বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

কাগজের মূল্যবৃদ্ধি: বইমেলা নিয়ে ‘দুশ্চিন্তায়’ প্রকাশক-লেখক

পিয়াস সরকার
প্রকাশিত: ১৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:২৬ এএম

শেয়ার করুন:

কাগজের মূল্যবৃদ্ধি: বইমেলা নিয়ে ‘দুশ্চিন্তায়’ প্রকাশক-লেখক
ফাইল ছবি

আর মাত্র কয়েকদিন পরই শুরু হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা। শেষ সময়ে প্রকাশকদের ব্যস্ততা তুঙ্গে। তবে এবারের চিত্র খানিকটা ভিন্ন। কাগজের মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপক প্রভাব পড়েছে বইমেলার প্রস্তুতিতে। মেলায় বইয়ের দাম বাড়বে গতবারের চেয়ে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। তার প্রভাব পড়বে বইয়ের বিক্রিতে। ফলে বইমেলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন প্রকাশক ও লেখকরা।

কাগজের দাম গত দশ মাসে বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। চৈতী প্রিন্টিং প্রেসের মালিক ইব্রাহিম হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার প্রেসে চারটি প্রকাশনীর ১৭টি বই ছাপানো হচ্ছে। এবার আমাদের খরচ বেড়ে গেছে অনেক। তাই বই ছাপানো হচ্ছে কম। বইমেলার আগে অন্য বছরগুলোতে আমাদের বাড়তি লোক নিতে হয়। এবার বাড়তি লোক নেয়ার প্রয়োজনই হয় নাই। এই সময়ে আমরা রিম রিম কাগজ আনি। এবারের সেই ব্যস্ততা নাই।


বিজ্ঞাপন


জ্ঞান বিকাশ প্রেসের মালিক বলেন, অনেক লেখক থাকেন যারা শুধুমাত্র বইমেলায় অংশ নেওয়ার জন্যই বই লেখেন। তারা সাধারণত গড়ে ৫০ থেকে ২০০ কপি বই বের করেন। কিন্তু এবারে দেখছি এই সংখ্যা নেমে এসেছে গড়ে ১০০ এর ঘরে। আবার যারা ১০০-১৫০ কপি বই বের করেন তারা এবার ১০০ কপির কম বই ছাপাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, অনেক বই যেগুলো আগে হয়তো ২০০ পৃষ্ঠার হতো সেগুলো এবার লেখা ছোট করে বা শূন্যস্থান পূরণ করে ২০-৩০ পৃষ্ঠা কমানো হচ্ছে।

কিংবদন্তি পাবলিকেশনের প্রকাশক অঞ্জন হাসান পবন বলেন, বই সংশ্লিষ্ট সব খরচই বেড়ে গেছে। তাই বইমেলায় এবার নতুন বই কম আসার পাশাপাশি খরচও বাড়বে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শায়ন শাহরিয়ার। এবারের বইমেলায় প্রকাশিত হবে তার পাঁচটি দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা বই। তিনি বলেন, এটা আমার প্রথম বই। বইয়ের দাম ধরা হয়েছে ৪৫০ টাকা। আমি মনে করি, এটা একজন পাঠকের জন্য অনেক বেশি। নিজে থেকে ভর্তুকি দিয়ে দাম কমানোর অনুরোধ করেছিলাম কিন্তু প্রকাশক রাজি হননি।


বিজ্ঞাপন


এসব বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল পাল বলেন, একাডেমিক বইয়ে প্রতি ফর্মার দাম ২৭ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছি, অন্তত তিন মাস শুল্কমুক্ত কাগজ আমদানির সুযোগ দিতে। এমন না যে কাগজ আমদানিতে অনেক বেশি ডলার প্রয়োজন। তবে শুল্ক বেশি থাকা ও এলসি না করতে পারার কারণে সঙ্কট বেশি হচ্ছে।

সাইফুল ইসলাম নামে একজন প্রকাশক শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এবারের বইমেলায় বইয়ের দাম বাড়বে এটা নিশ্চিত। পাঠকরা এটাকে কিভাবে নেবেন তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।

তিনি আরও বলেন, আমরা মেলা উপলক্ষ্যে খুব কম বই ছাপাচ্ছি। বেশি দামে কাগজ কিনে আমরা যদি বই ছাপাইও, সেটা আসলে পাঠক কিনতে পারবে না।

আগামী বইমেলা নিয়ে ক্রেতাদের ভাবনাও খুব একটা ইতিবাচক নয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসিবুল হাসান বলেন, আমি গত চার-পাঁচ বছর ধরে বইমেলায় যাই। সাধ্যমতো বইও কিনি। গতবারও বইমেলায় ৭-৮টি বই কিনি। কিন্তু এবার কয়টি বই কিনতে পারব জানি না। আর এবারের বইমেলা তো প্রায় এসে পড়েছে। কিন্তু নতুন বইয়ের প্রচার খুব একটা দেখছি না।

লেখক অরবিন্দ দেবনাথের উপন্যাস 'কলা পাতায় ঢেউ' প্রকাশিত হচ্ছে এবারের বইমেলায়। তিনি বেশ উচ্ছ্বসিত বইটি নিয়ে। অরবিন্দ বলেন, এটা আমার দ্বিতীয় বই। প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৯ সালে। প্রথম বইয়ে খুব একটা সাড়া মেলেনি। কিন্তু আমার বিশ্বাস এবারের বই অনেক মানসম্মত। পাঠকের পছন্দ হবে। কিন্তু বাড়তি মূল্যের কারণে আমার মতো অখ্যাত লেখকের বই পাঠকরা কিনবেন কিনা তা নিয়ে সন্দিহান।

পিএস/জেএম/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর