রাজধানীতে সমাবেশ করার অনুমতি পেয়েছে দেশের বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ইতোমধ্যে দুই দলকেই তাদের পছন্দের জায়গায় সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। অন্যদিকে অনুমতি না পেলেও ঢাকা যেকোনো মূল্যে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। সমাবেশ করার ঘোষণা এসেছে ছোট আরও কয়েকটি দলের পক্ষ থেকে। কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে এসব দল সমাবেশের ডাক দেওয়ায় রাজনীতির অঙ্গনে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনাবহুল ২৮ অক্টোবরে অনেকগুলো দল কর্মসূচি ঘোষণা করায় চাপা আতঙ্কে আছেন নগরবাসী।
সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছে বিএনপি ও তার সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। অন্যদিকে সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে এমন ঘোষণা দিয়ে ‘শান্তি সমাবেশ’ করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
বিজ্ঞাপন
এক দফা দাবি আদায়ে আজ রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। অন্যদিকে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশ করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এছাড়া সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনকারী শরিক রাজনৈতিক দলগুলো ও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করবে।
পাল্টাপাল্টি এসব সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীবাসীর মধ্যে চরম উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। কী হবে আজ তা নিয়ে রাজধানীবাসীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাটছেই না।
বিজ্ঞাপন
গতরাত থেকে আজ সকাল সাড়ে সাতটা পর্যন্ত সকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে নগরবাসীর এমন উৎকণ্ঠার বিষয়টি চোখে পড়েছে। বিশেষ করে দিনটি ২৮ অক্টোবর হওয়ায় উদ্বেগের মাত্রা একটু বেশি।
রংপুর থেকে চিকিৎসার জন্য রাতে টেকনিক্যাল মোড়ে নামেন সামসুল ইসলাম। স্ত্রীকে ডাক্তার দেখাবেন বলে এসেছেন। তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবর দুই দল কর্মসূচি দিয়েছে জেনেও এসেছি। গণ্ডগোল হতে পারে এমন আশঙ্কা নিয়েও এসেছি। কিন্তু আতঙ্কে আছি কখন কী হয়।
সেখানে কথা হয় শ্যামলী পরিবহনের এক সুপারভাইজারের সঙ্গে। তিনি বলেন, সমাবেশকে কেন্দ্র করে যদি জ্বালাও পোড়াও শুরু হয়, সেজন্য ভয়ে আছি। যাত্রীদের মধ্যেও এই ভয় রয়েছে। তিনি আরও জানান, পথে পথে পুলিশ বাসে তল্লাশি করছে। বিশেষ করে ঢাকার প্রবেশমুখে বেশি তল্লাশি করা হচ্ছে। এতে যাত্রীদের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
যাত্রাবাড়ী, গুলশান, কাওরানবাজার, বারিধারা, বিশ্বরোড, বিমানবন্দর, উত্তরা, ফার্মগেট এলাকা ঘুরেও যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা গেছে।
এদিকে অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ রাজধানীতে যানবাহনের সংখ্যা অনেক কম দেখা গেছে। সকাল থেকে ঢাকার সড়ক অনেকটাই ফাঁকা। সমাবেশকে কেন্দ্র করে নগরীতে বিশৃঙ্খলা হতে পারে এমন ধারণা থেকেই গাড়ি কম চলছে বলে জানান কয়েকজন বাসের চালক।
রাইদা পরিবহনের বাসের এক চালক ঢাকা মেইলকে বলেন, আজ কী হবে তা নিয়ে সবার মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কোনো সমস্যা হলে বাসে হামলা না হয় সেজন্য পরিবহন কম চলছে।
আরও পড়ুন
এদিকে একইদিনে কয়েকটি দলের সমাবেশ ঘিরে রাজধানীতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মাঠে রয়েছেন র্যাব, পুলিশের ১৫ হাজার সদস্য। নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছেন বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরাও।
ডিএমপি বলছে, কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ছাড়াই দুই দলের সমাবেশ যাতে শেষ হয় সেজন্য পুলিশ কাজ করছে। বাহিনীর ১৩ হাজার সদস্য মাঠে থাকবেন। সমাবেশেও উপস্থিত থাকবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সদস্য। তাছাড়া বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও মাঠে কাজ করছেন। এর মধ্যে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি), এনএসআই, সিআইডি, গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরাও রয়েছেন।
ডিএমপির যুগ্ম-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, 'ঢাকাবাসীর নিরাপত্তার জন্য যত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সব নেওয়া হয়েছে। যাতে কোনো ধরনের নাশকতা কেউ করতে না পারে। আমরা প্রায় ১৩ হাজার পুলিশ মাঠে রেখেছি।'
এমআর