লাখো মানুষের অংশগ্রহণে সম্পন্ন হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জানাজা। জনসমুদ্রের মতো ভিড়, শোকস্তব্ধ পরিবেশ আর এক হৃদয়স্পর্শী নীরবতা মিলিয়ে এই জানাজা যেন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বিরল অধ্যায় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড সৃষ্টি করা এই জানাজায় জনস্রোতের খবর গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংবাদমাধ্যমগুলো।
রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ সাবেক তিনবারের এই প্রধানমন্ত্রীর জানাজার জন্য নির্ধারিত থাকলে মানুষের ভিড় সংসদ ভবন এলাকা ছাড়িয়ে ফার্মগেট, বিজয় সরনি, আগারগাঁও, কারওয়ানবাজার, বাংলামোটর, তেজগাঁওসহ আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
বিজ্ঞাপন
দুপুর ২টায় জানাজার সময় নির্ধারিত থাকলেও তা অনুষ্ঠিত হয় তিনটার কিছু সময় পর। তবে ভোর থেকেই মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও এর আশপাশের এলাকায় মানুষের ঢল নামে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা অগণিত মানুষ প্রিয় নেত্রীকে শেষবারের মতো একনজর দেখতে রাজধানীজুড়ে জনস্রোত তৈরি করে। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেক জানাজার নামাজ পড়ান।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে দেশের দূর-দূরান্ত থেকে সর্বস্তরের অসংখ্য মানুষ সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হয়েছে। সেইসাথে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরাও খালেদা জিয়াকে শেষ বিদায় দিতে বাংলাদেশে এসেছেন। মানুষের ভিড় সংসদ ভবন এলাকা, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ছাড়িয়ে আগারগাঁও, বিজয় স্মরণি, এলিভিটেড এক্সপ্রেসওয়ে পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে রাজধানী ঢাকায় জড়ো হয়েছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। প্রিয় নেত্রীকে বিদায় জানাতে সারা দেশ থেকে ছুটে এসেছেন লাখ লাখ শোকাহত মানুষ। ভারত ও পাকিস্তানসহ বিবিন্ন দেশের উচ্চপদস্ত কর্মকর্তারাও এ সময় উপিস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক উপিস্থিতির কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ১০ হাজার সদস্য নিরাপত্তা ও রাস্তায় শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য দায়িত্ব পালন করেছেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপিন্ডেন্ট জানিয়েছে, বুধবার রাজধানী ঢাকায় বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিয়েছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। সকাল থেকেই ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে মানুষের ঢেউ সংসদ ভবনের বাইরে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠানস্থলের দিকে ছুটে আসছিল। খালেদা জিয়াকে শ্রদ্ধা জানাতে ভারত ও পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও ঢাকায় এসেছেন।
মার্কিন বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে সকাল থেকেই ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জড়ো হন। এমনকি কয়েক কিলোমিটার দূরে প্রধান রাস্তাতেও জনতার স্রোত দেখা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছানোর সময় অনেকেই কাঁদছিলেন, খারেদা জিয়াকে তাদের ‘মা’ বলে ডাকছিলেন, কেউ কেউ গ্রামাঞ্চল থেকে রাতভর ভ্রমণ করে জানায় যোগ দিয়েছিলেন।
পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের শিরোনাম, ‘রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় খালেদা জিয়ার জানাজা সম্পন্ন, শোকাহত বাংলাদেশ’।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিপুল জনতার সমাগমে বুধবার বাংলাদেশ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষ বিদায় জানানো হয়েছে। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিকও খালেদার জিয়ার প্রতি শ্রদ্দা জানাতে বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। তিনি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে যান এবং তার ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জানাজায় সংসদ ভবনের সামনে জড়ো হয়েছেন লাখ লাখ শোকাহত মানুষ। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস. জয়শঙ্কর বিএনপির র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন এবং খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করেছেন এবং ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সমবেদনা জানিয়েছেন। এসময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি চিঠিও তারেক রহমানের কাছে হস্তান্ত করেন জয়শঙ্কর।
একই রকম খবর প্রকাশ করেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি, আনন্দবাজারসহ ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।

















































































































































