২০২২ সালটা সত্যি বলতে ভালো-মন্দের মিশ্র অনুভূতিতে কাটিয়েছি। এ বছর মনে দাগ কাটার মতো কোনো ঘটনার কথা ভাবতেই হলিক্রস সাইন্স ফেস্টের কথাই প্রথমে স্মৃতির কোণে ভেসে উঠল। হলিক্রস সাইন্স ফেস্ট থেকে পাওয়া প্রাইজ, তার থেকেও বড় যে সম্মান ও পরিচিতিটুকু পেয়েছি, তা এ বছরের সব থেকে বড় অর্জনগুলোর একটি বলে আমি মনে করি।
সত্যিই! হলিক্রস সাইন্স ফেস্টের কথা ভাবতেই সেই মুহূর্তগুলো মনের ফ্রেমে ভেসে ওঠে। সেই টিম কুইজে খাদের কিনারা থেকে চ্যাম্পিয়ন হওয়া, ফিজিক্স ও বায়োলজি অলিম্পিয়াডে দ্বিতীয় স্থান অর্জন, Crisis Snap সেগমেন্টে তৃতীয় স্থান অর্জন, পুরস্কারের সময় নিজের নামটি শোনার সেই আকুল আগ্রহ ও নাম ডাকার সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, সবার করতালি— সবমিলিয়ে সত্যিই দিনটি অসাধারণ ছিল!
বিজ্ঞাপন
পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশের ওয়ানডে সিরিজ জয় এবং দেশের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয়টিও নিশ্চিতভাবে মনে দাগ কাটার মতো মুহূর্ত ছিল।
আর খারাপ স্মৃতির কথা ভাবলেই নিশ্চিতভাবে আমার এক ফ্রেন্ডের আকস্মিক ক্যান্সারের খবর শোনার মুহূর্তটিই চোখের সামনে ভেসে ওঠে। অন্যদিকে, এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার সাথে শেষ মুহূর্তের পরাজয় এবং টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের সঙ্গে পাঁচ রানের পরাজয়টি খুবই খারাপ লেগেছিল।
বিজ্ঞাপন
অর্জনের খাতায় যোগ হয়েছে নতুন কিছু অভিজ্ঞতা। নিজেকে আরেকটু পরিণত করার প্রচেষ্টা আর ব্যর্থতার পরও নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর ইচ্ছাশক্তি। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পরিবারকে নিয়ে সার্বক্ষণিক চিন্তা করার একটি প্রবণতা। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় টুকটাক পুরস্কার প্রাপ্তিও হয়তো অর্জনের খাতায় যোগ হয়েছে।
বছর শেষে এসে একটা আক্ষেপই হয়তো থেকে যাবে। যদি আমি এ বছর আরও অর্ধ-শতাধিক উপন্যাস, নভেল বা ছোটগল্প পড়তে পারতাম, তাহলে হয়তো বেশ ভালো হতো। তাছাড়া জীবনকে আরেকটু সহজভাবে নিলেও বোধহয় খুব একটা খারাপ হতো না।
গত বছরের থেকে এ বছর জীবনযাত্রা যেমন সামান্য কঠিন ছিল তেমনি নতুন অনেক কিছু শিখতেও পেরেছি। পরিবারকে ছেড়ে জীবন কাটানো শুরুতে সবার জন্যই চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু নিজের কাজ নিজে করা, অসুস্থ হলে নিজের যত্ন নিজে নেওয়া, কঠিন সময়ে একাকী সিদ্ধান্ত গ্রহণ- এসব নানাদিক শেখারও একটা সুযোগ হয়েছে। জীবনকে নতুনভাবে দেখার সুযোগ পেয়েছি বলা যায়।
বছরটিতে কষ্টদায়ক ঘটনাও ঘটেছে। খুব বেশিদিন এখনো হয়নি। এইচএসসিতে বোটানি এক্সামটা আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো দিয়েছি। খুশি মনে বাড়িতে আসলাম। আম্মুকে ফোন দিলাম এক্সাম ভালো হয়েছে তা জানানোর জন্য। আম্মু ফোন ধরলেন না। একটু পর আম্মু কল ব্যাক করলেন, স্বাভাবিকভাবেই কথা হলো। তারপরই হঠাৎ বললেন, মাহিন, একটা খারাপ সংবাদ আছে। শোনার আগে নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করো। আমি বুঝতে পাচ্ছিলাম না আম্মু কোন বিষয়ে কথা বলবেন। অজানা ভয় কাজ করছিল ভেতরে।
তখন আম্মু বললেন, তোমার নানু মারা গেছেন। শুনে কেমন লাগলো তা নাহয় না-ই বললাম! পরে জানলাম নানু একদিন আগেই মারা গেছেন, আমার পরীক্ষার জন্য আমাকে জানানো হয়নি। সেসময় চোখের সামনে ভেসে উঠছিল নানুর সঙ্গে ছোটবেলায় কাটানো মুহূর্তগুলো। উনার বারবার বলা সেই কথাগুলো, ‘ভাইয়া, তুমি অনেক বড় হবা। আল্লাহ তোমাকে অনেকদূর নিয়ে যাবে দেখো।’ বাস্তবতা কতটা কঠিন, তাই না? নিজের নানুকে শেষবারের জন্য শেষ দেখাটাও দেখতে পারলাম না। আল্লাহ যেন আপনাকে জান্নাত নসিব করেন, সেই দোয়াটাই সবসময় থাকবে।
আমার প্রতিবছরই একটি মাত্র চাওয়া- আমি যেন আমার মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে পারি। আমার বাবা-মার গর্বের কারণ হতে পারি। ভাই-বোনের জন্য কিছু করতে পারি। নিজের জন্য তেমন চাওয়ার কিছু নেই। তবে নতুন বছরে যেহেতু আমার এডমিশন পরীক্ষা, তাই নিজের স্বপ্নগুলোকে যেন পূরণ করতে পারি- সেটাই নিজের জন্য একমাত্র চাওয়া। পাশাপাশি আমার পরিবার, শিক্ষক, সব বন্ধু ও পরিচিতদের যেন নতুন বছরটা অনেক ভালো যায়, সেটাও আমার চাওয়া।
শুধু নতুন বছর নয়, প্রতিটি বছরই সবার যেন সুন্দর হয়, সেই প্রত্যাশাটুকু রাখি।
লেখক: শিক্ষার্থী, এইচএসসি ২২ ব্যাচ, নটর ডেম কলেজ
এনএম/জেএম