বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪, ঢাকা

ভাষাসৈনিকদের নামে সড়ক: ব্যবহার নেই, নামফলকও খুঁজে পাওয়া যায় না

দেলাওয়ার হোসাইন দোলন
প্রকাশিত: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৪:১৩ পিএম

শেয়ার করুন:

ভাষাসৈনিকদের নামে সড়ক: ব্যবহার নেই, নামফলকও খুঁজে পাওয়া যায় না

অভিজাত এলাকা ধানমণ্ডির একটি সড়কের নাম ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব সড়ক। মিরপুর রোড ধরে কিছুটা যেতেই ধানমণ্ডি লেক সংলগ্ন ভাষাসৈনিক গাজীউল হক সড়ক। সড়ক দুটির নামকরণ ভাষাসৈনিকদের নামে করার পর দীর্ঘসময় পার হলেও নতুন নামে সড়ক দুটি চেনেন না কেউ। বাসাবাড়ি কিংবা দোকানের ঠিকানাতেও এই দুটি সড়কের নাম ব্যবহার করা হয় না। এমনকি সড়ক দুটির নামকরণ ফলকও নার্সারি ও ভ্রাম্যমাণ দোকানের আড়ালে পড়ে গেছে।

কাজী গোলাম মাহবুব সড়কটি ‘ধানমণ্ডি ৯ নম্বর রোড’ নামেই পরিচিত। সড়কটির একপাশে শেখ জামাল মাঠ, অন্য পাশে বেশকিছু আবাসিক ভবন ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। ভাষাসৈনিকের নামে নামকরণের পর শেখ জামাল মাঠ কর্নারের ফুটপাতে নামফলক বসানো হয়। কিন্তু তা সারা বছরই থাকে ফুটপাত দখল করে থাকা নার্সারির পেছনে। ফলে কারও চোখেই পড়ে না।


বিজ্ঞাপন


অন্যদিকে গাজীউল হক সড়কটি ‘ধানমণ্ডি ৮ নম্বর রোড’ নামে পরিচিত। সড়কটিতে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে ভাষাসৈনিকের নামে করা সড়কটির নামফলক। ফলকটি পড়ে আছে অযত্ন-অবহেলায়। ফলকটি থেকে ভাষাসৈনিকের কীর্তি মুছে গেছে বহু আগেই। পড়ে আছে ধুলা আর আবর্জনা। ফলকটির পাশে ভ্রাম্যমাণ চা দোকান। সিগারেট বা চা খাওয়ার উপযুক্ত স্থান হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে ফলকটি।

Dolon-1দুই-তিন মিনিটে হাঁটলেই কাজী গোলাম মাহবুব সড়কের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়া যায়। এসময় দুই পাশে থাকা অন্তত ছয়জন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা মেইলের এই প্রতিবেদক। যাদের কেউই সড়কটির প্রকৃত নাম জানেন না। এসময় দোকান কিংবা বাসাবাড়ির ঠিকানাতেও এই নামটি ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। ভাষাসৈনিকের নামে সড়কের নামকরণ শুধু একটি নামফলকেই সীমাবদ্ধ, যে নামফলকটি আবার হারিয়ে গেছে ভ্রাম্যমাণ দোকানের পেছনে।

সড়কটির প্রবেশমুখে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন রিকশাচালক হাসেম। তিনি পাঁচ বছর ধরে ধানমণ্ডি এলাকায় রিকশা চালান। ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব সড়ক কোন দিকে জানতে চাইলে ঢাকা মেইলকে বলেন, এমন কোনো রোড আছে বলে তার জানা নেই। চালক হাসেম দাঁড়িয়ে থাকা সড়কটির নাম কী জানতে চাইলে বলেন, কেন, ৯ নম্বর রোড।

ভাষাসৈনিক গাজীউল হক সড়ক সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সড়কের নামফলকটি পড়ে আছে অযত্ন-অবহেলায়। ধুলা আর আবর্জনার স্তূপে চাপা পড়া ফলকটি থেকে মুছে গেছে লেখা। ফলকটির পাশে অস্থায়ী ভ্রাম্যমাণ চা দোকান, যেখানে ক্রেতাদের ভিড়। এসময় ফলকটিতে বসে কেউ কেউ চা পান করছিলেন, কেউবা সিগারেট টানছিলেন।


বিজ্ঞাপন


Dolon-2

হাবিবুর নামে এক ক্রেতা ঢাকা মেইলকে বলেন, ফলকটি আমরাই পরিষ্কার রাখি। এসে চা-নাস্তা খাই। নিয়মিত বসার কারণে স্থানটি পরিষ্কার থাকে বলে দাবি তার। গাজীউল হক সম্পর্কে কতটা জানেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, তেমন কিছু জানি না। আর জানমু কেমনে, সব তো মুছে গেছে বহু দিন আগেই।

এ ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম বাবলার সঙ্গে যোগাযোগ করেও তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

দখলে থাকার বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) অঞ্চল-১ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মেরীনা নাজনীন বলেন, ফুটপাত দখল করে যারাই জনসাধারণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছেন তারা। অনেক ক্ষেত্রেই জেল-জরিমানাও করা হচ্ছে। যদিও তারা বলছেন, অভিযান পরিচালনার খবর শুনলেই ব্যবসায়ীরা দোকান রেখে সটকে পড়েন। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো যারাই দখলে রাখছেন বা রাখেন তাদের সরে যেতে হবে। নগরীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা সবার দায়িত্ব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

Dolon-3

এ বিষয়ে ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ ঢাকা মেইলকে বলেন, যারা সড়কগুলো ভাষাসৈনিকদের নামে করেছেন তাদের অভিনন্দন। খেয়াল রাখার বিষয়, নামকরণ করলেই সমাপ্তি হয় না। প্রচারণার প্রয়োজন হয়, মানুষের অভ্যাসে নিয়ে আসতে হয়। এ জন্য নামফলকগুলো একটা জায়গায় না দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে দেওয়া প্রয়োজন। এমনভাবে দিতে হবে যেন মানুষ দেখে ও শিখে। সঙ্গে বাসাবাড়িসহ দোকানের নামেও পরিবর্তন নিশ্চিত করতে হবে বলে মত তার।

২০০৭ সালের ২ জানুয়ারি সিটি করপোরেশনের ১১তম সভায় ধানমণ্ডিসহ বেশকিছু সড়ক ভাষাসৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ গুণী মানুষের নামে নামকরণ করা হয়। সেময় ধানমণ্ডি ৯ নম্বর সড়কটির নামকরণ করা হয় ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব সড়ক হিসেবে। আর ধানমণ্ডি ৮ নম্বর সড়কটির নামকরণ করা হয় সাহিত্যিক, গীতিকার ও ভাষাসৈনিক গাজীউল হকের নামে।

ডিএইচডি/এমআর/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর