁটা—উভয়টির যেকোনো একটি করা যায়। তবে হজে মাথা মুণ্ডন করা উত্তম। কিন্তু তামাত্তু হজকারীদের জন্য ওমরার পর ছাঁটানই উত্তম, যাতে হজের পর মুণ্ডনের জন্য কিছু চুল বাকি থাকে। 

নবী করিম (স.) কখনও কখনও মাথার চুল কাটার মাধ্যমে হালাল হয়েছেন। তাই হজ বা ওমরা পালনকারীরা মাথার চুল ছাঁটানোর মাধ্যমেও ইহরাম খুলে ফেলতে পারবেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘রাসুল (স.) ও তাঁর কতিপয় সাহাবি বিদায় হজে মাথা মুণ্ডন করেছিলেন, আর কেউ কেউ কর্তন করেছিলেন’ (বুখারি: ৪৪৫৫)। 


বিজ্ঞাপন


হাদিসে আরও আছে, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আমাকে আমিরে মুয়াবিয়া (রা.) বলেছেন, আমি কাঁচি দিয়ে নবী করিম (স.)-এর মাথা ছাঁটিয়ে ছিলাম মারওয়ার নিকটে। (মুসলিম: ৩০৮১)

তবে, মাথা মুণ্ডনকে ছাঁটান অপেক্ষা উত্তম বলা হয়েছে হাদিসে। এমনকি মাথা মুণ্ডনকারীর জন্য বিশেষভাবে তিনবার দোয়া করা হয়েছে। তাই হাজিদের জন্য মাথা মুণ্ডনই উত্তম। নবীজি (স.) মাথা মুণ্ডনকে পছন্দ করতেন। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি অনুগ্রহ করো যারা মাথা মুণ্ডন করেছে তাদের প্রতি। সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! যারা মাথা ছাঁটিয়েছে তাদের প্রতিও? রাসুল বললেন, হে আল্লাহ! তুমি অনুগ্রহ করো যারা মাথা মুণ্ডন করেছে তাদের প্রতি। সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! যারা মাথা ছাঁটিয়েছে তাদের প্রতিও? তৃতীয়বার রাসুল (স.) বললেন, যারা মাথা ছাঁটিয়েছে তাদের প্রতিও।’ (বুখারি: ১৭৫৪; মুসলিম: ৩২০৫)

অন্য হাদিসে আছে, ইয়াহইয়া ইবনে হুসাইন (রা.) তার দাদি থেকে বর্ণনা করেন যে, তার দাদি বলেন, ‘বিদায় হজে আমি নবী করিমকে (সা.) মাথা মুণ্ডনকারীদের জন্য তিনবার দোয়া করতে শুনেছি, আর যারা ছাঁটিয়েছে তাদের জন্য শুধু একবার দোয়া করলেন।’ (মুসলিম: ৩২১০)

‘পুরুষের জন্য মাথা মুণ্ডন বা ছাঁটা উভয়টি জায়েজ, আর নারীর ক্ষেত্রে শুধু ছাঁটা জায়েজ। আর যার মাথায় চুল নেই সে শুধু ব্লেড বা চুল কাটার মেশিন পুরো মাথায় ঘুরিয়ে নেওয়াই যথেষ্ট এবং তা ওয়াজিব’ (ফতোয়ায়ে আলমগিরি: ১/১৪৯)। 


বিজ্ঞাপন


কেননা নবী করিম (স.) হজ বা ওমরা পালনাবস্থায় নারীদের জন্য মাথার চুল মুণ্ডকে নিষেধ করেছেন। তাই নারী হাজীরা শুধু মাথার চুল কর্তন করে ইহরাম খুলে ফেলবেন। এ প্রসঙ্গে রাসুল (স.) বলেন, ‘স্ত্রীলোকের প্রতি মাথা মুণ্ডন নেই। স্ত্রীলোকের প্রতি রয়েছে মাথা ছাঁটান’ (আবু দাউদ: ১৯৮৬)। 

মনে রাখতে হবে,  যেকোনোভাবে মাথা মুণ্ডন করলেই সওয়াবের পরিপূর্ণতা লাভ হয় না। নিশ্চিত সওয়াবের জন্য সুন্নত তরিকা অবলম্বন করতে হবে। ডান দিক থেকে মাথা মুণ্ডান সুন্নত। তাই হজ ও ওমরা পালনকারীদের জন্য উচিত ডান দিক থেকে মাথা মুণ্ডান শুরু করা। এভাবেই নবী করিম (সা.) হজে নিজের মাথা মোবারক মুণ্ডন করতেন।

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘রাসুল (স.) মিনায় পৌঁছে প্রথমে জামরাতে গেলেন এবং তাতে কঙ্কর মারলেন। অতঃপর মিনায় অবস্থিত তাঁর ডেরায় গেলেন এবং কোরবানির পশুগুলো জবেহ করলেন, তারপর নাপিত ডাকলেন এবং তাকে আপন মাথার ডান দিক বাড়িয়ে দিলেন। সে তা মুণ্ডন করল। তিনি আবু তালহা আনসারিকে ডেকে কেশগুচ্ছ দিলেন। অতঃপর নাপিতকে মাথার বাম দিক বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, মুণ্ডাও; সে মুণ্ডালো। আর তিনি তা সেই আবু তালহাকে দিয়ে বললেন, যাও মানুষের মধ্যে বণ্টন করে দাও।’ (মুসলিম: ৩২১৫)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম নর-নারীকে হজের যাবতীয় বিধান যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর