পৃথিবীর যে যেখানে থাকুক, প্রতিটি বাঙালির হদয়ে ভাষা মানে এক অলৌকিক শক্তি, নিজেকে ফিরে পাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা। ভাষা তো আমার ভাইয়ের কথা বলে, মায়ের কথা বলে, বোনের কথা। আমার অধিকার, শোষন-বঞ্চনার কথার বলে। আর সেই ভাষাকে রক্ষার জন্য যারা লড়েছিল বাঙালি জাতি কখনোই তাদের ভুলবে না। আর সেই বাঙালিদের আয়োজনেই যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে বাঙালি শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ স্টুডেন্ট কাউন্সিল’র আয়োজনে পালিত হয়ে গেল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন। আর এতে অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন দেশের ভিন্ন ভিন্ন ভাষাভাষীর শিক্ষার্থীরা।
উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে আসা বাঙালি শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রচেষ্টায় রাত জেগে শহীদ মিনার তৈরি করে বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যদিয়ে দিবসটি পালন করেছে। বাঙালি শতাধিক শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয়টির মুক্ত প্রাঙ্গণে তৈরি এই শহীদ মিনার’কে ঘিরে প্রভাতফেরি, পুস্পস্তবক অর্পণ ও বিভিন্ন ভাষায় ‘মা’ লিখার আয়োজন করা হয়।
বিজ্ঞাপন
‘মা’ লিখার এমন আয়োজনে মুহূর্তেই সাদা রঙের উন্মুক্ত বোর্ড প্রস্ফুটিত হতে থাকে। নানান রং ও ভাষায়, নিজস্ব আবেগ ও বর্ণমালায় প্রত্যেকের মায়ের ভাষায় ‘মা’ শব্দটি এক অনন্য মাত্রা যোগ করে। ভাষার সৌন্দর্য ফুটতে থাকে বোর্ড জুড়ে। এসময় প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টি ভাষা স্থান পায় সেখানে। ভিন্নভাষী শিক্ষার্থীদের এমন অংশগ্রহণ মাতৃভাষা দিবসের অনন্য মাত্রা যোগ করেছে। নিজের ভাষায় মা লিখতে পারার আনন্দে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন কেউ কেউ।
পরে আয়োজনের শেষে বাঙালির চিরচেনা গানে মুখরিত হয়ে উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ। বাতাসের সাথে সাথে ভেসে বেড়ায় সেই কালজয়ী বাংলা গানের সুর ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি... আমি কি ভুলিতে পারি...’
বিজ্ঞাপন
এমন আয়োজনের বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়টির পিএইচডি শিক্ষার্থী আসাদ আজিম বলেন, আমরা বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে এই মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপন করতে পারছি। অথচ একটা সময়ে নিজ দেশেই এই ভাষা হুমকিতে ছিল। আজ সারা বিশ্ব বিলুপ্ত ভাষা সংরক্ষণের কথা বলছে। যা আমাদের ভাষা আন্দোলনেরই ফসল। বিদেশের মাটিতে এমন আয়োজনে জোর গলায় বলতে পারি, আমরা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছি।
প্রতিনিধি/একেবি