বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

৫ বছরে ৪৮৪ দিন কেটেছে হাসপাতালে, শেষ বেলাতেও ছাড়েননি মাতৃভূমি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:১৩ পিএম

শেয়ার করুন:

Khaleda zia
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি

জীবনের শেষ পাঁচ বছরে হাসপাতালের শয্যাতেই কেটেছে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জীবনের একটি বড় অংশ। কখনো কারাবন্দি অবস্থায়, কখনো মুক্ত থেকেও গুরুতর অসুস্থতায় এই সময়কালে তাকে মোট ৪৮৪ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সেই হাসপাতালের শয্যাতেই, দেশের মাটিতে, না ফেরার দেশে পাড়ি জমান দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী।

মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় ৮০ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন খালেদা জিয়া। এর আগে টানা ৪০ দিন তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।


বিজ্ঞাপন


শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে রাজি হননি খালেদা জিয়া। ছেলে তারেক রহমানের চেষ্টা, পুত্রবধূদের অনুরোধ কিংবা চিকিৎসকদের আগ্রহ কোনোটিই তাকে সিদ্ধান্ত বদলাতে পারেনি। মেডিকেল বোর্ডের ওপর পূর্ণ আস্থা রেখে দেশেই চিকিৎসা নিতে চেয়েছেন তিনি।

অবশ্য চলতি বছরের শুরুর দিকে শারীরিক অবস্থা কিছুটা ভালো থাকার সময় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্যে চিকিৎসা নিয়েছিলেন।

মেডিকেল বোর্ডের এক সদস্য জানান, মঙ্গলবার ভোরের দিকে খালেদা জিয়ার হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে। দ্রুত পরিবারকে জানানো হয়। ভোর সাড়ে ৫টার পর হার্ট বিট দ্রুত কমতে থাকে। এ সময় মায়ের শয্যাপাশে দাঁড়িয়ে দোয়া করেন তারেক রহমান। ভোর ৬টায় চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।


বিজ্ঞাপন


মৃত্যুর সময় হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান, মেয়ে জাইমা রহমান, প্রয়াত ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমানসহ পরিবারের সদস্যরা। এ সময় আবেগঘন পরিবেশে কোকোর স্ত্রী শামিলা রহমান হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। অনেক চিকিৎসকও ফুঁপিয়ে কাঁদেন।

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, দেশেই চিকিৎসা নিতে চেয়েছিলেন দেশনেত্রী। বিদেশে যাওয়ার কথা একবারও বলেননি। মেডিকেল বোর্ডের ওপর ওনার পূর্ণ আস্থা ছিল। তিনি ছিলেন অভিভাবকের মতো মাতৃস্নেহে চিকিৎসক ও সহকর্মীদের খোঁজখবর নিতেন।

তিনি জানান, জ্ঞান থাকা পর্যন্ত চিকিৎসকদের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেছেন খালেদা জিয়া। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে তার ডায়ালাইসিস শুরু হয় এবং পরে ইলেকটিভ ভেন্টিলেশনে নেওয়া হলেও চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা ছিল তার।

দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসের পাশাপাশি কিডনি, লিভার, ফুসফুস, হৃদরোগ ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন খালেদা জিয়া। গত পাঁচ বছরে একাধিকবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। এই সময়ে মোট ৪৮৪ দিন হাসপাতালের শয্যায় কাটিয়েছেন তিনি।

সর্বশেষ গত ২৩ নভেম্বর তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ২৭ নভেম্বর নেওয়া হয় সিসিইউতে, পরে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।

একনজরে খালেদা জিয়ার চিকিৎসাসংক্রান্ত তথ্য-

  • ৬ অক্টোবর ২০১৮: কারাগার থেকে অসুস্থ অবস্থায় বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়।
  • ২৫ মার্চ ২০২০: সরকারের নির্বাহী আদেশে হাসপাতাল থেকে বাসায় আসেন।
  • ১১ এপ্রিল ২০২১: কোভিড-১৯ পরীক্ষায় পজিটিভ রিপোর্ট আসে।
  • ২৭ এপ্রিল ২০২১: কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য প্রথমবার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন।
  • ১৯ জুলাই ২০২১: কোভিড-১৯ টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেন।
  • ১১ জুন ২০২২: হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মধ্যরাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন।
  • ২৪ জুন ২০২২: হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন।
  • ৬ আগস্ট ২০২৪: রাষ্ট্রপতির নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান।
  • ৭ জানুয়ারি ২০২৫: উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান।
  • ৫ মে ২০২৫: চিকিৎসা শেষে ঢাকায় ফেরেন।
  • ১৯ জুন ২০২৫: এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন।
  • ২৪ জুলাই ২০২৫: আবার মধ্যরাতে হাসপাতালে ভর্তি।
  • ২৮ আগস্ট ২০২৫: স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হয়।
  • ১৫ অক্টোবর ২০২৫: রাত্রে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি।
  • ২৩ নভেম্বর ২০২৫: সর্বশেষ এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি।
  • ২৭ নভেম্বর ২০২৫: সিসিইউতে নেওয়া হয়।
  • ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫: মৃত্যুবরণ করেন।

বিইউ/এমআই

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর