করোনার ধকল সামলে উঠার আগেই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধ বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বকেই ঝুঁকিতে ফেলে দেয়। বিশেষ করে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়ে জীবনের সব ক্ষেত্রে। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের বাড়তি দামে দিশেহারা হয়ে পড়ে দেশের সাধারণ মানুষ। ২০২২ সালের প্রায় পুরোটাই এই ভোগান্তিতে কেটেছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব শুধু নিম্মবিত্ত নয়, মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষকেও দিশেহারা করেছে। ওএমএস ও টিসিবির পণ্য কিনতে সাধারণ মানুষের লম্বা লাইন খুবই সাধারণ দৃশ্য। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে অনেককে। কিছু পণ্যের দাম সরকার নির্ধারণ করে দিলেও তার প্রভাব বাজারে পড়েনি।
বিজ্ঞাপন
পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট ও এর প্রভাবে বাংলাদেশে ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে পণ্য আমদানিতে চড়া মূল্য দিতে হয়েছে। এছাড়া দেশে ডিজেলের দাম বাড়ায় পরিবহন খরচ বেড়েছে এবং গ্যাসের সংকটে পণ্য সরবরাহ পরিস্থিতি নাজুক ছিল বছরজুড়ে। এর ফলে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি।
বিবিএসের হিসাবে, গত আগস্টে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ, যা ১১ বছর ৩ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ২০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল।
২০২২ সালের প্রায় পুরোটাই তেল-চিনির দাম ভুগিয়েছে। দুটি পণ্যের দাম সব রেকর্ড ভেঙেছে। এমনকি বিভিন্ন সময় দাম বাড়ানোর জন্য সরবরাহ বন্ধ রেখে সংকট তৈরির অভিযোগও রয়েছে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে। সরকার বারবার দাম বেঁধে দিলেও বেশিরভাগ সময় সেটা কার্যকর হয়নি। গত বছর এক কেজি চিনির দাম ৭৫ টাকার মধ্যে থাকলেও ২০২২ সালের সেটি সর্বোচ্চ ১২০ টাকা পর্যন্ত ছিল।
বিজ্ঞাপন
আমদানিনির্ভর ডালের বাজারও শেষ সময় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। নভেম্বর থেকে বাজারে বেড়েছে প্রায় সব ধরনের ডালের দাম। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত মসুর ডাল ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ১২০ টাকার মধ্যে ছিল। অন্যদিকে বছর ব্যবধানে ছোলার দাম ২৫ শতাংশ বেড়ে এখন হয়েছে ৮০-৯০ টাকা, যা গত বছর ৬৫-৭০ টাকা ছিল।
গত বছর এসময় ৪৬-৪৮ টাকার মধ্যে যে কোনো জাতের মোটা চাল কেনা যেত। এখন সেটা ১০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৫৬-৬০ টাকা। অন্যদিকে সরু চালের দাম (মিনিকেট) ৬০ টাকার মধ্যে ছিল, যা এখন ৭০-৭৫ টাকা। ভালো মানের নাজিরশাইলের দাম ৮০ টাকায় ঠেকেছে।
২০২১ সালের শেষে প্রতি কেজি খোলা আটার দাম ছিল ৩২-৩৪ টাকা। এখন কিনতে হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকায়। একইভাবে ময়দার দাম ৪০-৪২ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৭০-৭৫ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে এ দুই পণ্যের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
স্বস্তি ছিল না সবজি, মাছ-মাংসের দামেও। ডিসেম্বরের আগে বছরব্যাপী চড়া ছিল সবজির দাম। গরুর মাংসের দাম এক বছরের ব্যবধানে ১০০-১৫০ টাকা বেড়েছে। চড়া ছিল সব মাছের দামও। শীতের সবজিতে এখন বাজার ভরপুর থাকলেও দাম কমছে না।
ডব্লিউএইচ/জেএম