গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান বর্বরতার প্রতিবাদে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে সমাবেশ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ। এদিকে এ বিষয়ে সংহতি জানিয়ে অনেক বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেছেন।
আজ (৭ এপ্রিল) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আয়োজনে সিনেট ভবন সংলগ্ন প্যারিস রোডে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে দুই হাজারের বেশি লোক অংশ নেয়।
বিজ্ঞাপন
জনসংযোগ দপ্তরের প্রকাশক অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন মজুমদারের সঞ্চালনায় কলা অনুষদের সাবেক ডীন ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফজলুল হক বলেন, ‘১৯১৭ সালে একটি চুক্তির মাধ্যমে ইহুদিদের জন্য একটি ছোট রাষ্ট্র ইজরায়েল প্রতিষ্ঠা করা হয়। তারা আজ গাজাবাসীর ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। ওআইসি, বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধ, মুসলিম উম্মাহ—এই ধরনের বক্তব্য দিয়ে বিশ্ব বিবেককে জাগ্রত করা যাবে না। তাই আমাদের আওয়াজ তুলতে হবে—‘আর নয় প্রতিবাদ, এবার হোক প্রতিশোধ’। এই প্রতিশোধ হবে অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘গাজাবাসীর কী অপরাধ? কেন তাদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে? কেন তাদের হত্যা করা হচ্ছে? পৃথিবীর কোনো যুদ্ধনীতিতে শিশু, অসহায় নারী, বৃদ্ধদের ওপর হামলা করার নিয়ম নেই। পৃথিবীর এই সকল নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রকে ধ্বংস করা হচ্ছে। এটা কি এজন্যই যে তারা মুসলমান? আজ বিশ্ব বিবেক, জাতিসংঘ, ওআইসি কোথায়? এগুলোর কারণ, আজ মুসলিম সম্প্রদায় বিভক্ত। তাই মুসলিমদের হত্যা করার সাহস পাচ্ছে। মুসলিমবিশ্ব এক হতে না পারলে একে একে গাজাবাসী, মিশর, জর্ডান, সৌদি আরব, ইরান—এক এক করে সবাই ধ্বংস হবে।’
আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে ‘ডেভিল ট্রাম্প’ সম্বোধন করে প্রো-ভিসি অধ্যাপক মোহা. ফরিদ উদ্দীন খান (শিক্ষা) বলেন, “আমরা দেখছি যে এই ‘ডেভিল ট্রাম্প’ ক্ষমতায় আসার পর এই নিপীড়নের তীব্রতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি বলতে চাই, ইজরায়েলের দোসর আমেরিকার বিরুদ্ধেই স্যাংশন দেওয়া উচিত। আমরা আজ থেকে কোনো আমেরিকান প্রোডাক্ট ব্যবহার করবো না। এটা যদি আমরা না করতে পারি, তারা এই গণহত্যা কোনোদিন থামাবে না। আমি মনে করি আমাদের নতুন করে সুযোগ এসেছে এসব ‘ডেভিল’দের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর। আমাদের আর পিছু হটবার সুযোগ নেই।”
উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে যখন কোনো নিপীড়ন-নির্যাতন চলে, তখন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব। এটা শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব। কারণ এখানে যারা থাকে, তারা বিবেক দ্বারা পরিচালিত হয়। সারা বিশ্বে এই মুহূর্তে হাজার হাজার বিশ্ববিদ্যালয় দাঁড়িয়েছে। শিক্ষার্থীদের বলতে চাই, যদি তোমরা ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াতে চাও, তাহলে ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হবে। জ্ঞানের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে তাদের প্রতিহত করতে হবে। জাতিসংঘ ও ওআইসি কাজে আসবে না। তোমরা নিজেদের যোগ্য করে তুলো, যেন আমরা স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র দেখে যেতে পারি।’
বিজ্ঞাপন
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল ইসলাম মাসুদ, ছাত্র উপদেষ্টা ড. আমিরুল ইসলাম, ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিভাগের অধ্যাপক মোছা. ইসমত আরা বেগম, এগ্রোনমি অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল আলিম, মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ফরিদুল ইসলাম, প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মাসুদুল হাসান খান মুক্তা। এছাড়াও আরও বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. আবদুল মালেক।
প্রতিনিধি/একেবি