অমর একুশে বইমেলার ২২তম দিনে ৬৪টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। এরমধ্যে সর্বোচ্চ ১৮টি কবিতার বই ছাড়াও ১১টি উপন্যাস ও ৪টি গল্পসহ বিভিন্ন বিষয়ের বই রয়েছে।
বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বাংলা একাডেমি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। এ দিন বেলা ৩টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলমান ছিল।
বিজ্ঞাপন
কবিতা, গল্প, উপন্যাস ছাড়াও এই সময়ে প্রকাশিত অন্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে একটি প্রবন্ধ, একটি গবেষণা, তিনটি ছড়া ছাড়াও দুটি জীবনী।
এর আগে মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক তিনটি, বিজ্ঞান বিষয়ক একটি, ভ্রমণ বিষয়ক দুটি, ইতিহাস বিষয়ক দুটি, রাজনীতি বিষয়ক তিনটি, চিকিৎসা বা স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি, রম্য বা ধাঁধা বিষয়ক একটি, ধর্মীয় দুটি ও সায়েন্স ফিকশন বিষয়ক দুটি ছাড়াও অন্যান্য আরও ৪টি বই প্রকাশ হয়েছে।
এদিকে, অমর একুশে বইমেলার ২২তম দিনে নিজেদের বই নিয়ে ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন রফিকুর রশীদ, আহমাদ মাযহার, অদ্বৈত মারুত এবং মামুন খান। পাশাপাশি অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কামাল চৌধুরী, মুহাম্মদ সামাদ, কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়, শাহজাদী আঞ্জুমান আরা, আহমেদ জসিম, নাজমা আহমেদ, আ র ম বাকীবিল্লাহ, চঞ্চল আখতার, নাজমুল হুসাইন, আরেফিন রব। সেই সঙ্গে আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী কাজী রোমানা আহমেদ সোমা, মাসুদুজ্জামান, আন্জুমান আরা, রশিদ কামাল।
এছাড়াও ছিল মাসুম হুসাইনের পরিচালনায় নৃত্য ‘পরম্পরা নৃত্যালয়’, কোহিনূর রহমান শিল্পীর পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘আনন্দ নিকেতন সংগীতালয়’-এর পরিবেশনা। পাশাপাশি অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী মোস্তাফিজুর রহমান, সালমা মোস্তাফিজ, ফারুক নূরী, এ টি এম গোলাম মোস্তফা, আমিরুল ইসলাম, মজিবুর রহমান বিরহী, রীতা ভাঁদুরী, আমর হাওলাদার বাবুল। আর নৃত্য পরিবেশন করবেন সাকিবুল ইসলাম। সেই সঙ্গে যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন তুলসী সাহা (তবলা), শাহীনুর রহমান (কি-বোর্ড), মো. হাসান আলী (বাঁশি) এবং অরূপ কুমার শীল (দোতারা)।
বিজ্ঞাপন
এর আগে বুধবার বিকেল ৪টায় মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় জন্মশতবর্ষে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতা ও ছড়া এবং জন্মশতবর্ষে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত লোকায়ত সাহিত্য শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মতিন রায়হান ও সুমনকুমার দাশ। পাশাপাশি আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন তপন বাগচী, মোস্তাক আহমাদ দীন এবং অনুপম হীরা মণ্ডল। এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কামাল চৌধুরী।
আলোচনায় প্রাবন্ধিকরা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে দেশে ও বিদেশে অগণিত কবিতা ও ছড়া লেখা হয়েছে। তার দূরদর্শী নেতৃত্ব যেমন কবিতা ও ছড়ার উপজীব্য হয়েছে, তেমনি এই মহান নেতার সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনাও সংবেদনশীল কবি ও ছড়াকারদের ভীষণ মর্মাহত করেছে। এর ফলেও রচিত হয়েছে অসংখ্য মর্মস্পর্শী কবিতা ও ছড়া।
বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শত সংকট-অবিচারে কখনোই মনোবল হারাননি বরং দৃপ্ত পায়ে হেঁটেছেন কোটি মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে। দেশের বিভিন্ন স্থানের অসংখ্য সাধক কবি বঙ্গবন্ধুর বীরত্ব নিয়ে লোকসংগীত, পুথি, জারি, ভাটকবিতা ও যাত্রাপালাসহ লোকায়ত ধারার নানা পর্যায়ের সাহিত্য রচনা করেছেন তিনি।
আলোচকরা আরও বলেন, জন্মশতবর্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিবেদিত অসংখ্য কবিতা ও ছড়ায় মিশে আছে এ মহান, দেশপ্রেমিক নেতার প্রতি কবি ও ছড়াকারদের আবেগ ও শ্রদ্ধা। এসব ছড়া ও কবিতা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে পত্র-পত্রিকার পাতায় ও নিবেদিত ছড়া সংকলনগুলোতে। অন্যদিকে, বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় যেমন তাঁকে নিয়ে অনেক লোকসাহিত্য রচিত হয়েছে, তেমনি জন্মশতবর্ষেও রচিত হয়েছে পালাগান, ধুয়া গান এবং যাত্রাপালা। বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত এসব লোকসাহিত্য গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছে। সবমিলিয়ে এসব লোকসাহিত্য, ছড়া ও কবিতা আমাদের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ।
এছাড়া সভাপতির বক্তব্যে কামাল চৌধুরী বলেন, পৃথিবীতে বহু মহান নেতা এসেছেন, যারা নিজেদের জাতিকে উজ্জীবিত করেছেন। কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে যত কবিতা, ছড়া বা লোকসাহিত্য রচিত হয়েছে, তা আর কোনো নেতাকে নিয়ে হয়েছে কি-না সে-প্রশ্ন আমাদের মনে জাগতেই পারে। বঙ্গবন্ধু এমন একজন নেতা যাকে নিয়ে ভবিষ্যতেও অসংখ্য সাহিত্য রচিত হবে এবং তার অসামান্য কীর্তি আমাদের সামনে চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।
এমএইচ/আইএইচ