সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

নিউমার্কেটে সংঘর্ষ: যা বলছে বিরোধী দলগুলো

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
প্রকাশিত: ১৯ এপ্রিল ২০২২, ০৫:৫৯ পিএম

শেয়ার করুন:

নিউমার্কেটে সংঘর্ষ: যা বলছে বিরোধী দলগুলো
থমথমে নিউমার্কেটের পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা মেইলের সঙ্গে কথা বলেছেন কয়েকজন বিরোধী দলীয় নেতা | ছবি: ঢাকা মেইল

রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় প্রশাসন তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবহেলা রয়েছে বলে দাবি করছেন বিরোধী দলের নেতারা। তাদের অনেকেই বলছেন, রাত থেকে শুরু করে দীর্ঘসময় চলা এই সংঘর্ষের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, সরকার বিরোধী দল দমনে যতটা তৎপর সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষায় ততোটা তৎপর না।

মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) থমথমে নিউমার্কেটের পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা মেইলের সঙ্গে কথা হয় কয়েকজন বিরোধী দলীয় নেতার। এ সময় তারা এই সংঘাতময় পরিস্থিতির দ্রুত অবসানের দাবি জানান।


বিজ্ঞাপন


নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘নিউমার্কেটে গতরাত থেকে একটা সংঘর্ষ চলছে। এটা আসলে খুবই দুঃখজনক। পবিত্র মাহে রমজান মাস ও ঈদের আগে এটা কখনোই কাম্য নয়।’

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এ সংঘর্ষের ঘটনায় একটা বিষয় বুঝা গেল যে, এখানে তো সরকারি দলের ছাত্ররাও যুক্ত আছে। পুলিশ তাদের ওপরই গুলি চালিয়েছে। তার মানে বোঝা যাচ্ছে, পুলিশ এত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে যে পুলিশও ছাত্রলীগের ওপর গুলি চালাচ্ছে। মানুষ যেমন বলে- মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে আল্লাহও তাদেরকে ক্ষমা করেন না। বিষয়টাতে সেরকম পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে। রাত শুরু হওয়া সংঘর্ষ এখনও (দুপুর ২টা) চলতেছে, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। এর দ্রুত মীমাংসা হওয়া দরকার।’

এদিকে, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমম্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এত সময় পরেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন এটা বন্ধ করতে পারছে না! আমার মনে হয় যারা দোকান মালিক সমিতির প্রতিনিধি আছেন, ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি আছেন এবং কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদেরকে বিষয়টা কথা বলে মিউচ্যুয়ালে আসা উচিৎ। বিষয়টা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা উচিৎ।’

জোনায়েদ সাকি বলেন, এ ঘটনায় তো জানমালের ক্ষতি হচ্ছে অনেক। তারপরেও ঈদের সময়। ব্যবসায়ীদের একটা মোক্ষম সময়। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই ধরনের ঘটনাগুলো যে ঘটে, নিউমার্কেটের ঘটনায় প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত হস্তক্ষেপ মানুষ আশা করেছিল, দুপুর পর্যন্ত এই সংঘাত চলার অর্থ হচ্ছে, তারা কেউ সঠিক ভূমিকা পালন করেননি। আসলে সরকার বিরোধীদল দমনে যত তৎপর থাকে, সাধারণ মানুষের জান-মালের নিরাপত্তায় ততটা তৎপর থাকে না।


বিজ্ঞাপন


এদিকে, সংঘর্ষের বিষয়ে ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর বলেন, নিউমার্কেটে দোকানদার ও হকারদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সময় সংঘর্ষ হয়, এটা খুব দুঃখজনক। এই সংঘর্ষগুলো দেখা যায় সামান্য বাকবিতণ্ডা থেকে শুরু হয়।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুলিশের খুব অতিউৎসাহী ভূমিকা দেখা যায় উল্লেখ করে নুরুল হক নুর বলেন, ‘এটা আসলে খুব দুঃখজনক। যেখানে দোকানদার ও ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষ সেখানে পুলিশ একটা নিরপেক্ষ ভূমিকা নিতে পারে। আমি রাতে যেটা দেখেছি, পুলিশের যে ভূমিকা ছিল, সেটা ছাত্রদের ওপর চরম আক্রমণাত্মক ছিল। আমার জানামতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত। দু-একজনকে দেখলাম রাবার বুলেটের আঘাতে ঝাঁজরা করে ফেলেছে শরীর। পুলিশের এই ধরনের ভূমিকা সংঘাতকে আরও উস্কে দেয়। তাদের আরও দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিৎ ছিল।’

অন্যদিকে মাহে রমজানের পবিত্রতা ভেঙে যারা সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। তিনি নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী ও ছাত্রদের সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করতে যাওয়া গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনারও তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে বলেন, সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে গণমাধ্যম কর্মীরা বারবার হামলার শিকার হচ্ছেন, এর চেয়ে লজ্জাজনক ঘটনা আর হতে পারে না।

রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় সহসাই মার্কেট খোলা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সোমবার (১৮ এপ্রিল) দিবাগত রাত থেকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষ মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত চলছে। কখন পরিস্থিতি শান্ত হবে তা কেউ বলতে পারছে না। কবে খুলবে  দোকানপাট তাও জানে না কেউ। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাঠে রয়েছে পুলিশ।

এর আগে গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ‘কথা-কাটাকাটির জেরে’ ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০-১২ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে তিন শিক্ষার্থীর গায়ে, বুকে ও মাথায় গুলি লেগেছে। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের ছোড়া ইটপাটকেলে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

ওই সংঘর্ষের সময় মিরপুর সড়কটি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ঘটনার পুরো সময়ে এই সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। এমনকি সংঘর্ষ চলাকালে গোটা এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

Newmarket

এদিকে, মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা একত্রে জড়ো হতে শুরু করে। এরপর বেলা সাড়ে ১০টার দিকে শিক্ষার্থী হামলার বিচারের দাবিতে তারা স্লোগান দেয়। এ সময় আবারও শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ ঘটনায় পর থেকে নিউমার্কেট ও এর আশেপাশের এলাকার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আশেপাশের সড়কগুলোতে তীব্র যানজট শুরু হয়। যার ফলে মঙ্গলবার সকাল থেকেই রাজধানীতে তীব্র যানজট দেখা দেয়। দফায় দফায় সংঘর্ষের ফলে এই এলাকায় থাকা বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা, উপশাখা ও এটিএম বুথসহ সব ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এছাড়া সায়েন্সল্যাব থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত সব ধরনের দোকানপাটও বন্ধ রয়েছে। সেই সঙ্গে ওই এলাকার সড়কে যান চলাচলও বন্ধ রয়েছে।

Clush

অন্যদিকে, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সংঘর্ষের একপর্যায়ে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা চন্দ্রিমা মার্কেটে আগুন দেয়। তবে দ্রুতই ব্যবসায়ীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সর্বশেষ ওই এলাকায় এখনও থমথমে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আগামী ৫ মে পর্যন্ত ঢাকা কলেজের সব হল বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। আজ মঙ্গলবার বিকালের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে বলা হয়েছে। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ. টি. এম. মইনুল হোসেনের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ থেকে ৫ মে (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত ঢাকা কলেজের হলসমূহ বন্ধ ঘোষণা করা হলো। এছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে আজ বিকেলের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের হল ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

টিএই/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর