সপ্তাহখানেক আগেই শুরু হয়েছে অমর একুশে বইমেলা। এরই মধ্যে দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত মেলা প্রাঙ্গণ। যদিও প্রকাশকদের ভাষ্য- ক্রেতারা যে হারে বই কিনছেন, তার চেয়ে দোকানে ভিড় করছেন বেশি। তবে এসবের মাঝেও বরাবরের মতোই পাঠকপ্রিয়তায় রয়েছে প্রয়াত লেখক হুমায়ূন আহমেদের বই। স্টলে স্টলে ঘুরে পছন্দের লেখকের বই খুঁজছেন হুমায়ূনভক্তরা।
মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে মেলা ঘুরে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। অধিকাংশই ঘুরে ঘুরে দেখছেন মেলা প্রাঙ্গণ। এ সময় ‘অন্য প্রকাশ’ থেকে হিমু সমগ্র কিনতে দেখা যায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফসান সানিকে।
বিজ্ঞাপন
কারণ জিজ্ঞেস করতেই ঢাকা মেইলকে বলেন, আগামীকাল বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) আমার এক বন্ধুর জন্মদিন। জন্মদিনের উপহার দেওয়ার জন্যই বইটা কিনলাম।
তবে এত বই থাকতে হিমু সমগ্রই কেন বেছে নিলেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমার বন্ধুটির বই পড়ার অভ্যাস একদম নেই। তাই আমার মতে হিমু সমগ্রই তার জন্য উপযুক্ত বই। আমার ধারণা, এই বই পড়লে তার বইয়ের প্রতি নেশা জন্মাবেই।
আরেক প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এই শিক্ষার্থী বলেন, অনেক লেখকেরই তো বই আছে। তবে আমি পড়ে যেটা মজা পেয়েছি, সেটাইতো উপহার দেব।
শুধু সানিই নন, মেলায় আসা অনেকেই খুঁজে খুঁজে সংগ্রহ করছেন হুমায়ূন আহমেদের বই। সঙ্গে অন্যান্য লেখকের বইও কিনছেন কেউ কেউ।
বিজ্ঞাপন
ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী স্মিতা দেবনাথ। বইমেলায় এক মাসের জন্য চাকরি করছেন অন্য প্রকাশে। কথা হলে তিনি বলেন, ক্রেতারা আসছেন তবে দেখছেন বেশি। এরমধ্যে আমাদের স্টলে সবথেকে বেশি বিক্রি হচ্ছে হুমায়ূন আহমেদের বই। এ সময় স্টলটিতে হুমায়ূন আহমেদের চন্দ্রসখা, নির্বাসন, তন্দ্রাবিলাস, দশজন, সে ও নর্তকীসহ বেশ কয়েকটি বই বিক্রি হতে দেখা যায়।
মিসির আলীর ভুবনের ক্রেতা আদিত্য রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি মিসির আলী আগেই পড়েছি। সংগ্রহে রাখবার জন্যই বইটি কিনলাম।
এছাড়া মঙ্গলবার মেলায় ঘুরে ঘুরে ইতিহাসের বই কিনছিলেন আব্দুর রাজ্জাক বিশ্বাস। এ বিষয়ে ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, আমি ইতিহাসের শিক্ষার্থী। বর্তমানে গার্মেন্টস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তবে ইতিহাসের একটা সংগ্রহশালা তৈরি করতে চাই। ইতিহাস নিয়ে আমাদের দেশে লেখা খুবই কম। যা আছে তা সেই ঘুরেফিরে একই ইতিহাস। আমি ঘুরছি সমৃদ্ধ ইতিহাসের বইয়ের জন্য।
এদিকে, মঙ্গলবার বইমেলায় প্রথমা প্রকাশন, ঐতিহ্য প্রকাশন, কথা প্রকাশ, কাকলী প্রকাশনী ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ, অনুপম প্রকাশনী, পাঞ্জেরী- এসব দোকানে ক্রেতাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে ক্রেতার থেকে দর্শনার্থীর সংখ্যাই ছিল বেশি। এ দিন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আটজন শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে গ্রন্থমেলায় আসতে দেখা যায়। যাদের বই দেখার চেয়ে খুনসুটি ও সেলফি তোলায় মত্ত থাকতে দেখা যায়। কথা হলে রাকিব হাসান নামে তাদের একজন বলেন, আজ বন্ধুরা মিলে মূলত মেলায় ঘুরতেই এসেছি। এছাড়া নাবিলা আক্তার নামে আরেকজন বলেন, আজ বই দেখছি, পরে এসে কিনব।
অন্যদিকে, নিরাপত্তার স্বার্থে মেলার প্রবেশপথে পুলিশ সদস্যরা পকেট ও ব্যাগ ছাড়াও মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে দেহ তল্লাশি করছেন। এ ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলা দর্শনার্থীদের জন্য আছে পৃথক লাইন। পাশাপাশি মেলার ভেতরে দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য খাবার পানি ও পরিষ্কার টয়লেটের ব্যবস্থাও রয়েছে। এছাড়া প্রতিবন্ধীদের জন্য রাখা হয়েছে হুইল চেয়ারের সুবিধাও। তবে মেলা প্রাঙ্গণে ধুলার রাজত্ব বেশ লক্ষণীয়।
পিএস/আইএইচ