বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০২৪, ঢাকা

ভাষা মতিনের এলাকায় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার

ইউসুফ দেওয়ান রাজু
প্রকাশিত: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:১৬ পিএম

শেয়ার করুন:

ভাষা মতিনের এলাকায় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা আন্দোলনে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেয় রফিক, শফিক, সালাম, বরকতসহ আরও অনেকে। শহীদদের সেই রক্তস্নাত বাংলার মাটিতে প্রতি বছরই তাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে দেওয়া হয় ফুল। 

রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের অবিস্মরণীয় ও অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার ছেলে আব্দুল মতিন। তাঁকে ‘ভাষা মতিন’ বলেই ডাকেন স্থানীয়রা। অথচ তার জন্মভূমির অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার। এতে শুধু শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতেই বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা এমনটি নয়, বরং ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গকারীদের সম্পর্কে জানতে পারছে না এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজারও শিক্ষার্থী।


বিজ্ঞাপন


তবে কিছু স্কুলে কলাগাছ কিংবা বাঁশ দিয়ে মিনার তৈরি করে শহীদদের শ্রদ্ধা জানায় শিক্ষার্থীরা। অনেক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর ইচ্ছা থাকলেও তা পূরণ হচ্ছে না। এ ব্যাপারে সরকারি উদ্যোগে শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের। 

আরো পড়ুন: অকুতোভয় ভাষাসৈনিকদের শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত শহীদ মিনার

চৌহালী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, চৌহালী উপজেলায় পাঁচটি কলেজ, ২০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ১৭টি মাদরাসা ও উপজেলায় ১২৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২২টি এবতেদায়ী মাদরাসা, ১৩০টি আনন্দ স্কুল, ৩৬টি ইসলামিক ফাউন্ডেশন স্কুল, ২০টি কেজি স্কুল ও কৃষি মাঠ স্কুল রয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি নতুন প্রাইমারি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।

এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেশিরভাগেই নেই শহীদ মিনার। ভাষা মতিনের জন্মভূমি চৌহালী উপজেলায় প্রতিষ্ঠিত কলেজ ও বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীরা জানতে পারছে না ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস।


বিজ্ঞাপন


খাষকাউলিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী রোকসানা খাতুন জানান, আমরা টেলিভিশনে প্রতি বছরই দেখি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রভাতফেরি ও শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া করা হয়। আমাদের বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার না থাকায় আমরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে পারছি না।

কোদালিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আলাউদ্দিন, জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র রহিম শেখ, কোরবান আলী ও হযরত শেখ জানান, একুশে ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর শিক্ষকরা ভোরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে বলেন। এরপর পতাকা উত্তোলন করে শিক্ষার্থীরা যার যার মতো করে বাড়ি ফিরে যায়। তবে শহীদ মিনার না থাকায় শহীদদের যথাযথভাবে শ্রদ্ধা জানাতে পারে না অনেকেই। 

খাষপুকুরিয়া ইউনিয়নের পুকুরিয়া কোদালিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলেয়া খাতুন বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে কোনো শহীদ মিনার নেই। তাই মাতৃভাষা দিবসে আমরা স্কুলের পাশের একটি মসজিদের শহীদ মিনারে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিলে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাই।

চৌহালী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. এম এ আরিফ সরকার বলেন, যমুনার ভাঙন কবলিত উপজেলা চৌহালী। এই উপজেলার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই শহীদ মিনার ছিল। কিন্তু যমুনার ভাঙনে সে প্রতিষ্ঠানগুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

ss

তিনি আরও বলেন, সরকার ছাড়াও স্কুল-কলেজের ম্যানেজিং কমিটির উদ্যোগে শহীদ মিনার তৈরি করা উচিত। তাহলে তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা সেখানে ফুল দিতে এসে ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসগুলো জানতে পারবে। তবে আমরা সব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে চিঠির মাধ্যমে শহীদ মিনার তৈরি ও মাতৃভাষা দিবস পালনের জন্য বলা হয়েছে। যদি কোনো বিদ্যালয় মাতৃভাষা দিবস পালন না করে তবে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরো পড়ুন: ফেব্রুয়ারি এলেই ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয় শহীদ মিনার!

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ভারপ্রাপ্ত শাহজাহান মিয়া বলেন, শহীদ মিনার তৈরি করতে কোনো সরকারি বরাদ্দ নেই। যারা তৈরি করেছে তারা নিজ উদ্যোগে করেছে।

এ বিষয়ে চৌহালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভারপ্রাপ্ত (ইউএনও) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমি এরইমধ্যে জেনেছি। আর এসব আন্তর্জাতিক দিবসগুলোর আয়োজন বিদ্যালয়গুলোতে কেন হয় না তা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে সরেজমিন তদন্ত করতে বলা হয়েছে। এছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গুলোতে বাজেট না পাওয়া ও ভাঙন কবলিত এলাকার কারণে তারা শহীদ মিনার তৈরি করতে পারছে না। তবে এ বিষয়গুলো উল্লেখ করে লিখিত আকারে মন্ত্রণালয়ে আমরা চিঠি পাঠিয়েছি। আশা করছি দ্রুত সময়ে শহীদ মিনার তৈরি হবে।

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর