রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটেছে। এরপরই শুরু হয় ফায়ার সার্ভিস ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্ধার অভিযান।
সোমবার (২১ জুলাই) বিকেলের দিকে আহতদের উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে আসা হয় ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে। পরে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আহতদেরকে একে একে দেখতে আসেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও রাজনীতিবিদরা। সেইসঙ্গে রয়েছে উৎসুক জনতার ভিড়। এতে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন হাসপাতালে আসা আহতদের স্বজন ও সংশ্লিষ্টরা।
বিজ্ঞাপন
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আহতদের দেখা শেষে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে হাসপাতালের ভেতরে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গেলেও অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে তারা কথা বলতে পারেননি। পরে প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য সহকারী সাইদুর রহমান সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তখন সামনে দাঁড়ানো নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। শফিকুল আলমকে তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে দেখা যায়।

বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জামায়াতের আমির আহতদের দেখে বের হন। তখন তার সঙ্গে শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার পর গণমাধ্যমকর্মীরা তাকে ঘিরে ধরলে হাসপাতালের সামনের পথ কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সবাইকে নিয়ে হাসপাতালের উত্তর গেইটের দিকে সরে যান জামায়াতে ইসলামীর আমির। এই ধরনের সংকটের মুহূর্তে এভাবে নেতাকর্মীদের নিয়ে গেইটের সামনে ভিড় করায় উপস্থিত সবাইকে বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা যায়। এছাড়া আহতদের পরিদর্শনকালেও অনেক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। যার ফলে চিকিৎসা কার্যক্রমে ব্যঘাত ঘটে।
জামায়াতের আমিরের পর আহতদের দেখতে আসেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসময় তার সঙ্গে ছাত্রদল-যুবদলের অসংখ্য নেতাকর্মীদের দেখা যায়। হাসপাতালে প্রবেশের সময় আগত নেতাকর্মীদের হাসপাতালের বাইরে থাকতে বারবার বলতে থাকেন তিনি। এতেও নেতাকর্মীরা কথা না শুনলে কিছুটা মেজাজ হারান তিনি। এসময় একটি অ্যাম্বুলেন্স আসে। তখন মির্জা ফখরুল নিজেই অ্যা্ম্বুলেন্সকে ঢুকতে সাহায্য করেন।
বিজ্ঞাপন
এছাড়া বিএনপির নেতা রুহুল কবির রিজভীও আহতদের দেখতে আসেন। এসময় তার সঙ্গে আরেক নেতা এ্যানিও ছিলেন। তাদের সঙ্গে্ও অনেক নেতাকর্মীর ভিড় ছিল।
এমন সংকটের মুহূর্তে নেতাকর্মীদের নিয়ে হাসপাতালে নেতাদের ভিড় করাকে ভালো চোখে দেখেননি হাসপাতালে উপস্থিত সকলে। তারা বলেন, এমনিতেই সংকটের সময়। কিছুক্ষণ পর পর অ্যাম্বুলেন্সে করে রোগী আসছে। এসময় নেতাকর্মী নিয়ে ভিড় করে চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যহত করা কেমন রাজনীতি।
বার্ন ইনস্টিটিউটে ভাগনিকে খুঁজতে এসেছেন আসাদুজ্জামান নামে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, সংকটের মধ্যে আরেকটি হলো এত ভিড়। আর একেকজন দেখতে আসে অনেক কর্মী বাহিনী নিয়ে, হাঁটতে কষ্ট হয়। এছাড়া প্রয়োজনের তুলনায় বেশি সেচ্ছাসেবক রয়েছে এখানে। তারাও সমস্যা তৈরি করছে।

রফিকুল ইসলাম নামে একজন ঢাকা মেইলকে বলেন, হাসপাতাল ও হাসপাতাল এলাকায় এত মানুষের কোনো দরকার নাই। সহযোগিতা করার মতো অল্প কিছু লোকই যথেষ্ট। এখানে ভিড় করলে চিকিৎসায় সমস্যা হবে, ডাক্তার-নার্সরা ঠিকমতো কাজ করতে পারবে না। তাদেরকে সহযোগিতা করা প্রয়োজন।
এ নিয়ে ফেসবুকেও ফুঁসে উঠেছেন নেটিজেনরা। জেসমিন পাপড়ি নামে একজন লিখেছেন, ‘জামায়াতের আমির গেলেন বার্ন ইনস্টিটিউটে, পুরা রাস্তা আটকা; একের পর এক অ্যাম্বুলেন্সের রাস্তা ব্লক। এরপর বিএনপি মহাসচিব গেলেন, চারটা অ্যাম্বুলেন্সের রাস্তা ব্লক। বাংলাদেশের রাজনীতি...।’
জাফর ইকবাল নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী নেতাদের হাসপাতাল পরিদর্শনের কয়েকটি ছবি শেয়ার করে লিখেন, ‘এরা কি দলবল নিয়ে দুর্ঘটনায় আহতদের উদ্ধার করতে গেছিল? আমরা জাতি হিসেবে কতটা সৌভাগ্যবান একবার ভাবুন– এত বড় বড় ও বয়স্ক রাজনৈতিক নেতারা বিমান দুর্ঘটনায় আহতদের উদ্ধারে নিজেরা ছুটে গেছেন। তারা একবারের জন্যও নিজেদের কথা ভাবেন নাই। বিমান বাহিনীর বিমানে বিস্ফোরকও থাকতে পারে। এসব বিস্ফোরক পরবর্তীতে বিস্ফোরিত হয়ে তাদের জীবনও ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। এসব জেনেশুনেও আমাদের রাজনীতিবিদরা শিশুদের উদ্ধারে ছুটে গেছেন। মহান আল্লাহর কাছে আপনাদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি ।’
কেশব রায় নামে ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘২০০ ফুট রাস্তা ২০০টা সংগঠনের ২০০ করে স্বেচ্ছাসেবক ভাবেন বিষয়টা।’
উল্লেখ্য, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১৭১ জন। তবে সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
এসএইচ/এফএ















































































































































