২.৩২ মিনিট। বার্ন ইনস্টিটিউটে পৌঁছাই আমি। সাথে ছিলেন সহকর্মী পার্থ দা। তারপর থেকে টানা লাইভ। ঘটনার ভয়াবহতা আর বীভৎসতা তখনো কল্পনার বাইরে। একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স। প্রতিটি থেকে নামছে ৩/৪ জন পোড়া শিশু। আমার নোরার বয়সী। তার চেয়ে কারো একটু কম, কেউবা বেশি। লাইভে ছিলাম বলেই শুরুর দুটি অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামানো দগ্ধ শিশুদের ছবি অনএয়ার হয়েছে। আর কোনো টিভি ক্যামেরাও ছিল না শুরুতে। ফলে ক্লোজ ছবি নিতে পেরেছেন পার্থ দা। দেখার পর, সেটি যে প্রচারযোগ্য নয়, সেটা আমরা বুঝতে পারি। দর্শককেও সরি বলি সেজন্য।
বিশ্বাস করুন, বুক ফেটে কান্না আসছিল তখন। পুড়ে অঙ্গার বাচ্চাগুলো নিস্তেজ, অপলক চেয়ে আছে। আস্তে আস্তে গণমাধ্যমের ঊর্বরভূমি বাংলাদেশের সব মিডিয়া পৌঁছায় সেখানে। টিভি, পত্রিকা, অনলাইন শত শত সাংবাদিক।
বিজ্ঞাপন
এর বাইরেও সবাই নিজ নিজ মোবাইল দিয়ে রেকর্ড করছে। ভাবুন, আপনার ছেলে বা মেয়েটি পুডে গেছে, তার গায়ে কাপড় নেই, কাতরাচ্ছে। সেই ছবি তোলায় ব্যস্ত সবাই। কেমন লাগবে? তাও ক্লোজ ছবি! আমি অনেকক্ষণ পর মাইলস্টোনের পোশাক পরা দুজন ছেলেকে পেলাম। তারা সুস্থ। অন্যদের সহায়তা করছে।
বিনয়ের সাথে চেষ্টা করলাম কথা বলার। কিন্তু যে ক্রাইসিস তারা দেখেছে, পার করেছে, তাতে আসলে কিছুই তারা বলতে পারেনি, উল্টো রাগান্বিত হয়েছে। ‘সরি বাবা’ বলে সরে এসেছি। মনে হয়েছে, আসলেই তো, ভুল আমার। অথচ সেখানেই কত মা কে, বাবা কে আমার সাংবাদিক সহকর্মীরা কেউ কেউ অনুভূতি জিজ্ঞেস করছেন, অন এয়ার বীভৎস ছবি দেখালেন!

এই যে এত টিভি, পত্রিকা, অনলাইন..শত শত ক্যামেরা, এগুলো বার্ন ইউনিটের ভেতরে ঢুকে গেছে! ভাবেন! বেডে শোয়া দগ্ধ মানুষকে ইন্টারভিউ করেছেন। অর্ধডজন উপদেষ্টা ভেতরে গেছেন, অনেকেই তাদের ফলো করে গেছেন।
বিজ্ঞাপন
পোড়া রোগীদের ইউনিটে এভাবে আর কোনো দেশে সাংবাদিক ক্যামেরা যায় না। উন্নত দেশ বাদ দেন, নেপালের ভূমিকম্পের সময়ও কোনো সাংবাদিককে হসপিটালে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আমরা ঢুকি। আমাদের শীর্ষ নেতারা ঢোকেন। আমরা সংস্কৃতি থেকে স্বরাষ্ট্র সব উপদেষ্টা আসেন, হাসপাতালে। সাংবাদিকতার নামে অসভ্যতাও করি, করছি আমরা।
যে পাইলট ভাইটি জীবন দিলেন, যে বাবা মা সন্তান হারালেন, যার সন্তান মৃত্যু শয্যায়, তারা কি আমাদের ক্ষমা করবেন?
লেখক: বিশেষ প্রতিনিধি, যমুনা টেলিভিশন















































































































































