শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

দাদাবাড়ির সেই সফরই হয়ে রইল নিঝুম-নাফির শেষ স্মৃতি

ইব্রাহিম আকতার আকাশ, ভোলা
প্রকাশিত: ২৩ জুলাই ২০২৫, ০২:৩৪ পিএম

শেয়ার করুন:

দাদাবাড়ির সেই সফরই হয়ে রইল নিঝুম-নাফির শেষ স্মৃতি
নিঝুম ও নাফি সর্বশেষ ২০২২ সালে বাবা-মায়ের সঙ্গে দাদাবাড়ি ভোলায় বেড়াতে এসেছিল।

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে আগুনে দগ্ধ দুই ভাই-বোন—নাজিয়া তাবাসসুম নিঝুম (১৩) ও আরিয়া নাশরাফ নাফি (৯)—চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। বড় বোন নিঝুমের মৃত্যুর ১৪ ঘণ্টা পর না ফেরার দেশে পাড়ি জমায় ছোট ভাই নাফি।

দুই ভাই-বোনের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে ভোলার দৌলতখান উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের দক্ষিণ জয়নগর গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে স্বজনদের আহাজারিতে। সন্তান হারানোর শোকে বাকরুদ্ধ বাবা-মা, বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন দাদা।


বিজ্ঞাপন


একসঙ্গে স্কুলে, একসঙ্গে বিদায়
নাজিয়া তাবাসসুম নিঝুম ছিল মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। ছোট ভাই আরিয়া নাশরাফ নাফি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত একই প্রতিষ্ঠানে। সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে স্কুল চত্বরে একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে আগুন লাগলে সেখানে গুরুতর দগ্ধ হয় তারা।

নিঝুমের শরীরের বড় অংশ পুড়ে গেলে তাকে দ্রুত জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। রাত ৩টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে। ছোট ভাই নাফির শরীরের ৯৫ শতাংশ দগ্ধ হওয়ায় তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি—মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা ৩০ মিনিটে সেও মারা যায়।

দাফন ও শোকাবহ গ্রাম
ভাইয়ের চিকিৎসা চলায় নিঝুমের মরদেহ গ্রামে নেওয়া সম্ভব হয়নি। মঙ্গলবার দুপুরে তাকে উত্তরা কবরস্থানে দাফন করা হয়। এরপর রাতে ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর খবর আসে। দুই ভাই-বোনের মৃত্যুতে ভোলা গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। খেলার সাথীরা কাঁদছে, চাচাতো ভাই-বোনেরা বিলাপ করছে, দাদার মুখে শুধু একটাই কথা—‘এরা তো সবে বাঁচতে শিখেছিল।’

স্বপ্নের পতন
নিঝুমের চাচা হাসান জানান, সন্তানদের ভালো মানুষ করতে আশরাফুল ইসলাম নিরব ১৫-১৬ বছর আগে পরিবার নিয়ে ভোলা থেকে ঢাকায় চলে আসেন। মাইলস্টোন স্কুলে ভর্তি করান ছেলেমেয়েকে। কিন্তু এক দুর্ঘটনায় ভেঙে গেল সব স্বপ্ন, শেষ হয়ে গেল এক সুখী পরিবার।


বিজ্ঞাপন


শেষ স্মৃতি হয়ে থাকল দাদাবাড়ির সফর
নিঝুম ও নাফি সর্বশেষ ২০২২ সালে বাবা-মায়ের সঙ্গে দাদাবাড়ি ভোলায় বেড়াতে এসেছিল। গ্রামের মাটি, খেলার মাঠ, দাদার হাত ধরে হাঁটা—সবকিছুই এখন শুধুই স্মৃতি। সেই সফরই তাদের জীবনের শেষ গ্রামভ্রমণ হয়ে রইল।

প্রতিনিধি/একেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর