বৃহস্পতিবার, ২ মে, ২০২৪, ঢাকা

জ্বালানি সংকটে বেকায়দায় পুরো বিশ্ব

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২ ডিসেম্বর ২০২২, ০৭:২৩ এএম

শেয়ার করুন:

জ্বালানি সংকটে বেকায়দায় পুরো বিশ্ব

রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকট শুরু হয়। এরপর রুশ জ্বালানির দাম নির্ধারণ করে ইইউ (ইউরোপীয় ইউনিয়ন) এ সংকটকে নতুন মাত্রা দেয়। জ্বালানির অভাবে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ এখন বেকায়দায় পড়েছে। বৈশ্বিক অর্থনীতি ও রাজনীতিতে এ জ্বালানি ইস্যু মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। আগামীতে এ সংকট আরও ঘনীভূত হতে পারে। তবে রুশ কর্তৃপক্ষ জ্বালানি সংকটের জন্য পশ্চিমাদের দায়ী করছে।

টানা প্রায় ১১ মাস ধরে ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন চালাচ্ছে রাশিয়া। গত ফেব্রুয়ারিতে এই আগ্রাসন শুরুর পর থেকে সারা বিশ্ব নানামুখী সংকটে পড়েছে। তবে অন্য অনেক সংকটের মাঝে বছরজুড়ে সবচেয়ে সংকটের ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে জ্বালানি।


বিজ্ঞাপন


বলা হচ্ছে, জ্বালানি শিল্পের জন্য ২০২২ সালটিকে মনে রাখা হবে। কারণ এই বছরে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকটকে ব্যাপকভাবে ত্বরান্বিত করেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, করোনাভাইরাস মহামারি থেকে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা করা হলেও ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন এবং এর জেরে পশ্চিমা দেশ ও সংস্থাগুলোর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা আগে থেকেই চাপে থাকা তেল ও গ্যাস সরবরাহের ওপর নতুন চাপ সৃষ্টি করেছে।

পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার জেরে বিশ্বের শীর্ষ জ্বালানি সংস্থাগুলো রাশিয়া থেকে দ্রুত সরে আসে এবং কয়েক বিলিয়ন ডলারের সম্পদ ফেলে দেশটি থেকে বেরিয়ে যায়।

এই পরিস্থিতিতে বহু বছরের মধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম নতুন উচ্চতায় পৌঁছায় এবং তা ব্যারেল প্রতি প্রায় ১৪০ মার্কিন ডলারে পৌঁছে যায়। যা সর্বকালের রেকর্ড থেকে খুব বেশি দূরে নয়।


বিজ্ঞাপন


রয়টার্স বলছে, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন এবং এর ফলে পরবর্তীতে পশ্চিমাদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার ফলে কয়েক দশক ধরে বিদ্যমান বৈশ্বিক-সরবরাহ চেইন ভেঙে যায়। এরপর বিশ্বের প্রধান অর্থনীতিগুলো জ্বালানির বিকল্প উৎস খুঁজে পেতে কার্যত ঝাঁপিয়ে পড়ে।

fuel crisis

কেন জ্বালানি ইস্যু খুবই গুরুত্বপূর্ণ
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে ইউরোপীয় দেশগুলো এমন একটি দেশের (রাশিয়া) সঙ্গে তাদের সম্পর্ক পুনঃমূল্যায়ন করতে বাধ্য হয়, যে দেশটি দীর্ঘদিন তাদের প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান সরবরাহকারী ছিল।

এরপর থেকে পশ্চিমা দেশগুলো রুশ নির্ভরতা থেকে বের হওয়ার বিষয়ে আলোচনা শুরু করে। একই সঙ্গে জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসে (এলএনজি) আরও বেশি বিনিয়োগ করছে ইউরোপ।

এসএন্ডপি গ্লোবাল কমোডিটি ইনসাইটসের বিশেষ উপদেষ্টা এবং বৈশ্বিক গ্যাস বিশ্লেষক মাইকেল স্টপার্ড বলেছেন, আমরা রাশিয়া এবং ইউরোপের মধ্যে গ্যাস নিয়ে ৫০ বছরের সফল অংশীদারিত্বের সমাপ্তির চেয়ে কম কিছুই দেখছি না। এই সংকটটি আমাদের সরবরাহ এবং চাহিদার পুনর্নির্মাণের দিকে নিয়ে যাচ্ছে এবং আমরা ২০২৩ সাল ও এমনকি এরপরও এর যন্ত্রণা ভোগ করব।

