ভাষা আন্দোলনের ৭২ বছর পার হলেও সাতক্ষীরার মাধ্যমিক পর্যায়ে স্কুল ও মাদরাসার ৫২ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই নেই শহীদ মিনার। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস পালনের জন্য কখনও অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে। আবার কখনও দিবসটিতে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার অভিযোগ রয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে শহীদ দিবসে মহান ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা থেকে।
জানা গেছে, যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে, এসবের কয়েকটির শহীদ মিনারের অবস্থা আবার খুব ভালো না। কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনারের কিছু অংশ ভেঙে গেছে। ভাঙন ধরেছে বেদিতেও। এর ওপর জুতা পায়ে অবাধ চলাচল করে স্থানীয় অনেকেই। মাঝে মাঝে এখানে আস্তানা গড়ে বেদেরা। তারা জুতা পায়ে এ শহীদ মিনারের ওপর অবাধ বিচরণ করে।
বিজ্ঞাপন
জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলায় মাধ্যমিক পর্যন্ত স্কুল ও মাদরাসা আছে মোট ৫২৩টি। যার মধ্যে ২৭২টি প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১০৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৬৫টিতেই শহীদ মিনার নেই। একইভাবে দেবহাটার ৩০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৮টিতে, আশাশুনির ৮২ প্রতিষ্ঠানের ৪৯টিতে, কালিগঞ্জের ৭২ প্রতিষ্ঠানের ৪৯টিতে, শ্যামনগরের ৭৮ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫১টিতে, তালার ১০৫ প্রতিষ্ঠানের ৩৫টিতে এবং কলারোয়ার ৪৮ প্রতিষ্ঠানের ১৫টিতেই নেই শহীদ মিনার।
শিক্ষার্থী ইব্রাহিম কলেজ বলেন, আমাদের আমাদের মাদরাসায় কোনো শহীদ মিনার নেই। তাই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আমরা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারি না। তবে মাদরাসায় শহীদ দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
নাগরিক নেতা অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে ভাষা আন্দোলনের ৭২ বছর পার হয়ে গেছে কিন্তু জেলার শতভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনও শহীদ মিনার নির্মিত হয়নি। ভাষার জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মৃতিফলকসহ শহীদ মিনার করা দরকার। কারণ ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই বাঙালি প্রথম প্রতিবাদ গড়ে তোলে। তাই বাঙালি জাতীর গৌরবময় এ অধ্যায় শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরতে এবং দিবসটি যথাযথভাবে পালন করার জন্য দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি অনেক স্কুল-কলেজ ছুটি থাকে। এ দিন স্কুল কলেজ ছুটি না দিয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে দিবসটি পালন করলে শিক্ষার্থীরা শহীদ দিবস সম্পর্কে বেশি বেশি জানতে পারবে।
বিজ্ঞাপন
জেলা শিক্ষা অফিসার অজিত কুমার সরকার বলেন, জায়গা সংকটের কারণে কিছু কিছু স্কুলে শহীদ মিনার নির্মাণ করা কঠিন হয়ে যায়। তবে আমরাও চাই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দ্রুত শহীদ মিনার নির্মাণ করা হোক। যাতে স্কুল পর্যায় থেকেই সকল শিক্ষার্থীরা ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারে।
প্রতিনিধি/এইচই