আর মাত্র কয়েকদিন। ২০২২ পেরিয়ে পা রাখতে চলেছি ২০২৩-এ। শেষ হতে যাওয়া বছরটিতে দেশে ঘটেছে নানা ঘটনা। জন্ম দিয়েছে আলোচনা-সমালোচনার। এরমধ্যে দেশের আদালত প্রাঙ্গণ থেকে জঙ্গি ছিনতাই ছিল অন্যতম।
পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে থাকার পরও কিভাবে দুই দুর্ধর্ষ জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়া হলো তা ছিল সবার মুখে মুখে। নানামুখী সমালোচনার জন্ম দিয়েছে এটি।
বিজ্ঞাপন
অবশ্য ২০১৪ সালেও জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছিল, ময়মনসিংহের ত্রিশালে। এরপর বিভিন্ন সময় ছিনতাইয়ের পরিকল্পনাও করেছিল জঙ্গিরা। কিন্তু সফল হতে পারেনি।
আবার প্রায় দীর্ঘ ৯ বছর পর জঙ্গি ছিনতাইয়ে সফল হলো জঙ্গিরা। ঘটনাটি ২০ নভেম্বরের। নিয়ম মতোই পুরান ঢাকার আদালতে হাজির করা হয় দুই জঙ্গিকে। তারা হলো- মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ও মাইনুল হাসান শামীম।
সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালে শুনানি শেষে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় নেওয়ার পথে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের গেটের সামনে দায়িত্বরত পুলিশের চোখে স্প্রে করে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় জঙ্গিরা।
এ ঘটনায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে দেশব্যাপী। ডাণ্ডাবেড়ি ছাড়া দুর্ধর্ষ এসব জঙ্গিকে কিভাবে আদালতে নেওয়া হলো, সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠে।
বিজ্ঞাপন
তাৎক্ষণিক সারাদেশের আদালত পাড়ায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। শুধু তাই নয়, জঙ্গি ধরতে তল্লাশি বসানো হয় ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে। সীমান্তে জারি করা হয় রেড অ্যালার্ট। জঙ্গি ধরতে চালানো হয় অভিযান।
এই ঘটনায় জড়িত নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার-আল-ইসলামের সদস্য মেহেদী হাসান অমিকে ২৪ নভেম্বর গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন (সিটিটিসি) বিভাগ।
ছিনতাই হওয়া দুই জঙ্গি ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর রাজধানীর শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে জঙ্গিদের হাতে নিহত প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন ও ব্লগার অভিজিত রায় হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।
দুই জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ও মাইনুল হাসান শামীমকে ধরিয়ে দিতে পুলিশ সদর দফতর থেকে ১০ লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব ইউনিট মাঠে নামে। গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোসহ সাইবার ইউনিটগুলোও তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে কাজ করছে।
যেভাবে ছিনতাই করা হয় দুই জঙ্গিকে
ট্রাইব্যুনাল থেকে আট জঙ্গিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ। তারা যখন ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতের প্রধান ফটকের সামনে আসেন, তখন হাতকড়া পরা দুই জঙ্গি তাদের নিরাপত্তায় থাকা পুলিশের এক সদস্যকে মারধর শুরু করেন। মুহূর্তের মধ্যে আশপাশে থাকা জঙ্গিদের সহযোগীরা পুলিশের ওপর হামলায় যোগ দেয়। এ সময় পুলিশের ওই সদস্যকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেন আরও কয়েকজন পুলিশ। তাদের ওপর হামলা এবং স্প্রে ছিটিয়ে সিজেএম আদালতের প্রধান ফটকের উল্টো দিকের গলি দিয়ে মোটরসাইকেলে করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির ও আবু ছিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিবকে ছিনিয়ে নেয় সহযোগীরা।
এর আগে ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালে ফিল্মি স্টাইলে প্রিজন ভ্যান লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে ও বোমা ফাটিয়ে নিষিদ্ধ জেএমবির তিন শীর্ষ জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয় তাদের অনুসারীরা। তিন জঙ্গি হলো— নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) একাংশের নেতা সালাহউদ্দিন ওরফে সালেহীন ওরফে সানি এবং রাকিবুল হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদ ও জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজান।
পরে ওইদিন সন্ধ্যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে ও ক্রসফায়ারে নিহত হয় রাকিবুল হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদ। এ ঘটনায় আতিকুর রহমান নামে পুলিশের একজন কনস্টেবল নিহত হন। আহত হন আরও কয়েকজন।
এআইএম/জেএম/আইএইচ