অন্যদিকে উল্টো চিত্রও আছে। যেমন, পোল্যান্ডের বাসিন্দারা তাদের ঘর গরম করার জন্য ক্ষতিকারক লিগনাইট তেল এবং আবর্জনাসহ যে কোনো উপকরণ ক্রমবর্ধমানভাবে পোড়াচ্ছে। এছাড়া জ্বালানির অভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখন বেকায়দায় পড়েছে। যেমন, এশিয়ার অনেক দেশের অর্থনীতি সংকটে পড়েছে এ গ্যাস ও জ্বালানি তেলের অভাবে। মূলত, বৈশ্বিক অর্থনীতি ও রাজনীতিতে জ্বালানি ইস্যু মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।

দক্ষিণ-পশ্চিম পোল্যান্ডের ক্লোডজকো শহরে ২৮ হাজার মানুষ বসবাস করেন। এই শহরের মেয়র মিশাল পিসকো বলছেন, এখানকার লোকেরা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের জন্য আবর্জনা সঞ্চয় করছে।

fuel crisis

রুশ কর্তৃপক্ষ যা বলছে
রাশিয়া মনে করে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের লাভ হচ্ছে। কারণ, ইউরোপীয় দেশগুলো এখন রাশিয়ান গ্যাসের ওপর নির্ভর না করে মার্কিন এলএনজি (তরলকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) ক্রয় করছে।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, মার্কিন এলএনজি ক্রয় করে ইউরোপ এবার যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা বাড়িয়েছে। কিন্তু এ সম্পর্কে তেমন পারস্পরিক আদান-প্রদান নেই। মূলত, এতে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেরই লাভ হচ্ছে।

অপরদিকে গ্যাসের দাম নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নীতি বা কর্মকাণ্ডকে পাগলামি বলে অভিহিত করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

তিনি বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলো সম্মিলিতভাবে আমাদের ওপর অর্থনৈতিক যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে। এসব করে তারা মনে করেছে যে রাশিয়ান অর্থনীতি ভেঙে পড়বে। কিন্তু তাদের হিসাবে ভুল ছিল।

পুতিন আরও বলেন, নতুন ও দ্রুত বর্ধনশীল বাজারে রাশিয়া তার জ্বালানি সরবরাহ করতে চায়। যেমন- এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, ল্যাটিন আমেরিকা ও আফ্রিকা। কারণ, ইইউ রুশ জ্বালানির মূল্য বেঁধে দিয়ে কম মূল্যে আমাদের পণ্য ও পরিষেবাগুলো ব্যবহার করতে চায়। এ ধরনের ভারসাম্যহীন পরিস্থিতি অনির্দিষ্টকালের জন্য চলতে পারে না।

fuel crisis

এ সংকট কী আরও ঘনীভূত হতে পারে?
বিশ্বের প্রধান শিল্পোন্নত অর্থনীতিগুলো ২০২৩ সালেও জ্বালানি সংকটের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের দেশগুলোর সরকার খোলাখুলিভাবে মিত্রদের কাছে কৌশলগত সরবরাহের ‘ফ্রেন্ডশোরিং’ সমর্থন করার দিকে সরে গেছে। এক্ষেত্রে সম্ভাব্য উচ্চ খরচ এবং পারমাণবিক, সৌর, বায়ু ও হাইড্রোজেন সম্পদ বিকাশের জন্য ট্যাক্স এবং সহায়তা প্যাকেজগুলোর ব্যবহারও বাড়ানো হয়েছে।

মূলত বছর শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রাকৃতিক গ্যাস এবং ঘর গরম করার জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতে অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু মানুষ এখনও লড়াই করছে এবং কিছু সময়ের জন্য এই খরচ চালিয়ে নিতে পারে। কারণ জ্বালানির স্বল্প সরবরাহ এটির দাম আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

এমইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর