বৃহস্পতিবার, ২ মে, ২০২৪, ঢাকা

বছরজুড়ে রাজশাহীর আলোচিত যত ঘটনা

আবু সাঈদ রনি 
প্রকাশিত: ৩১ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:৪৫ এএম

শেয়ার করুন:

বছরজুড়ে রাজশাহীর আলোচিত যত ঘটনা
ছবি: ঢাকা মেইল

নানা আলোচিত ঘটনার মধ্য দিয়ে ২০২২ সাল বিদায় নিতে চলেছে রাজশাহীবাসীর কাছ থেকে। বিদায়ী বছরে জেলায় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার একটি ধান ক্ষেতে পানি না পেয়ে আদিবাসী কৃষকের আত্মহত্যা।

এছাড়াও জেলা ছাত্রলীগের অডিও ফাঁস ও অপকর্মে তোলপাড় সৃষ্টি, সবশেষ কমিটি বাতিলের বিষয়টিও ছিল শিক্ষা নগরী খ্যাত রাজশাহীর আলোচনায়। বছরের মধ্য ভাগে কাঁচা আমের জিলাপী তৈরির বিষয়টিও সাড়া ফেলে দেশজুড়ে। আর বছরের শেষ প্রান্তে বিভাগীয় সমাবেশকে ঘিরে বিএনপির তৎপরতায় উত্তপ্ত হয় রাজশাহীর স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গন।


বিজ্ঞাপন


চলতি বছরের ২৩ মার্চ ধান ক্ষেতে পানি না পেয়ে রাগে ও ক্ষোভে দুই আদিবাসী কৃষক আত্মহত্যা করেন। নিহত আদিবাসীরা হলেন— অভিনাথ মার্ডি (৩৬) ও তার চাচাতো ভাই রবি মার্ডি (২৭)। দুই কৃষকের মৃত্যুর ঘটনায় সঠিক তদন্ত ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় দেশজুড়ে।

এ ঘটনায় অভিনাথ মার্ডির স্ত্রী রোজিনা হেমব্রমের কাছ থেকে সাদা কাগজে সই নিয়ে অপমৃত্যু (ইউডি) মামলা করেন পুলিশ। পরে রোজিনা হেমব্রম গভীর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা দায়ের করেন। এর প্রেক্ষিতে সাখাওয়াতকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আবার অনিয়মের প্রমাণ পেয়ে গভীর নলকূপ অপারেটরের দায়িত্ব থেকে তাকে বরখাস্ত করে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)।

ঘটনার তিন সপ্তাহ পর ১৬ এপ্রিল তাদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। প্রতিবেদনে মৃত দুজনের শরীরেই অর্গানো ফসফরাস নামের এক প্রকার বিষের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এই বিষপানেই তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। পরে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ।

গত ২৬ জুলাই এক এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ উঠে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন অমির বিরুদ্ধে। অমির ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) হতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে এ নির্যাতন করা হয়। এরপর ৪ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে নিজ দলের কর্মীকে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগে আবারও আলোচনায় আসেন ছাত্রলীগ নেতা অমি।


বিজ্ঞাপন


এর দিন দশেক পরেই আলোচনায় আসেন রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাকিবুল ইসলাম রানা। তার একটি অডিও রেকর্ড ফাঁস নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয় দেশজুড়ে। ভাইরাল চার মিনিট ১০ সেকেন্ডের ওই অডিওতে এক নারী ছাত্রলীগ নেত্রীকে রানার বিছানায় আসার প্রস্তাব দিতে শোনা যায়। এছাড়াও আরেক নারীকে পাঠাতে বলেন ওই ছাত্রলীগ নেতা।

একই সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) এডহক শাখায় চাকরি দেওয়ার নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে রানার বিরুদ্ধে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদ। অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটিও গঠন করে সংগঠনটি।

এরপর ১৯ অক্টোবর তদন্ত প্রতিবেদনে তাদের কর্মকাণ্ড বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র ও আদর্শের সঙ্গে চরম মাত্রায় সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করা হয়। সংগটনের ভাবমূর্তি চরমভাবে বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় তাদের স্থায়ী বহিষ্কারের জোর সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি।

সেই দিন রাতেই নৈতিক স্খলনজনিত কারণে ছাত্রলীগ নেতা সাকিবুল ইসলাম রানাকে বহিষ্কার ও জাকির হোসেন অমিকে অব্যাহতি দেয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদ। এমনকি তদন্তাধীন অবস্থায় জেলা ছাত্রলীগ অনুমোদিত বাগমারা উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিও অবৈধ ঘোষণা করা হয়। তাদের পদ হারানোর সংবাদ প্রকাশ হলে খুশিতে মিষ্টি বিতরণ করেন স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে জমে থাকা ক্ষোভ প্রকাশ করেন ফেসবুক পোস্টে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ধন্যবাদও জানান তারা।

চলতি বছর রমজানে খাবারের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে রাজশাহীর কাঁচা আমের জিলাপি। বিশেষ ধরনের জিলাপি এনে ভোজন রসিক তো বটেই সবার কাছেই আলোচনার খোড়াক জোগায় রাজশাহীর ‘রসগোল্লা’। মিষ্টিজাত পণ্যে নতুনত্ব এনে তাক লাগিয়ে দেয় রাজশাহীসহ সারাদেশের মানুষকে। অজানা স্বাদ নিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে রাজশাহীবাসী।

তবে কাঁচা আমের জিলাপি প্রচারে প্রতারণার অভিযোগের প্রমাণ পায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। কাঁচা আমের স্বাদের ফ্লেভার মিশিয়ে সেটিকে কাঁচা আমের জিলাপি হিসেবে প্রচার করায় জরিমানাও করেন প্রতিষ্ঠানটির রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।

এর পাশাপাশি আলোড়ন তৈরি করে মাসকলাইয়ের স্বাদ যুক্ত জিলাপিও। ভাবতে অবাক লাগলেও রসে টইটম্বুর, গরম ও মচমচে এই খাবারের রেসিপিতে নতুন মাত্রা আনে মাসকলাই। রাজশাহী এলাকায় সচরাচর মাসকলাইয়ের ডাল, বড়ি ও রুটি পাওয়া গেলেও জিলাপিতে মাসকলাই নতুন এক রেসিপি।

বছরের শেষ ভাগে এসে বিভাগীয় সমাবেশকে ঘিরে প্রাণ পায় বিএনপির বিভাগীয় ও জেলা কমিটি। দাবির প্রেক্ষিতে নগরীর ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠে তিন ঘণ্টার সমাবেশের অনুমতি দেয় স্থানীয প্রশাসন। তবে বিএনপির এই সমাবেশকে ঘিরে শুরু হয় পরিবহণ ধর্মঘট, বন্ধ হয়ে যায় পুরো বিভাগের বাস চলাচল।

বিষয়টি আগেই আঁচ করতে পেরে বিভিন্ন জেলা থেকে নেতা-কর্মীরা রাজশাহী নগরীতে এসে খোলা মাঠেই রাত্রি যাপন করতে শুরু করে। অপরদিকে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে তৎপর হয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ। সবমিলিয়ে রাজশাহীতে সরগরম হতে থাকে বছরের শেষ ভাগের রাজনীতির মাঠ।

টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর