শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

সরকারি খরচে হজ করলে কবুল হবে কি?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ মে ২০২৩, ০৭:৩৫ পিএম

শেয়ার করুন:

সরকারি খরচে হজ করলে কবুল হবে কি?

হজ ইসলামি শরিয়তের অন্যতম স্তম্ভ। আর্থিক ও দৈহিকভাবে সামর্থ্যবান নারী-পুরুষের ওপর জীবনে একবার হজ করা ফরজ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘প্রত্যেক সামর্থ্যবান মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ।’ (সুরা আলে ইমরান: ৯৭) 

হজ খুবই মর্যাদাপূর্ণ এক আমল। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে- ‘রাসুলুল্লাহ (স.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো সর্বোত্তম আমল কোনটি? জবাবে রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন-‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনা। এরপর জিজ্ঞাসা করা হলো- তারপর কোন আমল? তিনি উত্তর দিলেন, ‘আল্লাহর পথে জিহাদ করা।’ আবার জিজ্ঞাসা করা হলো- এরপর কোন আমল? জবাবে তিনি বললেন, ‘মাবরুর হজ’ (কবুল হজ)।’ (বুখারি: ১৫১৯)


বিজ্ঞাপন


হজ কবুল হওয়ার জন্য নিজের পকেটের টাকায় হজ করা শর্ত নয়। তাই সরকারি খরচে হজে গেলেও পূর্ণ সওয়াব পাওয়া যাবে এবং নিজের ফরজ হজও আদায় হয়ে যাবে। সরকার কারো হজের খরচ বহন করলে সেটি সরকারের পক্ষ থেকে হাদিয়া ও সহযোগিতা ধরা হবে এক্ষেত্রে। অনেকে মনে করে থাকেন-হজ যেহেতু নিজের সামর্থ্যের ওপর ফরজ হয়, তাই অন্যকারো সহায়তা নিয়ে হজ করলে তা আদায় হয় না এবং সরকারি খরচেও হজ করলে তা আদায় ও কবুল হয় না। এসব ভুল ধারণা। বরং কারো আর্থিক সহযোগিতায় নিজের ফরজ হজের জন্য বায়তুল্লাহ যেতে শরিয়তের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। 

তবে হজ কবুল হওয়ার জন্য হালাল অর্থ ও ইখলাসের সাথে হজের শর্তাবলী পূরণ করা জরুরি। যদি জানা যায় যে কেউ কাউকে হারাম টাকায় হজে পাঠাচ্ছে, তাহলে সেই খরচে হজে যাওয়া যেমন জায়েজ নয়, তেমনি হজও কবুল হবে না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, যখন কেউ হালাল সম্পদ নিয়ে হজ করতে বের হয়— বাহনে পা রাখে, উচ্চারণ করে- লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, তখন আসমান থেকে ঘোষক ঘোষণা দেয়- লাব্বাইক ওয়া সাদাইক তথা তোমার কল্যাণ হোক। তোমার আসবাব হালাল। তোমার বাহন হালাল। আর তোমার হজ মকবুল। আর যদি হারাম সম্পদ নিয়ে হজে বের হয়— বাহনে পা রাখে, আর মুখে বলে- লাব্বাইক, তখন আসমান থেকে একজন ঘোষক ঘোষণা দেয়- লা লাব্বাইক ওয়া লা সাদাইক তথা তোমার লাব্বাইক মকবুল নয়। তোমার আসবাব হারাম। তোমার ভরণপোষণের ব্যয় হারাম। তোমার হজও মকবুল নয়। (মুজামুল আওসাত: ৫২২৮)

আরও পড়ুন: কত টাকা থাকলে কোরবানি ওয়াজিব হয়?

সুতরাং হজের খরচ হিসেবে কাউকে যদি হালাল টাকা হাদিয়া দেওয়া হয়, সেই খরচে হজ করলে নিজের ফরজ হজ আদায় হবে এবং তা কবুলও হবে ইনশাআল্লাহ। ওই ব্যক্তি পরবর্তীতে হজ আদায়ে সামর্থ্যবান হলেও তার ওপর দ্বিতীয়বার হজ ফরজ হবে না। 


বিজ্ঞাপন


তবে, কেউ যদি বদলি হজ করানোর জন্য আপনাকে হজে পাঠিয়ে থাকে, তাহলে পরবর্তীতে আপনার হজ করার সামর্থ্য হলে আপনাকে আবারও হজ করতে হবে।

উল্লেখ্য, অনেক কম্পানিও তাদের কর্মচারীদের হজ করায়। কম্পানি যদি বদলি হজ করানোর ইচ্ছা না করে থাকে, বরং অন্যকে হজ করানোই একমাত্র উদ্দেশ্য হয়, তাহলে যিনি হজ করতে যাচ্ছেন, তার ওপর ফরজ হওয়া হজ আদায় হয়ে যাবে। এতে কম্পানির মালিকও হজের সওয়াব পাবেন এবং হজ আদায়কারীর সওয়াবে কোনো কমতি হবে না।

আরও পড়ুন: নামাজের মধ্যেও মানুষ শিরক করে যেভাবে

কেননা রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজের পথ দেখায় সে উক্ত কাজ সম্পাদনকারীর ন্যায় সওয়াব পায়।’ (সহিহ মুসলিম: ১৮৯৩) হাদিসে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘..প্রত্যেক কাজ নিয়তের সাথে সম্পর্কিত। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে।’ (সহিহ বুখারি: ০১)

(তথ্যসূত্র: (বাহরুর রায়েক, কিতাবুল হজ: ২/৫৪৬; ফাতহুল কাদির: ২/৪১৬; বাদায়ে: ২/৩০১; বাহরুর রায়েক: ৩/১১০; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/২৫৭; মুসলিম: ১৮৯৩; বুখারি: ০১)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হজের যাবতীয় মাসায়েল জানার তাওফিক দান করুন। সকলের হজ-ওমরা আল্লাহ তাআলা কবুল করুন আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর