আমাদের অন্তহীন প্রেরণার উৎস মহান শহীদ দিবস। যা এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবেও সারা বিশ্বে পরিচিত। বাংলাদেশের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে ২১ ফেব্রুয়ারি বাঙালি তরুণদের আত্মদানের কথা স্মরণ করা হয় না।
একুশ এলেই রঙতুলির আঁচড়ে মাতৃভাষার মর্ম ফুটিয়ে তোলা হয় মৌলভীবাজার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। বেদীজুড়ে আঁকা হয় আল্পনা। লাল-সবুজ-সাদা রঙে স্পষ্ট হয়ে উঠে চারুকর্ম।
বিজ্ঞাপন
শহীদ বেদী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে স্বেচ্ছাশ্রমে আল্পনা আঁকেন গণমাধ্যমকর্মী সালেহ এলাহী কুটি। শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সরেজমিনে মৌলভীবাজার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায় আল্পনা আঁকছেন তিনি।
জানা গেছে, প্রায় ৩০ বছর ধরে মৌলভীবাজার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও স্মৃতিসৌধে স্বেচ্ছাশ্রমে আলপনা আঁকছেন তিনি।
প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা নেননি জানিয়ে সালেহ এলাহী কুটি ঢাকা মেইলকে বলেন, ছাত্র রাজনীতি করার সময় দেয়াল লিখন ও মিছিল মিটিং সমাবেশের ব্যানার, পোস্টার লিখতাম। সেখান থেকেই হাতেখড়ি। শহীদ মিনার ও স্মৃতিসৌধে আলপনা আঁকার জন্য বিভিন্ন সময় জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ, পৌরসভাসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে রং সংগ্রহ করি। প্রায় এক সপ্তাহ লেগে যায় আলপনা আঁকতে।
আলাপচারিতায় তিনি আরও বলেন, এই কাজ মূলত একটি চেতনা বোধ থেকে করা। আমাদের ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে যাদের আত্মত্যাগে আমার মাতৃভাষা পেয়েছি, পেয়েছি স্বাধীন দেশের পতাকা, সেই বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য স্বেচ্ছাশ্রমে শহীদ মিনার ও স্মৃতিসৌধ আলপনায় রাঙিয়ে তোলার কাজ করছি দীর্ঘ ৩০ বৎসর ধরে। যাতে এ কাজের মাধ্যমে আমাদের আগামী প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হয় এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আরও তারা সমৃদ্ধ হয়। এই প্রত্যাশায় আমি এ কাজটি করি।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, আমি প্রতিবারই আনন্দের সঙ্গে এই কাজটা করে থাকি। এখানে কাজ করতে ভালো লাগে।
শহীদ মিনারে দেখা হয় ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইফরান উল হকের সঙ্গে। সে বলে, বাবার সঙ্গে রাস্তা দিয়ে প্রাইভেট পড়ে বাসায় যাচ্ছিলাম। দূর থেকে চোখে পড়ল, শহীদ মিনারে আল্পনা আঁকা হচ্ছে। তা দেখতে এসেছি। খুব ভালো লাগল, আমিও আল্পনা আঁকা শিখব।
রঙ-তুলির আঁচড়ে শহীদ মিনার দৃষ্টিনন্দন রূপে সেজেছে জানিয়ে স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মী আব্দুর রব বলেন, মহান একুশে ফেব্রুয়ারি পালন উপলক্ষে শহীদ মিনারের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সালেহ এলাহী কুটি স্বেচ্ছাশ্রমে আল্পনা আঁকছেন। তার এই সৃষ্টিশীল কাজ আমাদের আগামী প্রজন্মকে আরও অনুপ্রাণিত করবে।
মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক পান্না দত্ত বলেন, সহকর্মী সালেহ এলাহী কুটি লেখালেখির পাশাপাশি প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি এবং ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে তার নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় সৃষ্ট আলপনাগুলো অন্য এক আবহ ফুটে উঠে শহীদ মিনার ও স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে। স্বেচ্ছায় এবং আনন্দের সঙ্গে তিনি এই কাজ করছেন গত ৩০ বছর ধরে। যা সত্যিই প্রশংসনীয়।
পৌর মেয়র ফজলুর রহমান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অন্তরে লালন করে সালেহ এলাহী কুটি স্বেচ্ছায় শহীদ মিনার ও স্মৃতিসৌধে আল্পনা আঁকেন। যা প্রশংসনীয়। আগামী প্রজন্ম তা দেখে অনুপ্রাণিত হবে।
প্রতিনিধি/এসএস/একেবি