থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকটি রাজনীতির জন্য ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
তিনি বলেছেন, ‘ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে আমাদের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক ঠিক থাকলেও রাজনৈতিক বিভিন্ন কারণে সম্পর্কের টানাপোড়ন ছিল। একটা দেশের সঙ্গে আরেকটা দেশের সম্পর্ক হবে সাম্যতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে। কিন্তু বিগত সময়ে ভারত আমাদের ওপর প্রভুত্বসুলভ আচরণ করে। সীমান্ত হত্যা, তিস্তার পানি চুক্তি, সংখ্যালঘু ইস্যুতে ভারত সবসময় আমাদের সঙ্গে নানা টালবাহানা করে আসছে। ভারত ও তার জনগণ আমাদের শত্রু নয়, কিন্তু ভারতের শাসকদল ক্ষমতাসীন বিজেপি চরম সাম্প্রদায়িক একটা দল।’
বিজ্ঞাপন
শনিবার (৫ এপ্রিল) বিকেলে খুলনা মহানগরীর আড়ংঘাটা ঈদগাহ ময়দানে থানা জামায়াতে ইসলামী কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার কথা তুলে ধরে জামায়াতের সেক্রেটারি বলেন, জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতা যখন তাদের ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করছিল তখন এদেশের ফ্যাসিস্ট ও স্যাডিস্ট শেখ হাসিনা তাদের ওপর জুলুম নির্যাতন করে ২ হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা ও ৩০ হাজারের অধিক জনগণকে আহত করেছে। খুন, গুম, অর্থ পাচারসহ দুই শতাধিক মামলার আসামি স্যাডিস্ট শেখ হাসিনার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুরু হয়েছে। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও রেড অ্যালার্ট জারি করেছে। অথচ এমন একজন অপরাধীকে আশ্রয় দেওয়া কোন অবস্থাতেই গণতান্ত্রিক দেশের কাছে কাম্য নয়।
থানা আমির মাওলানা মুনাওয়ার আনসারীর সভাপতিত্বে ও মু. রিয়াজুল ইসলাম এবং মাওলানা মাহদী আল-হাদীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন- জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা জেলা আমির মাওলানা এমরান হুসাইন, খুলনা মহানগরী সেক্রেটারি শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল, জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, মহানগরী সহকারী সেক্রেটারি প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম।
শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন- মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলন, মহানগর সহকারী সেক্রেটারি আজিজুল ইসলাম ফারাজী, মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্য যুব নেতা মুকাররম বিল্লাহ আনসারী, কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, দিঘলিয়া উপজেলা সেক্রেটারি মাওলানা মুশফিকুর রহমান, দৌলতপুর থানা আমির মাওলানা মুশাররফ আনসারী, আড়ংঘাটা থানার সাবেক আমির শেখ আশরাফ হোসেন, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের আড়ংঘাটা থানা সভাপতি অধ্যাপক শেখ শাহিনুল ইসলাম।
বিজ্ঞাপন
এ সময় খুলনা জেলা সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, খানজাহান আলী থানা সাবেক আমির আজিজুর রহমান স্বপন, শ্রমিক নেতা এস এম মাহফুজুর রহমান, কাজী মাহফুজুর রহমান, জাফর সাদিক আনসারী, ফিরোজ আহমেদ তুহিন, হুসাইন আহমদ, রফিকুল ইসলাম, সাজ্জাদ হোসেন তপুসহ স্থানীয় অন্যান্য নেতৃবৃন্দও ছিলেন।
জামায়াতের সেক্রেটারি বলেন, জামায়াত নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের বন্ধু। মানুষের দুঃখ, দুর্দশা লাঘবে জামায়াত সংগ্রাম করে যাচ্ছে। ইসলামী রাষ্ট্রের যে ধারণা মহান রব কুরআনে উল্লেখ করেছেন জামায়াত সেই আলোকেই এই দেশকে গড়তে চায়।
‘একটি শোষণ, বঞ্ছনা ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গড়বে যা চব্বিশের আন্দোলনের ছাত্র-জনতা বুকে ধারণ করে জুলুম নির্যাতন সয়েছে তবুও পিছপা হয়নি। ছাত্ররা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে স্বপ্ন দেখছে জামায়াত তার সঙ্গে একমত পোষণ করে। অতীতের জুলুম নির্যাতন দখলদারিত্ব মুক্ত বাংলাদেশ যদি নির্মাণ করা না যায়, তাহলে আমাদের নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন বৃথা যাবে।’
আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের সাবেক নেতৃবৃন্দের বিচার প্রসঙ্গে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, নিজেদের বিচারক, সাজানো সাক্ষী দিয়ে আমাদের নিরপরাধ নেতৃবৃন্দকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে যা জনগণ মেনে নেয়নি। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নামে ধর্ষণের মামলা দিয়ে জাতির সঙ্গে উপহাস করা হয়েছে।’
আগামী বছরের জুনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণায় জামায়াতের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের তিনটি স্তম্ভ- সাম্য, ন্যায়বিচার ও মানবিকতা। জামায়াতে ইসলামী এই তিনটিকে ধারণ করে আগামীর বাংলাদেশ গড়বে। আমাদের আমিরে জামায়াত মানবিক নেতা ডা. শফিকুর রহমান এমন একটি বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে। সুতরাং দেশের জনগণ যদি এই দায়িত্ব জামায়াতকে দেয়, তাহলে শোষকের ভূমিকাই নয় সেবকের ভূমিকা পালন করবে।’
‘জনগণ বিভিন্ন দলের শাসন দেখেছে বাকি রয়েছে শুধু ইসলামী দলের শাসন। আমাদের আলেম-ওলামা পীর মাশায়েখসহ ইসলামী সমমনা দলের সঙ্গে আলোচনা চলমান। ফলে আপনারা আগামীতে ইসলামের পক্ষের শক্তিকে ভোট দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় পাঠালে মানুষের প্রত্যাশা পূরণে সে সরকার কাজ করবে ইনশাআল্লাহ।’
প্রতিনিধি/এমআর