সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

গ্রেফতার আতঙ্কে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ২৬ এপ্রিল ২০২২, ০৭:৫৮ পিএম

শেয়ার করুন:

গ্রেফতার আতঙ্কে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। কলেজটির সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও আতঙ্কে আছেন। কে কখন কোথা থেকে গ্রেফতার হন সবসময় এমন শঙ্কায় রয়েছে শিক্ষার্থীরা।

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ২১ এপ্রিল ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেট ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনার সময় নাহিদ হাসান নামে এক যুবক আহত হন। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।


বিজ্ঞাপন


নাহিদের ওপর যারা হামলা করেছিল তাদের সবার মাথায় হেলমেট ছিল। কিন্তু ওই সময়ে কোনো এক ব্যক্তির ধারণ করা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে হামলাকারীদের পরিচয় প্রকাশ পায়। গণমাধ্যম ধরে ধরে সব হামলাকারীর পরিচয় প্রকাশ করে। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের গ্রেফতারে তৎপরতা শুরু করলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

ঢাকা কলেজের একটি সূত্র জানায়, গত ২৪ এপ্রিল বিকেলে ঢাকা কলেজের আন্তর্জাতিক হলে প্রবেশ করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসময় তারা ভিডিও ফুটেজ দেখে ডেলিভারিম্যান নাহিদ হাসান হত্যায় জড়িত নাঈম নামে একজনকে শনাক্ত করে। পরে তার ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করে নিয়ে যায় পুলিশ। এছাড়া ওই সময় ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জহির হাসান জুয়েলকে আটক করা হয়। যদিও রাতেই ওই ছাত্রলীগ নেতাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এছাড়াও কয়েকটি হল ও ঢাকা কলেজের আশপাশে থাকা কয়েকটি ছাত্রাবাসে অভিযান চালায় পুলিশ।

এসব অভিযান ছাড়াও ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগের চার নেতাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায় থেকে। যদিও তারা প্রকাশ্যে কিছুই বলছে না। তবে পুলিশ, র‌্যাব কেউই বিষয়টি স্বীকার করেনি। ‍পুলিশি তৎপরতার পর থেকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

বিশেষ করে ঘটনার দিন যারা সরাসরি হামলায় অংশ নিয়েছিল এবং বিভিন্ন ফুটেছে যাদের ছবি এসেছে তারা বেশি আতঙ্কে রয়েছেন। অনেকে বিভিন্ন মেস বা বাসাবাড়িতে অবস্থান করলেও ভয়ে বেরোচ্ছেন না। অনেকে আবার গা ঢাকা দিয়েছেন।


বিজ্ঞাপন


নাম প্রকাশ না করা শর্তে ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, ‘আমরা তো খুব আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। রাত হলেই ভয় লাগে। কখন হলে পুলিশ আসে। যদিও আমরা সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনের কর্মী তারপরও এ ঘটনায় ভয়ে আছি। এতো ভয় হতো না যদি হামলার ফুটেজ না থাকতো এবং হামলাকারীদের পরিচয় শনাক্ত না হতো।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, ঈদের ছুটির কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাড়ি গেছেন। কিন্তু পার্টটাইম কাজ করায় তিনি ঢাকায় থাকায় কলেজে ছুটি হলেও বাড়ি যেতে পারছেন না। তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর থেকেই আতঙ্কে আছি। কখন পুলিশ ধরে নিয়ে সবসময় এই আতঙ্ক কাজ করছে।

গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি আজিমুল হক ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘গ্রেফতার সংক্রান্ত কোনো সংবাদ নাই। কাউকে ধরা হয় নাই। ঘটনার তদন্ত ও দোষীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’

ইফতারের টেবিল বসানো নিয়ে গত ১৮ এপ্রিল নিউমার্কেটের দুই দোকানের কর্মীদের তর্কাতর্কির পর এক পক্ষ ঢাকা কলেজ ছাত্রাবাস থেকে ছাত্রলীগের কয়েক কর্মীকে ডেকে আনে। তারা গিয়ে মারধরের শিকার হওয়ার পর ছাত্রাবাসে ফিরে আরও শিক্ষার্থীদের নিয়ে মধ্যরাতে নিউমার্কেটে হামলা চালাতে গেলে বাধে সংঘর্ষ।

পরদিন দিনভর চলা এই সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন। তাদের মধ্যে এলিফ্যান্ট রোডের একটি কম্পিউটার এক্সেসরিজের দোকানের ডেলিভারিম্যান নাহিদকে কুপিয়ে জখম করা হয়। আর ইটের আঘাতে আহত হন মোরসালিন নামে এক দোকানকর্মী। পরে হাসপাতালে মারা যান দুজনই।

দুজনের মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে দুটি হত্যা মামলা করা হয়। সংঘর্ষ ও বোমাবাজির ঘটনায় আলাদা দু’টি মামলা করেছে পুলিশ। এছাড়া সহিংসতার সময় অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুরের ঘটনায় যানটির মালিক একটি মামলা করেছেন। সবমিলিয়ে পাঁচ মামলায় আসামি করা হয়েছে দেড় হাজারের বেশি। ইতোমধ্যে বিএনপি এক নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এমআইকে/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর