বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

দেশে ইলেকট্রিক গাড়ি-বাইকে ‘বিপ্লব’

আসাদুজ্জামান লিমন
প্রকাশিত: ২০ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:৫৬ এএম

শেয়ার করুন:

loading/img

ইলেকট্রিক গাড়ি ও বাইকের বিপ্লব শুরু হয়েছে বিশ্বজুড়ে। সেই বিপ্লবে শামিল হয়েছে বাংলাদেশও। এখন দেশিয় প্রতিষ্ঠানেই তৈরি হচ্ছে ইলেকট্রিক বাইক ও গাড়ি। বিদেশ থেকে আমদানি করা কাঁচামালের পাশাপাশি দেশিয় উৎস থেকে সংগৃহীত সরঞ্জামাদি দিয়ে এসব যন্ত্রযান তৈরি হচ্ছে। একইসঙ্গে এই শিল্পের সহযোগী শিল্পও ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করছে। ফলে দেশে উৎপাদিত বৈদ্যুতিক যানবহনের দামও থাকবে হাতের নাগালে। এ বছরই প্রথম ইলেকট্রিক বাইকের নিবন্ধন দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। ফলে সড়কে ব্যাটারিচালিত মোটরযান চলাচলেও বাধা রইল না।

দেশের তিনটি কোম্পানি এ বছর ইলেকট্রিক গাড়ি ও বাইক তৈরিতে হাত দিয়েছে। এর মধ্যে এগিয়ে আছে ওয়ালটন। এছাড়াও বাঘ ইকো মোটরস ও পালকি মোটরস ব্যাটারিচালিত প্রাইভেটকার তৈরি করে আলোচনায় এসেছে।


বিজ্ঞাপন


waltonনিবন্ধন পেয়েছে ওয়ালটন ই-বাইক

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বিআরটিএ’র অনুমোদন পেয়েছে ওয়ালটন ইলেকট্রিক বাইক ‘তাকিওন’। ফলে এখন থেকে প্রচলিত গ্যাসোলিন বাইকের মতো বিআরটিএ’র নিবন্ধন নিয়ে বাংলাদেশের রাস্তায় বৈধভাবে চলতে পারবে পরিবেশবান্ধব ওয়ালটন ই-বাইক। এই বাইকে প্রতি কিলোমিটার পাড়ি দিতে খরচ পড়বে মাত্র ১০-১৫ পয়সা।

ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রকৌশলী লিয়াকত আলী জানান, ওয়ালটনের লোগো সম্বলিত ‘তাকিওন’ ব্র্যান্ড নামে ই-বাইক বাজারজাত করছেন তারা। বর্তমানে তাকিওন ১.০০ মডেলের ইলেকট্রিক বাইক বাজারে ছাড়া হয়েছে। লাল, নীল এবং ধূসর রঙের সাশ্রয়ী বাইকটির দাম মাত্র ১ লাখ ২৭ হাজার ৭৫০ টাকা।

প্রচলিত গ্যাসোলিন (পেট্রোল-অকটেন চালিত) বাইকের মতো ওয়ালটনের ই-বাইক ২ কিংবা ১০ বছরের জন্য বিআরটিএ’র নিবন্ধন করা যাবে। এক্ষেত্রে ওয়ালটন ই-বাইকের নিবন্ধন খরচ গ্যাসোলিন বাইকের চেয়েও বেশ কম।


বিজ্ঞাপন


আকর্ষণীয় ডিজাইনের তাকিওন ১.০০ মডেলের ইলেকট্রিক বাইকে রয়েছে শক্তিশালী ব্রাশলেস ডিসি মোটর, যার সর্বোচ্চ ক্ষমতা ১.৫ কিলোওয়াট। এতে ব্যবহৃত হয়েছে নতুন প্রযুক্তির গ্রাফিন বেসড ব্যাটারি, যার ধারণক্ষমতা ১.৬ কিলোওয়াট-ঘণ্টা। একবার চার্জে বাইকটি ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত পথ পাড়ি দেবে। বাইকটির সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার।

তিনি আরো জানান, নতুন প্রযুক্তির পরিবেশবান্ধব গ্রাফিন বেসড ব্যাটারি ৬০০-৮০০ সাইকেল সমৃদ্ধ, যা গ্রাহক নিশ্চিন্তে ৩ বছর ব্যবহার করতে পারবেন। বাইকটিতে রয়েছে পোর্টেবল চার্জার। ঘরে ব্যবহৃত ২২০ ভোল্টের বৈদ্যুতিক লাইন থেকেই ওয়ালটনের ই-বাইকে চার্জ দেওয়া যাবে। বাইকটির উভয় চাকায় আছে হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেক ও টিউবলেস টায়ার। রয়েছে এলসিডি স্পিডোমিটার ও এলইডি লাইটিং।

bagসৌরবিদ্যুৎচালিত ইলেকট্রিক বাহন আনল বাঘ ইকো মটরস

বাংলাদেশ এখনও ইলেকট্রিক সাইকেল, ইজিবাইক কিংবা বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানি নির্ভর। আমদানি নির্ভরতা কমাতে দেশে ইলেকট্রিক বাহন তৈরি করতে এগিয়ে এসেছে দেশিয় প্রতিষ্ঠান বাঘ ইকো মটরস। প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাটারিচালিত বাহন তৈরি করেছে।

বাঘ ইকো মটরসের প্রেসিডেন্ট কাজী জসিমুল ইসলাম বাপ্পী জানান, চার বছরের পরিশ্রমের পর বাঘ ইকো মটরসের ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগলাইনে সম্পূর্ণ আইওটি-ভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎচালিত টু হুইলার, থ্রি হুইলার এবং ফোর হুইলার ইলেকট্রিক বাহন তৈরি করছে।

তিনি জানান, দেশিয় প্রযুক্তিতে উদ্ভাবিত এই বৈদ্যুতিক গাড়িগুলোতে আছে ইন্টারনেট সুবিধা, জিপিএস ট্র্যাকিং, মোবাইল ফোন চার্জিং সুবিধা। এছাড়াও এতে আছে প্যানিক বাটন, ২৪ ঘণ্টা ভিডিও মনিটরিং ব্যবস্থা। রয়েছে ব্যাটারি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, চার্জিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ইত্যাদি।

বাঘ ইকো মটরসের তৈরি গাড়িগুলো কোম্পানির নিজস্ব ডাটা সেন্টারের সাথে সংযুক্ত থাকবে। ফলে সার্বক্ষণিক বাহনগুলো মনিটরিং করা যাবে। এতে থাকা প্যানিক বাটন চালক ও আরোহীকে বাড়তি নিরাপত্তা দেবে। চালক বা যাত্রী বিপদে পড়লে এই বাটন চেপে তাৎক্ষণিকভাবে সাহায্য চাইতে পারবেন।

বিদ্যুতের অপচয় ও অপব্যবহার ঠেকাতে এসব ইলেকট্রিক বাহনে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে। ফলে গাড়িগুলোতে চার্জ দেওয়ার জন্য অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যাবে না। যদি এর চালক অবৈধভাবে চার্জ দেওয়ার চেষ্টা করে তবে এতে থাকা আইটি ডিভাইসের মাধ্যমে বাঘ ইকো মটরসের ডাটা সার্ভারে খবর চলে যাবে।

ইতিমধ্যে এসব বাইক-গাড়ি সড়কে চলাচলের জন্য বিআরটিএর অনুমতি নিয়েছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি।

ব্যাটারিচালিত গাড়িগুলোর ব্যাটারিতে ৫ বছরের রিপ্লেসমেন্ট ওয়ারেন্টি মিলবে। প্রত্যেকটি গাড়ির জন্য থাকবে প্রথম পক্ষের ইন্সুরেন্স।

বাঘ ইকো মটরস পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করার। পাশাপাশি এই বাহনগুলো চার্জ দেওয়ার জন্য শিগগিরই দেশজুড়ে চার্জিং স্টেশন স্থাপন করা হবে।

palkiপালকি এনেছে ইলেকট্রিক প্রাইভেট কার

মাত্র ৪ লাখ ৯৯ হাজার টাকায় ব্র্যান্ড নিউ প্রাইভেটকার বিক্রি করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান পালকি মটরস লিমিটেড। এটি একটি ইলেকট্রিক কার। গাড়িটি বিক্রির জন্য প্রি-অর্ডার নেওয়া শুরু হয়েছে।

নিমার্তা প্রতিষ্ঠান দাবি করছে, এই ইলেকট্রিক গাড়িতে প্রতি কিলোমিটারে খরচ পড়বে মাত্র ৩৫ পয়সা।

এই গাড়িতে রয়েছে এয়ার কন্ডিশন। এক চার্জে ১৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারবে বাংলাদেশে তৈরি এই ব্যাটারিচালিত গাড়ি। গাড়িটি ফুল চার্জ হতে সময় লাগবে মাত্র ৮ ঘণ্টা।

চালকসহ এই গাড়ির আসন চারটি। ঘণ্টায় এর গতি সর্বোচ্চ ৫০ কিলোমিটার। এই গাড়ি কিনলে বিআরটিএ থেকে রেজিস্ট্রেশন পেতে সহায়তা করবে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।

প্রি-অর্ডার করতে পালকি মটরসের সঙ্গে মোবাইল ফোনের যোগাযোগ করে টেস্ট ড্রাইভ সেট করতে হবে।

এরপর কোম্পানির লোকেশনে এসে গাড়ি চালিয়ে যদি ভালো লাগে, তাহলে আপনি প্রি-অর্ডার দিতে পারবেন। প্রি-অর্ডারে ৫০ হাজার টাকা অগ্রিম দিতে হবে।

প্রি-অর্ডারের ১২০ দিনের মধ্যে গাড়ি ক্রেতারা হাতে পাবেন।

এজেড/জেএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর