পৃথিবীর বয়স বেড়ে গেলো আরও এক বছর। গত এক বছরে বিশ্বে সংঘটিত হয়েছে নানান ঘটনা। কোনোটা নিন্দা কুড়িয়েছে আবার কোনোটা ভেসেছে প্রশংসায়। অনেক বিশ্বনেতাও ছিলেন আলোচনায়। বছরজুড়ে যারা বিভিন্ন কারণে আলোচনায় ছিলেন তাদের কয়েকজন সম্পর্কে এখানে তথ্য তুলে ধরা হলো-
ভ্লাদিমির পুতিন
বিজ্ঞাপন
সব আশঙ্কা সত্যি করে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা চালানোর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সে সময় ইউক্রেনের রুশ সীমান্ত সংলগ্ন চার অঞ্চলের স্বাধীনতারও ঘোষণা দেন তিনি। এরপর থেকে রুশ ও ইউক্রেনীয় বাহিনীর মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে।
শুরুতে স্থলে তীব্র লড়াই চলে। দুই পক্ষের সেনারা মুখোমুখি অবস্থান নেয়। কখনও রাশিয়া জয় পায়, আবার কখনও ইউক্রেন সফল হওয়ার দাবি করে। শেষ পর্যন্ত স্থলপথে লড়াই কমিয়ে ড্রোন ও রকেট দিয়ে হামলা শুরু করে রাশিয়া। ইউক্রেনে হামলার কারণে পশ্চিমাদের ব্যাপক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হয়েছে রাশিয়া ও পুতিনকে।
তবে রুশ প্রেসিডেন্ট পশ্চিমাদের সব নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এগিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। যুদ্ধের শুরু থেকেই কৌশল পাল্টে পশ্চিমাদেরই হুমকি দিয়েছেন তিনি। ইউক্রেনে হামলা, পশ্চিমাদের সঙ্গে কথার লড়াইয়ে সারা বছরই আলোচনায় ছিলেন এই রুশ রাষ্ট্রনায়ক।
ভলোদিমির জেলেনস্কি
বিজ্ঞাপন
সারা বছর বিশ্বের যে নেতার ছবি মানুষ বেশি দেখেছে এবং যাকে নিয়ে অনেক আলোচনা করেছে, তিনি হলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করার পর থেকেই বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসেন তিনি। রুশ আক্রমণ প্রতিরোধ ও ইউক্রেনীয়দের জন্য জেলেনস্কির নিরন্তর প্রচেষ্টা বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়।
এক সময়ের কমেডি অভিনেতা জেলেনস্কি অনেকটা ভাগ্যক্রমে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হয়ে যান। তবে রুশ আক্রমণের পর তিনি প্রকৃত নেতার পরিচয় দিয়েছেন। মুহুর্মুহু আক্রমণের মুখেও রাজধানী কিয়েভ ছাড়েননি জেলেনস্কি। কার্যালয়ে বসেই বিশ্বনেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলেছেন। বলা হচ্ছে যে ইউক্রেনের জন্য পশ্চিমা বিশ্ব যতটা করছে, তাতে জেলেনস্কির অবদান আছে।
ইমরান খান
অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট নিয়ে এমনিতেই চাপের মধ্যে ছিলেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। চলতি বছরের এপ্রিলে সেই সংকট বাড়লে বিরোধীদের চেষ্টায় প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকেও অপসারিত হন তিনি। তারপর থেকেই ইমরান খান রয়েছেন আলোচনায়। ক্ষমতা হারিয়ে আগাম নির্বাচনের দাবিতে দেশজুড়ে একের পর এক সমাবেশ করে চলেছেন সাবেক এই ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক।
এমন অবস্থার মধ্যে যখন শাহবাজ শরিফের সরকার চাপের মুখে পড়ে তখন হঠাৎ এক সমাবেশে বক্তৃতা দেওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হন ইমরান খান। বন্দুকধারী বেশ কয়েকটি গুলি চালায় এবং তা ইমরানের পায়ে লাগে। জীবন রক্ষা পেলেও গুরুতর আহত হন তিনি। এখনও ঠিকভাবে সেরে ওঠেননি পিটিআই প্রধান।
জো বাইডেন
স্বভাবতই বিশ্ব রাজনীতির কেন্দ্রে থাকেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালও ব্যস্ততায় কেটেছে জো বাইডেনের। কোভিড পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মহাসংকট তৈরি হয়েছে। এর থেকে উত্তরণে ও জ্বালানি ব্যবস্থার ঘাটতি মেটাতে ঘাম ঝরাতে হচ্ছে বাইডেনকে। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সফর করেও কোনো ফল মেলেনি। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন বাইডেন। এছাড়া ইউক্রেন ইস্যুতেও পশ্চিমাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বয়ষ্ক এই প্রেসিডেন্ট।
মুহাম্মদ বিন সালমান
সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স হওয়ার পর থেকেই মূলত আলোচনায় রয়েছেন যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস)। কার্যত তিনিই সৌদির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এমন অবস্থায় ক্ষমতার পরিধি আরও বাড়িয়ে সৌদি প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হয়েছেন তিনি।
বলা হয়ে থাকে বাদশাহ সালমান চলেন মূলত ক্রাউন প্রিন্সের কথা অনুসারে। চলতি বছর যখন বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের সংকট দেখা দেয়, তখন মুহাম্মদ বিন সালমানকে তেল উৎপাদন বাড়ানোর অনুরোধ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে বাইডেনের অনুরোধ রাখেননি তিনি। বরং সৌদির নেতৃত্বাধীন তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট ওপেক প্লাস নভেম্বর থেকে দৈনিক তেল উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি
কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বিশ্বকাপ আয়োজনের নেতৃত্ব দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। পশ্চিমারা কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিল। এছাড়া বিভিন্ন নিয়মের কারণে কঠোর সমালোচনার মুখেও পড়ে কাতার। তবে সেসব সমালোচনা পেছনে ফেলে ব্যাপক আয়োজন করে বিশ্বকাপ সফলভাবে সম্পন্ন করেছে দেশটি। এতে অনেক সংস্থা ও ব্যক্তির হাত থাকলেও সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। বিশ্বকাপ উপলক্ষে কাতার সফর করেছেন সৌদি ও আমিরাতের ক্রাউন প্রিন্স, তুরস্কের প্রেসিডেন্টসহ বিশ্বনেতারা।
একে/ এমইউ