মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হয়েই অর্থনৈতিক সংস্কারে জোর দেন খালেদা জিয়া

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:৩৫ পিএম

শেয়ার করুন:

প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হয়েই অর্থনৈতিক সংস্কারে জোর দেন খালেদা জিয়া
বেগম খালেদা জিয়া

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালের ২০ মার্চ প্রথমবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ৩৯ দিনের মাথায় শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বিপর্যস্ত হয় দক্ষিণ বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। সীমিত ত্রাণ ও পুনর্বাসন সামগ্রী থাকা সত্ত্বেও বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকার সে সময় দুর্যোগ পরিস্থিতি দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করে।

খালেদা জিয়ার প্রথম মেয়াদে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নেওয়া হয় একাধিক কাঠামোগত সংস্কার। মূল্যস্ফীতির হার সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনা হয় এবং শিল্প ও কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। সরকার দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই ১৯৯১ সালে নতুন শিল্পনীতি ঘোষণা করা হয়, যার মাধ্যমে বেসরকারি ও বৈদেশিক বিনিয়োগের দ্রুত সম্প্রসারণ ঘটে। শতভাগ বিদেশি মালিকানা ও যৌথ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ায় বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাত উল্লেখযোগ্যভাবে বিকশিত হয়।


বিজ্ঞাপন


পশুসম্পদ খাতে সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতার ফলে দেশব্যাপী গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির খামার গড়ে ওঠে। একই সময়ে দেশে প্রথমবারের মতো বৈদেশিক মুদ্রা আংশিক বিনিময়যোগ্য করা হয় এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। উন্নয়ন বাজেটে বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরতা কমাতে নেওয়া পদক্ষেপের ফলে পাঁচ বছরে দেশীয় সম্পদের হিস্যা ২১ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪০ শতাংশে উন্নীত হয়।

রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে ১৯৯৩–৯৪ অর্থবছরে উৎপাদন ও আমদানি পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রবর্তন। পাশাপাশি মুক্তবাজার ও বাণিজ্যিক উদারীকরণ নীতির অংশ হিসেবে আমদানি শুল্ক উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা হয়।

কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে খাল-খনন কর্মসূচি পুনরায় চালু করা হয়। চতুর্থ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়, যার সিংহভাগই ছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষার জন্য। এসময়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, ব্যক্তিখাতে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ অনুমোদন এবং প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়। ‘শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য’ কর্মসূচি ও মেয়েদের মাধ্যমিক শিক্ষায় উপবৃত্তি চালুর মাধ্যমে শিক্ষায় অংশগ্রহণ বাড়ানো হয়।

যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে যমুনা বহুমুখী সেতুর ভৌত নির্মাণ শুরু, মেঘনা-গোমতী সেতু নির্মাণ, চট্টগ্রাম রেলস্টেশন আধুনিকীকরণ ও বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। একই সময়ে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি ও মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্পের প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন হয়।


বিজ্ঞাপন


আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ১৯৯৩ সালে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন ও খালেদা জিয়ার সার্ক চেয়ারপারসন নির্বাচিত হওয়া বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে। গণমাধ্যমের স্বাধীন পরিবেশে সংবাদপত্রের সংখ্যা দ্বিগুণ হয় এবং সিএনএন ও বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক স্যাটেলাইট চ্যানেলের সম্প্রচার শুরু হয়। এসময়ই দেশে মোবাইল টেলিফোন সেবার সূচনা হয়।

প্রশাসনিক সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো, পেনশন ব্যবস্থার সহজীকরণ, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ, কোস্টগার্ড ও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন গঠন করা হয়। একই সঙ্গে অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

টিএই/ক.ম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর