বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

কাগজের চড়া দামের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ বই বিক্রি

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১ মার্চ ২০২৩, ০১:২৭ এএম

শেয়ার করুন:

কাগজের চড়া দামের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ বই বিক্রি

মাসজুড়ে পাঠক-লেখক-প্রকাশকের মিলনস্থলে পরিণত হওয়া বাঙালির প্রাণের অমর একুশে গ্রন্থমেলা শেষ হলো আজ। টানা দুই বছর করোনার অস্থিরতার কারণে একুশে বই মেলা ঠিক মতো অনুষ্ঠিত হয়নি। করোনার ধকল কাটিয়ে এবারের বইমেলা আগেই সেই উজ্জ্বল-আনন্দ মুখর পরিবেশ ফিরে পেয়েছে। বিক্রিও হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ বই। বাংলা একাডেমির দেওয়া তথ্যমতে, ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন হাজার ৪৬৩টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। গতবছর যে সংখ্যাটি ছিল ৩৪১৬ টি।

শুধু বাংলা একাডেমির ২৭ দিনে বই বিক্রি হয়েছে ১ কোটি ২৪ লাখ টাকার। ২৬শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্টল মালিকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং আজকের সম্ভাব্য বিক্রি যুক্ত করলে কমপক্ষে ৪৭ কোটি টাকার বই বিক্রি হবে বলে ধারণা করছে বাংলা একাডেমি। ২০২২ সালে সমগ্র বই মেলায় যার সংখ্যা ছিল ৫২ কোটি টাকা। 


বিজ্ঞাপন


কাগজের দাম বাড়ায় ধারণা করা হয়েছিলো এবার বইয়ের দাম বাড়বে, কম বই প্রকাশিত হবে। কাজেই বই বিক্রি কমতে পারে। তারই আংশিক সত্যতা মিলেছে আজকের রিপোর্টে। তবে এই সংখ্যা মানতে নারাজ কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি প্রকৃতি তথ্য দিচ্ছে না অনেক স্টলই। তবে সত্যতাও পাওয়া যায় মোড়ক উন্মোচন বইয়ের সংখ্যা নিরূপণ করলেই। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ৭২২ টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে এর বাইরেও অনেকে স্টলের বাইরে বা মেলার অন্য স্থানে অনেক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছে। তাছাড়া অনেক স্টল / প্যাভিলিয়নের কোনো হিসেব পাওয়া যায়নি। আবার ঐতিহ্য /আকার/ প্রচারণায় এগিয়ে থাকা বেশ কিছু স্টলের/প্যাভিলিয়নের তথ্য উপাত্ত বাস্তবসম্মত নয় প্রতীয়মান হয়েছে বলে দাবি বাংলা একাডেমির। 

এক নজরে অমর একুশে বইমেলা ২০২৩
এবার বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মিলে ৬০১টি প্রতিষ্ঠানকে ৯০১ ইউনিটের স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাংলা একাডেমি-সহ ৩৮টি প্রতিষ্ঠান উভয়প্রান্তে প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ পায়। এবার এক ইউনিটের ৩২৮টি, দুই ইউনিটের ৩২২টি, তিন ইউনিটের ১৫৯টি এবং চার ইউনিটের ৯২টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়। শিশুদের জন্য ৭১টি প্রতিষ্ঠান ১১১টি ইউনিটের স্টল বরাদ্দ পায়। বিকাশের আর্থিক সহায়তায় মেলার অবকাঠামো নির্মাণ ও সাজসজ্জার সব কাজের দায়িত্বে ছিল ক্রসওয়াক কমিউনিকেশনস লিমিটেড। এবারের বই মেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। শেখ রাসেল শিশু চত্বর, বঙ্গমাতা চত্বর, বঙ্গবন্ধু চত্বর। এছাড়া বাংলা একাডেমি অংশকে চিত্তরঞ্জন সাহা চত্বরে নামকরণ করা হয়। 

বিচ্ছিন্ন ঘটনা 
এবারের মেলায় আদর্শ প্রকাশনীকে বিতর্কিত বই ছাপানোর দায়ে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। তা নিয়ে আদালতের আদেশ এবং বিশিষ্টজনদের প্রতিক্রিয়ায় প্রশ্ন উঠেছিল বাংলা একাডেমির ভূমিকা নিয়ে। বাংলা একাডেমি ফাহাম আব্দুস সালামের লেখা ‘বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে’, লেখক জিয়া হাসানের ‘উন্নয়ন বিভ্রম’ এবং লেখক ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের ‘অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের অভাবনীয় কথামালা’ বই নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আদর্শকে স্টল বরাদ্দ দেয়নি। এছাড়া, বেশ কিছু লেখকের বই নিষিদ্ধ এবং শেষদিকে বোমা হামলার হুমকি কিছুটা নিষ্প্রভ করে বইমেলার চলতি আসরকে।


বিজ্ঞাপন


সমাপনী অনুষ্ঠান 
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় অমর একুশে বই মেলার সমাপনী অনুষ্ঠান। এতে শুভেচ্ছা ভাষণ দেন একাডেমির মহা পরিচালক কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদা। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন 'অমর একুশে বইমেলা ২০২৩' -এর সদস্য সচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বাংলা একাডেমির সচিব এ. এইচ এম. লোকমান। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।

 

গুণীজন স্মৃতি পুরষ্কার 
আজ  অমর একুশে বইমেলা ২০২০-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে ২০২২ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক বই প্রকাশের জন্য 'আগামী প্রকাশনী' -কে 'চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০২৩' প্রদান করা হয়। ২০২২ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে শৈল্পিক ও গুণমান বিচারে সেরা বই বিভাগে আহমদ রফিক রচিত বিচ্ছিন্ন ভাবনা প্রকাশের জন্য 'জার্নিম্যান বুকস,'  মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ রচিত বাংলা একাডেমি আমার বাংলা একাডেমি বইয়ের জন্য ঐতিহ্য এবং হাবিবুর রহমান রচিত ঠার বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষা প্রকাশের জন্য 'পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.'-কে 'মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২০' প্রদান করা হয়। ২০২২ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ বইয়ের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য 'ময়ূরপঙ্খি' -কে 'রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০২৩' প্রদান করা হয়।

২০২৩ সালের অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে 'পুথিনিলয়' (প্যাভিলিয়ন), 'নবান্ন প্রকাশনী' (২-৪ ইউনিট), 'উড়কি' (১ ইউনিট) -কে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৩ প্রদান করা হয়।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর