মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

‘তেলের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা যেত, বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬ আগস্ট ২০২২, ০১:২২ এএম

শেয়ার করুন:

‘তেলের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা যেত, বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে’
ছবি: সংগৃহীত

সবধরনের জ্বালানি তেলের দামবৃদ্ধির জন্য একাধিক যুক্তি তুলে ধরেছে সরকার। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন— একসঙ্গে এত দাম না বাড়িয়ে এটি সহনীয় পর্যায়ে রাখা যেত। এতে করে সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।

শুক্রবার (৫ আগস্ট) মধ্যরাতে তেলের দাম বাড়ানোর পর জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম এমন মত তুলে ধরেছেন।


বিজ্ঞাপন


তিনি বলেন, দাম কিছুটা বাড়ানো হবে, এই আশঙ্কা ছিল। তবে সেটা সহনীয় পর্যায়ে রাখা যেত। যতটা বাড়ানো হয়েছে, তা চিন্তার বাইরে।

এর আগে নানা অজুহাতে দেশের বাজারে সবধরনের জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে লিটারে ৩৪ থেকে ৪৬ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিমের আশঙ্কা— হুট করে এত বেশি দাম বাড়ানোর চাপ অর্থনীতি নিতে পারবে না। 

এর আগে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এখন থেকে ডিজেলের দাম হবে ১১৪ টাকা লিটার, যা এত দিন ৮০ টাকা ছিল। এ ক্ষেত্রে দাম বাড়ানো হয়েছে ৩৪ টাকা। কেরোসিনের দামও একই হারে বাড়ানো হয়েছে। নতুন দর ডিজেলের সমান, অর্থাৎ ১১৪ টাকা লিটার। সাধারণত, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম সমান হয়।

ম. তামিম বলেন, ‘অর্থনীতিতে এর প্রতিঘাত অসহনীয় হয়ে উঠবে। করোনার কষাঘাত ও মূল্যস্ফীতির কারণে এমনিতে দরিদ্র মানুষ সীমাহীন কষ্টের মধ্যে আছে। এর মধ্যে অতিমাত্রায় যে দাম বাড়ানো হলো, তার প্রভাবে নিত্যপণ্যসহ পরিবহনের ভাড়া বাড়বে অনেক। যা কল্পনার বাইরে। সাধারণ মানুষের টিকে থাকা কঠিন হবে।’


বিজ্ঞাপন


শুক্রবার রাতে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে সরকারকে হয়তো দাম বাড়াতে হতো। কিন্তু একবারে এত বেশি বাড়ানো যুক্তিসঙ্গত হয়নি। সম্ভবত, সরকার জ্বালানি তেলের ওপর পুরো ভর্তুকিই তুলে নিয়েছে। দাম অল্প বৃদ্ধি করে কিছুটা ভর্তুকি সরকার রাখতে পারতো।’

ম. তামিম বলেন, ‘আমার ধারণা, সরকার আইএমএফের ঋণ নেওয়ার জন্য এই বিশাল পরিমাণ দাম বৃদ্ধি করলো। সম্ভবত আইএমএফের শর্ত ছিল যে জ্বালানি পণ্যে ভর্তুকি থাকলে তারা ঋণ দেবে না। কিন্তু এক ধাপে প্রায় ৫০ ভাগ দামবৃদ্ধি কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না। অন্যান্য দেশেও তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে, তবে এতটা বাড়ানো হয়েছে বলে আমার জানা নেই।’

বুয়েটের এই অধ্যাপক পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘ভবিষ্যতে তেলের দাম যখন বিশ্বে কমবে, তখন অবশ্যই সরকারকে দাম কমাতে হবে। কিন্তু সাধারণত দেখা যায়, বিশ্ববাজারে এই পণ্যের দাম বাড়লে দেশে বাড়ানো হয়। যখন কমে, তখন দেশে কমানো হয় না। এর আগে কম দামে আমদানি করে বিপিসি (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন) দেশে বেশি দামে বিক্রি করে অনেক টাকা লাভ করেছে। তখন দাম কমানো হয়নি।’

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, একবারে দেশের ইতিহাসে কখনোই জ্বালানি তেলের দাম এতটা বাড়ানো হয়নি। নতুন করে দাম নির্ধারণ করায় ভারতের সঙ্গে দামের পার্থক্য পুরোপুরি দূর করা হয়েছে। 

যদিও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ব্যাখ্যায় জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বিগত ছয় মাসে (ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত) জ্বালানি তেল বিক্রিতে ৮ হাজার ১৪ কোটি টাকার বেশি লোকসান দিয়েছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক তেলের বাজার পরিস্থিতির কারণে বিপিসির আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে যৌক্তিক মূল্য সমন্বয় অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

বিইউ/এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর