সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ী সংঘর্ষে চার ঘণ্টা রণক্ষেত্র নিউ মার্কেট

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৯ এপ্রিল ২০২২, ০৪:২৭ এএম

শেয়ার করুন:

শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ী সংঘর্ষে চার ঘণ্টা রণক্ষেত্র নিউ মার্কেট

প্রায় চার ঘণ্টা পর ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত আটজন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে তিন শিক্ষার্থীর গায়ে, বুকে ও মাথায় গুলি লেগেছে। অন্য দিকে শিক্ষার্থীদের ছোড়া ইটপাটকেলে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।  

এ ঘটনায় মিরপুর সড়কটি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ঘটনার পুরো সময়ে এই সড়কে সবধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। সংঘর্ষ চলাকালে গোটা এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।


বিজ্ঞাপন


সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টায় ঘটনার সূত্রপাত হলেও ভোররাত সাড়ে তিনটার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে ক্যাম্পাসে ফেরাতে সক্ষম হয়েছেন ঢাকা কলেজের প্রিন্সিপাল।

পুলিশ, ঢাকা কলেজ সূত্র ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা কলেজের তিন ছাত্রলীগ নেতা নিউ মার্কেটে একটি রেস্টুরেন্টে খেতে যান। খাওয়ার পর তারা বিল না দিয়ে সেখান থেকে উঠে আসার চেষ্টা করেন। এসময় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাদের তর্কাতর্কি এবং ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে ওই দোকানিকে মারধর করেনে তিন ছাত্রলীগ নেতা। এরপর ব্যবসায়ীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের মারধর করেন। পরে ওই তিন শিক্ষার্থী ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে ফিরে যান এবং তাদের সহপাঠীদের নিয়ে এসে ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা চালান।  

এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে দাঙ্গা পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে পুলিশ, ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ শুরু হয়। 

n2


বিজ্ঞাপন


এক পর্যায়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঢাকা কলেজের সামনে সাঁজোয়া যান নিয়ে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে থাকে। অন্যদিকে চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট নিউমার্কেট এলাকায় অবস্থান নেন ব্যবসায়ীরা। এরই মাঝে রাত দেড়টার দিকে ব্যবসায়ীদের এক কর্মীকে ধরে নিয়ে আসেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে তাকে মারধর করে তারা ছেড়ে দেন। 

এদিকে পুলিশের উপস্থিতিতে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রিন্সিপালকে অবরুদ্ধ করে রাখে। তারা বিষয়টি সমাধানের জন্য প্রিন্সিপালকে চাপ দেন। এসময় রমনা জোনের ডিসি সাজ্জাদ হোসেন ছাড়াও পুলিশের স্থানীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

এক পর্যায়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দফায় দফায় টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করতে থাকে। ঢাকা কলেজের সামনে সাঁজোয়া যান থেকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশে টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও রাবার বুলেট মারার প্রতিবাদে রাত আড়াইটার দিকে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে পড়েন। এসময় তারা বিক্ষোভ করতে থাকেন। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশের ছোড়া ছররা গুলিতে ঢাকা কলেজের তিন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে একজনের নাম মুরসালিন বলে জানা গেছে। বাকি দুজনের নাম পাওয়া যায়নি। 

অন্যদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইলে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা হল ছাড়াও বিভিন্ন ভবন থেকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করে। এতে পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন। 

নিউমার্কেট জোনের এডিসি হারুন অর রশীদ গণমাধ্যমকে বলেন, সংঘর্ষের শুরুর পর থেকেই আমরা এখানে রয়েছি।  দুই পক্ষই ইটপাটকেল ছোড়ে এবং পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেছে আমাদের পুলিশের সদস্যরা। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে চলে গেছেন এবং ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেতরে ঢুকে গেছেন। শিক্ষার্থীরা পুলিশের ওপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করেছেন। পুলিশ শুধু তাদের শান্ত করার জন্য টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে। 

n3

এ ঘটনায় কোনো মামলা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলা হবে কি না এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 

তিনি জানান, এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কয়েকটি যানবাহন ও দোকানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা। 

এমআইকে/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর