শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনায় ভাইয়ের পোড়া মরদেহের পাশে স্তব্ধ বোন

জেলা প্রতিনিধি, বান্দরবান
প্রকাশিত: ২৩ জুলাই ২০২৫, ০৫:০৫ পিএম

শেয়ার করুন:

মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনায় ভাইয়ের পোড়া মরদেহের পাশে স্তব্ধ বোন

‘ভাই আমাকে একা রেখে কেন চলে গেলে?’ এমন  বুকভাঙা আহাজারিতে ভেঙে পড়েন হ্যাপী মারমা, যিনি ভাইয়ের দগ্ধ মরদেহের সামনে নির্বাক দাঁড়িয়ে ছিলেন।

ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী উক্য ছাইং মারমা। তার দগ্ধ মরদেহ শনাক্ত করার সময় পাশে ছিলেন তার ফুফাতো বোন হ্যাপী মারমা।


বিজ্ঞাপন


IMG-20250723-WA0017

পাহাড়ি জনপদ বান্দরবান ও রাঙামাটি বাঙ্গালহালিয়া এলাকার সন্তান এই দুই ভাইবোন-উক্য ছাইং ও হ্যাপী। তারা ছিলেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আবাসিক শিক্ষার্থী। হ্যাপী দশম শ্রেণিতে বাংলা মাধ্যমে, আর উক্য ছাইং পড়তো ইংরেজি মাধ্যমে সপ্তম শ্রেণিতে। এক ছাদের নিচে, এক হোস্টেলে থেকে তাদের দিনরাত কেটেছে একসাথে। হ্যাপীর কাছে উক্য ছাইং শুধু ভাই নয়, ছিল সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু।

thumbnail_FB_IMG_1753102787985

২১ জুলাই সকাল। ক্লাস শেষে হ্যাপী হোস্টেলে ফিরছিলেন। হঠাৎ চারদিক কেঁপে ওঠে বিকট বিস্ফোরণে। তখনও হ্যাপী  ফ্রেশ হয়নি। হঠাৎ বিকট শব্দ শুনেন। মুহূর্তেই বিল্ডিংটা কাঁপতে শুরু করে। সবাই দৌড়াতে থাকে। কানে কিছুই আসছিল না। জানালার পাশে গিয়ে দেখেন-স্কুল ভবন থেকে আগুন বের হচ্ছে, বর্ণনা দেন হ্যাপী।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন

দেশীয় বন্দুক পরীক্ষা করতে গিয়ে ভ্রমণে আসা অপর বন্ধু নিহত 

পরে ছুটে গিয়ে যা দেখেন, তা ছিল এক জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন। আগুনের নিচে ধ্বংস হয়ে যাওয়া সেই বিমানের ধ্বংসস্তূপ পড়েছিল ঠিক উক্য ছাইংয়ের শ্রেণিকক্ষে। নিচে গিয়ে দেখেন ভাইটা আগুনের লেলিহান শিখায় পুরো শরীর ঝলসে গেছে, বলতেই অঝোরে কাঁদতে থাকেন হ্যাপী।

thumbnail_FB_IMG_1753101812949

ঘটনার পর হ্যাপী বাবাকে ফোনে সব জানান। পরে উক্য ছাইংকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেওয়া হলেও শেষরক্ষা হয়নি। ভাইয়ের মৃত্যু যেন হ্যাপীর হৃদয়ে চিরস্থায়ী এক শূন্যতা তৈরি করেছে। ‘ভাই নেই, আমি একা কাকে নিয়ে ঢাকায় যাব?’—প্রশ্ন করে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। এখনও কিছুই খেতে পারছেন না। কেউ খেতে বললে বলেন, ‘ভাইয়ার জন্য খাবার কোথায়?’

thumbnail_FB_IMG_1753154143505

হ্যাপীর বাবা, শৈক্যচিং মারমা কাঁপা কণ্ঠে বলেন, ছেলেমেয়েকে ভালো শিক্ষায় শিক্ষিত করার স্বপ্ন নিয়ে বান্দরবান থেকে ঢাকায় পাঠিয়েছিলাম। মেয়েকে একা পাঠাতে সাহস হচ্ছিল না, তাই ভাগ্নেকেও সঙ্গে দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন ভাইপো নেই। মেয়েকে কীভাবে আবার একা ঢাকায় পাঠাব?

তিনি আরও বলেন, এই দুর্ঘটনায় শুধু আমার ছেলে না, আমাদের পরিবারের স্বপ্নটাই পুড়ে ছাই হয়ে গেল।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর