উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ৬৭তম আসরের (২০২১-২২) ফাইনালে ফ্রান্সের ঐতিহ্যবাহী স্টেডিয়াম ‘সাঁ-দ্যনির স্তাদ দ্য ফ্রান্সে’ ৫ মে মাঠে নামে স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ ও ‘অল রেড’ খ্যাত ইংলিশ ক্লাব লিভারপুল। ১৪ বারের মতো শিরোপা ঘরে তোলার মিশনে সেদিন অল রেডদের বিপক্ষে লড়াইয়ে নামে কার্লো আনচেলেত্তির দল। বিপরীতে ৭ম জয়ের লক্ষ্য নিয়ে মদ্রিচ-ভিনিসিয়াসদের মুখোমুখি হয়ে লিভারপুল।
লিগে মূল পর্বের খেলায় গ্রুপ ‘ডি’তে ছিল রিয়াল মাদ্রিদ। ৬ ম্যাচের ৫টিতে জয় ও এক হার নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই পরের রাউন্ডে লস ব্ল্যাঙ্কোসরা।
বিজ্ঞাপন
২০২১-২২ মৌসুমের শেষ ষোলোর ম্যাচে পিএসজির মুখোমুখি হয় রিয়াল। প্রথম লেগে মেসি-নেইমারদের মাঠ থেকে ১-০ গোলে হেরে আসে তারা। তবে এই পর্বে অ্যাওয়ে গোলের সমীকরণ না থাকায় নিজেদের মাঠে যেকোনো ব্যবধানে জিততে পারলেই পরের রাউন্ড নিশ্চিত- এমন সমীকরণ নিয়ে ঘরের মাঠ স্যান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে খেলতে নামে রিয়াল। কিন্তু দ্বিতীয় লিগের সেই ম্যাচে পিএসজি তারকা কিলিয়ান এমবাপের করা গোলে শুরুতেই পিছিয়ে পড়ে রিয়াল। তবে মাত্র ১৭ মিনিটের ব্যবধানে ফরাসি অধিনায়ক করিম বেনজেমার করা অবিশ্বাস্য এক হ্যাটট্রিকে ৩-২ গোলের জয় নিয়ে শেষ আটের টিকিট নিশ্চিত করে রিয়াল মাদ্রিদ।
এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে রিয়ালের প্রতিপক্ষ চেলসি। এখান থেকেও রিয়াল সেমিতে উঠে চরম নাটকীয়ভাবে। চেলসির মাঠে ৩-১ গোলের লিড নিয়ে জিতে আসে রিয়াল। অথচ নিজেদের মাঠে ৩-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে তারা। খেলার ৭৯ মিনিট পর্যন্ত দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৩ গোলের ব্যাবধানে এগিয়ে ছিল চেলসি। ৮০ মিনিটে রদ্রিগোর করা গোলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। এরপর বেনজেমার ৯৬ মিনিটে করা গোলটিতে শেষ চারে ওঠে রিয়াল।
আরও পড়ুন- এমবাপে নয় গোল্ডেন বুটের ‘মালিক’ হতো মেসি, বেরিয়ে এলো আসল রহস্য
বিজ্ঞাপন
শেষ চারে তো আরও বড় নাটক। সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ ম্যানচেস্টার সিটি। প্রথম লেগে সিটির মাঠ থেকে ৪–৩ গোলে হেরে আসে আনচেলত্তির দল। কিন্তু ‘পরাজয়ের মুখ থেকে জয় ছিনিয়ে আনা কথাটি’ যেন একমাত্র রিয়াল মাদ্রিদের সাথেই মানানসই। যা আরও একবার প্রমাণ করে রিয়াল। খাদের কিনারা থেকে ম্যাচ বের করে ফাইনাল নিশ্চিত করে তারা। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে ৮৯ মিনিট পর্যন্ত ১-০ গোলে পিছিয়ে ছিল রিয়াল।
দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৩ গোলের ব্যবধানে এগিয়ে থেকে ফাইনালের প্রহর গুনছিল ম্যানচেস্টার সিটি। তবে অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়ায় রিয়াল। ৯১ মিনিটে গোল করে ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে যান রদ্রিগো। ৯৫ মিনিটে গোল করে রিয়ালকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান বেনজেমা। শেষ পর্যন্ত চরম উত্তেজনাপূর্ব দ্বিতীয় লেগের ম্যাচ তারা জিতে নেয় ৩-১ গোলে। ফলে ৬-৫ গোলের অগ্রগামিতায় বেনজেমারা নিশ্চিত করে প্যারিসের ফাইনালের টিকেট।
অন্যদিকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ ‘বি’ তে ছিল লিভারপুল। গ্রুপ পর্বে তারা কোনো খেলায় না হেরে, পুরো ১৮ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই নক-আউট পর্বে পৌঁছে। শেষ ষোলোতে ইন্টার মিলানকে দুই লেগ মিলিয়ে ২-১ গোল ব্যবধানে হারিয়ে শেষ আটের টিকিট পায় ক্লপের দল। এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে দুই লেগে পর্তুগিজ ক্লাব বেনফিকাকে ৬-৪ ব্যবধানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে ওঠে লিভারপুল। শেষ চারের দ্বৈরথে ভিলারিয়ালকে দুই লেগ মিলিয়ে ৫-২ ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেন মোহাম্মদ সালাহর লিভারপুল।
আরও পড়ুন- বডি বিল্ডারের পাশে ব্যারিস্টার সুমন, লড়বেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে
এরপর আসে ফাইনালের সেই আরাধ্য রজনী। সেদিনের খেলার মধ্যভাগ পর্যন্ত দুই দলই প্রায় সমান সমান বল দখলে রাখে। অথচ প্রথমার্ধেই কমপক্ষে দুটি গোল করতে পারতো ‘রেড ডেভিলরা’। কিন্তু রিয়াল গোলরক্ষক কোর্তুয়া সেদিন হয়ে উঠেন দুর্ভেদ্য দেয়াল। পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে তিনি নিশ্চিত দুটি শট ঠেকিয়ে দেন। অপরদিকে ২৫তম মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে শট নিয়েছিলেন করিম বেনজেমা। যা সহজেই সেভ করেন লিভারপুল গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকার।
দ্বিতীয়ার্ধেও পাল্টা আক্রমণের ধারা বজায় রাখে লিভারপুল। কিন্তু সেই ধারার বিপরীতে গিয়ে গোল আদায় করে নেয় রিয়াল। ৫৯তম মিনিটে ফেদে ভালভার্দের করা মাইনাস থেকে সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় বল পেয়ে যান ভিনিসিয়াস জুনিয়র। আলতো টোকায় বল জালে পাঠাতে কোনো ভুল করেননি এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।
৬৪তম মিনিট থেকে আবারও দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখান কোর্তুয়া। পাঁচ মিনিটের ব্যাবধানে পরপর দুটি শট সেভ করে আবারও সালাহকে হতাশ করেন তিনি। অপরদিকে ৭৪তম মিনিটে আলেকজান্ডার আর্নল্ডের করা শটে কেবল পা লাগালেই গোলের দেখা পেতেন জোটা। কিন্তু গোললাইন থেকে বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে সেই শটও ঠেকিয়ে দেন তিনি। ৮২তম মিনিটে ডি-বক্সের মধ্যে সম্পূর্ণ ফাঁকা পেয়েও বল বাইরে মারেন বদলি হিসেবে খেলতে নামা নেবি কেইটা।
বেলজিয়ান এই গোলরক্ষকের দক্ষতায় লিভারপুল একটিও গোল না করতে পারেনি। ১-০ গোলের ব্যবধানে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে ‘লস ব্লাঙ্কোসরা’। আর তাতেই রিয়াল মাদ্রিদ ইতিহাস গড়ে ১৪ বারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ট্রফি নিজেদের করে নেয়।
এসসিএন