মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়াকে খুব কাছে থেকে দেখা

প্রফেসর মুহাম্মদ কামরুজ্জামান
প্রকাশিত: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৫৯ পিএম

শেয়ার করুন:

KHALEDA
বেগম খালেদা জিয়া। ছবি: সংগৃহীত

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কফিনবন্দী ক্ষত-বিক্ষত লাশ যেদিন বেগম খালেদা জিয়ার বাসায় এসেছিল সেদিন প্রথম ওই বাসায় গমন এবং বাকরুদ্ধ সৌম‍্যমূর্তি তূল‍্য এই মহিয়সী মহিলাকে প্রথম দেখেছিলাম। তিনি সেদিন এরশাদকে বলেছিলেন, ‘তোমরা তাঁকে বাঁচতেও দিলে না?’ বলে কেঁদে ফেলেছিলেন। তাঁর বাসভবনের খুব কাছে আদমজী ক‍্যান্টনমেন্ট কলেজের প্রভাষক হিসেবে তখন কর্মরত ছিলাম। পরে প্রয়াত এয়ার ভাইস মার্শাল এম কে বাশার এর স্ত্রী একদিন আমাকে তাঁর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন জিয়া খালেদা দম্পতির জেষ্ঠপুত্র তারেক রহমানের গৃহশিক্ষক হিসেবে তার সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন‍্য। তাঁর বিনয় এবং ভদ্রোচিত ব‍্যবহারে আমি সেদিন বিমোহিত হয়েছিলাম।

পড়ানো শুরু করার দুয়েকদিন পরই ছেলের পড়াশোনার খোজখবর নিতে তারেক রহমানের রিডিং রুমে এসে আমাকে প্রসঙ্গক্রমে বললেন- ঢাকা বিশ্ববিদ‍্যালয়ের আহত ছাত্রদের দেখতে তিনি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছিলেন। উল্লেখ‍্য, এরশাদের মজিদ খান শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে ছাত্ররা তখন আন্দোলন করছিল। আরও বললেন যে, অন‍্যান‍্য বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দের প্রায় সবাই তখন গ্রেফতারের ভয়ে পলাতক, কিন্তু তিনি এরশাদের সামরিক শাসনকে ভয় পান না, তাই তিনি নিজের দায়িত্ববোধ থেকেই ওই গুরুত্বপূর্ণ কর্তব‍্যটি সম্পাদন করতে গিয়েছিলেন।


বিজ্ঞাপন


সামরিক শাসন জারির পর ওই সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়। সামরিক শাসকের পদবীর সাথে প্রেসিডেন্টের পালক লাগাবার সময় আশীর্বাদ গ্রহণের নামে এরশাদ তাঁর বাসায় আসতে চাইলেও তাকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। শপথ গ্রহণের দিন এরশাদ বিনা অনুমতিতে তাঁর বাসভবনে ঢুকে গেলে তার সাথে সাক্ষাৎ করবেন না বলে তিনি তাঁর বেডরুমে নিজেকে আবদ্ধ করে রেখেছেন, বের হননি। ব‍্যর্থ মনোরথ হয়ে এরশাদকে ফিরে যেতে হয়। এগুলো সবই তাঁর রাজনীতিতে প্রবেশ করার আগের ঘটনা।

602985347_10173123074135591_74750712072204055_n

রাজনীতিতে প্রবেশ করার পর তাঁকে ঠেকাবার জন‍্য এরশাদ অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু খুব কমই সফল হয়েছে। বস্তুত, তাঁর ব‍্যক্তিত্ব এবং জনপ্রিয়তাকে এরশাদ বাঘের মতো ভয় পেত। তিনি শহীদ জিয়ার ন‍্যায় সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন। রেশনের চাল খেতেন। তাঁর কনিষ্ঠ পুত্রের জন্মদিনে খিচুড়ি রান্না করা হয়েছিল, তবে তা রেশনের চালের খিচুড়ি। একজন অতিথি হিসেবে আমারও তা খাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল।

বেগম খালেদা জিয়া নিজ বাসগৃহে বসেবসে বিএনপি ও অন্যান‍্য বিরোধী নেতাদের ডেকেডেকে এনে গণণন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, সংগঠিত করেছেন এবং শক্তি ও সাহস যুগিয়েছেন।


বিজ্ঞাপন


যখন আন্দোলনে নেমেছেন তখন দিন রাতের পার্থক‍্য না করে, ঘুম নিদ্রা হারাম করে একজন অকুতোভয় যোদ্ধার ন‍্যায় লড়াই করে গেছেন। এরশাদের স্বৈরাচার তাঁর বিরূদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র করেছে নৈতিক অপবাদ দেওয়ার অপচেষ্টা করেছে, কিন্তু হারাতে পারেনি। তিনি বাংলাদেশের প্রথম মহিলা রাষ্ট্রপতি হবেন বলে আমি তাঁর জেষ্ঠপুত্রের কাছে ভবিষ‍্যৎবাণী করেছিলাম। পরে সরকার পদ্ধতি পরিবর্তন হওয়ায় তিনি প্রথম এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।

তিনি তাঁর সব দায়িত্ব পালন করে গেছেন। এখন আমাদের দায়িত্ব হলো শহীদ জিয়া এবং বেগম খালেদা জিয়ার আদর্শ বাস্তবায়ন করা।

মহান করুণাময় আল্লাহ তাঁকে ও শহীদ জিয়াকে তাদের কাজের জন‍্য সর্বোচ্চ পুরস্কারে পুরস্কৃত করুন। আমিন।

লেখক: সাবেক প্রিন্সিপাল ও অধ্যাপক

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর