দিনাজপুরের চিনিরবন্দর থেকে শনিবার সকালে ঢাকায় আসেন নাজমুল ইসলাম। সাথে ছিলেন তার কয়েকজন বন্ধু। তাদের বহনকারী বাসটি ঢাকার প্রবেশমুখ আমিন বাজারে তল্লাশির মুখে পড়ে। এ সময় বাসের প্রতিটি যাত্রীকে তল্লাশি করা হয়। তল্লাশি হয় তাদের মোবাইলও।
নাজমুল জানান, পুলিশ যাত্রীদের দেহ তল্লাশি করে ক্ষান্ত হচ্ছে না, যাদের সন্দেহ হচ্ছে তাদের মুঠোফোনের ছবি এমনকি ফেসবুক আইডিও ঘেঁটে দেখা হচ্ছে। এতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে অনেককে।
বিজ্ঞাপন
সাধারণ এই যাত্রী মনে করেন, মোবাইল মানুষের একান্তই ব্যক্তিগত। এটা তল্লাশি করা বেআইনি। কার মোবাইলে কী আছে সেটা তল্লাশি করা মানে মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা।
শুধু নাজমুল নন, মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসা রবিউল ইসলামও পড়েছেন একই পরিস্থিতিতে। তিনি বলেন, পুলিশ সবযাত্রীর আইডি কার্ড দেখতে চাচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যারা দেশের বাইরে থেকে আসে তাদের তো অধিকাংশের আইডি কার্ড নেই। অনেকে কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন না। ফলে তারা আইডি কার্ড দেখাতে পারছে না। পুলিশ তাদের বিএনপি কর্মী সন্দেহে মোবাইল পর্যন্ত ঘাঁটাঘাঁটি করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার প্রবেশমুখ আমিনবাজার ছাড়াও গাবতলী, উত্তরা, যাত্রাবাড়ী ও ঢাকার কদমতলী এলাকায় ঢাকার বাইরে থেকে আসা যাত্রীদের এমন তল্লাশির মুখে পড়তে হচ্ছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ— না দিতে চাইলেও পুলিশ মোবাইল কেড়ে নিচ্ছে। তারপর জোর করে পাসওয়ার্ড নিয়ে গ্যালারিতে ঢুকে ছবি দেখছে। অনেকের ক্ষেত্রে ফেসবুকও চেক করা হচ্ছে। যাত্রীদের জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র দেখতে চাচ্ছে। কিন্তু এই পরিচয়পত্র সবার দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে তাদের আটক করছে। কখনো কখনো যাত্রীদের বাস থেকে নামিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে। জিজ্ঞেস করা হচ্ছে সাথে ব্যাগ আছে কি না, জাতীয় পরিচয়পত্র আছে কি না ও কী উদ্দেশে ঢাকা এসেছেন।
বিজ্ঞাপন
রুবেল গার্মেন্টস ব্যবসা করেন। ঢাকায় এসেছেন রংপুর থেকে। ব্যবসায়ী হওয়ার কারণে রাজনীতি নিয়ে তার তেমন আগ্রহ নেই। তিনি বলেন, আমি একজন ব্যবসায়ী। আমার জাতীয় পরিচয়পত্র ও প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র সাথে নিয়ে ঘুরি না। এমন হবে জানলে তো সবকিছু নিয়ে বাসা থেকে বের হতাম। অবশ্য তিনি নানা প্রশ্নের মুখে পড়ে অবশেষে নিজেকে পুলিশের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু তার মতো যারা পরিচয়পত্র দেখাতে পারেননি তাদের আটক করেছে পুলিশ।
কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এসেছেন স্বপন ইসলাম। তাকে সায়েদাবাদ এলাকায় পুলিশ তল্লাশি করে একপর্যায়ে তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। এরপর পাসওয়ার্ড নিয়ে মোবাইলটি তার কি না তা যাচাই করেন তারা।
স্বপন বলেন, দেশের একজন নাগরিক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেবে এটা তার রাজনৈতিক অধিকার। পুলিশও তাদের তল্লাশি করতে পারে। কিন্তু তাই বলে তার মোবাইলে থাকা যাবতীয় জিনিসপত্র ঘেঁটে দেখতে পারে না। এটা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ হিল কাফি ঢাকা মেইলকে বলেন, মোবাইল তল্লাশি করা হচ্ছে বিষয়টি এমন নয়। মূলত যাদের পরিচয়পত্র নেই বা জাতীয় পরিচয়পত্র দেখাতে পারছেন না আমরা তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য মোবাইলে ছবি যাচাই করে দেখছি। যাদের কাছে কোনো ধরনের পরিচয়পত্রই নেই শুধু তাদের যাচাই করার জন্য মোবাইল চেক করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে কেউ একেক সময় একেক ধরনের তথ্য দিলে তার পরিচয় নিশ্চিত হতে কী করা উচিত? তখন বাধ্য হয়ে পুলিশ তার নাম ঠিক আছে কিনা মোবাইল যাচাই করে দেখছে। মানুষ বিভিন্ন কথা বলে। তবে তার নাম পরিচয় মোবাইলে থাকতে পারে। আমরা এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার দেখাইনি। তবে সন্দেহভাজন ৩৫ জনের মতো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মঞ্জিল মোরশেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, আসলে এগুলোর কোনো সুযোগ নেই। প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে- পুলিশকে আইন অনুযায়ী চলছে কি না সেটা আগে দেখতে হবে। পুলিশ তার নিজের ইচ্ছামতো এটা করছে কি না সেটাও দেখতে হবে। পুলিশ এগুলো সরকারি নির্দেশে করে।
তিনি আরও বলেন, মূলত নীতি নির্ধারকরা তাদের এসব সিদ্ধান্ত পুলিশের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে বলেই তারা এই কাজ করছে। তাছাড়া পুলিশ এমন কাজ করার কথা নয়। পুলিশের ট্রেনিং ও আইনের সাথে এটি মেলে না। যেহেতু মেলে না তাহলে তারা কোন সিদ্ধান্তের কারণে এমনটি করছে। এই দায় সরকারের।
এমআইকে/এইউ