রোববার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

হাজিদের নামাজের বিধান কি মুসাফিরের মতো?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ জুন ২০২৩, ০৬:১৮ পিএম

শেয়ার করুন:

হাজিদের নামাজের বিধান কি মুসাফিরের মতো?

কেউ অবস্থানস্থল থেকে ৪৮ মাইল তথা ৭৮ কিলোমিটার দূরে সফরের নিয়তে বের হয়ে এলাকা পেরুলেই শরিয়তের দৃষ্টিতে সে মুসাফির হয়ে যায়। সেই হিসেবে বিভিন্ন দেশে থেকে সৌদি আরবে আসা হজযাত্রীরা যেহেতু সফরের দূরত্ব পরিমাণ এলাকা অতিক্রম করেছেন, অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে- মক্কায় অবস্থানের সময় তারা নামাজে কসর করবেন নাকি মুকিম ব্যক্তির মতো নামাজ আদায় করবেন?

এ বিষয়ে হানাফি মাজহাবের আলেমরা বলেন, যে হাজিরা মক্কায় এমন সময় পৌঁছান যে ৮ জিলহজ (হজের প্রথম দিন) থেকে ১২ জিলহজ (হজের শেষ দিন) পর্যন্ত মক্কায় তাদের অবস্থান ১৫ দিন পূর্ণ হয় না, তাহলে তারা মুসাফির সাব্যস্ত হবেন। কারণ তারা ১৫ দিনের মধ্যে মিনা-আরাফাতে অবশ্যই যাবেন, যেতে হবে। তাই এ অবস্থায় তাদের মুকিম হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এমন ব্যক্তিদের মিনা, আরাফাত ও মুজদালিফায় কসর করতে হবে।


বিজ্ঞাপন


মনে রাখতে হবে, সফরের স্থানে ১৫ দিন বা ততোধিক অবস্থানের নিয়ত করলে সে সেখানে মুকিম হয়ে যাবে। সেখান থেকে সামানা-পত্রসহ প্রস্থানের আগ পর্যন্ত সেখানে পূর্ণ নামাজ পড়বে এবং মুকিমের বিধান জারি থাকবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ১/১০৪)

সুতরাং সফর অবস্থায় কেউ ইচ্ছাকৃত চার রাকাত নামাজ পূর্ণ করলে তার গুনাহ হবে। পুরো পড়লে নামাজ পুনরায় পড়া ওয়াজিব হবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ১/৯১) মুসাফির ব্যক্তি মুকিম ইমামের পেছনে ইকতেদা করলে সে ইমামের অনুসরণে পূর্ণ নামাজই আদায় করবে। (আল মাবসুত, সারাখসি: ১/২৪৩) মুকিম ব্যক্তি মুসাফির ইমামের পেছনে ইকতেদা করলে দুই রাকাতে ইমামের সালাম ফেরানোর পর মুকিম মুক্তাদি দাঁড়িয়ে সুরা পড়া ছাড়া বাকি দুই রাকাত নামাজ পড়ে নেবে। সফর অবস্থায় ছুটে যাওয়া নামাজ মুকিম অবস্থায় কাজা করলে ‘কসর’ই আদায় করবে, আর মুকিম অবস্থার ছুটে যাওয়া নামাজ সফরে কাজা করলে তা পূর্ণ আদায় করবে। (হেদায়া: ১/৮১)

কিন্তু কোনো হজযাত্রী যদি আগে থেকে মক্কা এলাকায় এসে অবস্থান করতে থাকেন এবং তার মক্কায় অবস্থানের সময়কাল ১৫ দিন বা তার বেশি হয় তাহলে তার হজের কার্যক্রম পালনের সময়গুলোতে মিনা, আরাফাত ও মুজদালিফায় পুরো নামাজ পড়তে হবে।

কারণ, শরয়ি সফর সাব্যস্ত হওয়ার জন্য যতটুকু দূরত্বে সফর করতে হয়, মিনা-আরাফার দূরত্ব কোনোভাবেই সেই আওতায় পড়ে না। কারণ মক্কা থেকে মিনার দূরত্ব তিন মাইল এবং আরাফার দূরত্ব ১২ মাইল। অথচ আলেমের মতে শরয়ি সফর সাব্যস্ত হওয়ার জন্য কমপক্ষে ৪৮ মাইল হতে হয়।


বিজ্ঞাপন


সুতরাং মক্কার অধিবাসী এবং যারা মক্কায় মুকিম হিসেবে আছেন তাদের জন্য আরাফায় কসর করা জায়েজ হবে না। কারণ মক্কা এবং আরাফার মাঝে দূরত্ব কম। কারণ আরাফা ১২ মাইলেরও বেশি দূরত্বে নয়। এমনিভাবে মিনায় কসর করাও জায়েজ হবে না। কারণ মিনার দূরত্বও তিন মাইলের বেশি হবে না। এতটুকু দূরত্বে নামাজ কসর করার মতামত কোনো ইমামই দেননি।’ (ইলাউস সুনান: ৭/৩৪৯২-৩৪৯৩)

এ বিষয়ে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) আহলে মক্কাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘হে মক্কার অধিবাসীরা! তোমরা চার বুরদের কমে (৪৮ মাইল) মক্কা থেকে আসফান পর্যন্ত নামাজ কসর করবে না।’ (তাবরানি: ১১/৯৭; বায়হাকি: ৩/১৩৩; দারাকুতনি: ১/৩৮৭; ইলাউস সুনান: ৭/৩৪৯৪)

আল্লাহ তাআলা সকল হজযাত্রীকে শরিয়তের বিধান অনুযায়ী যথাযথভাবে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর