ছয় বছর পর অনুষ্ঠিত হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের শুরু থেকেই প্রার্থীরা একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছিলেন। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগের পাল্লা ভারী হয়।
বিশেষ করে ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেওয়া ছাত্রদল ও শিবিরের প্যানেলের প্রার্থীদের পাশাপাশি দুই সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারাও অভিযোগ তুলতে শুরু করেন।
বিজ্ঞাপন
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির তার সংগঠনের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ‘আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ অসত্য দাবি করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক শিবিরের ভাষায় কথা বলছেন।
অন্যদিকে শিবিরের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম সাদ্দাম অভিযোগ করে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা কেন্দ্র দখলের পায়তারা করছে।’
এর আগে মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল আটটা থেকে ঢাবির আটটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। চারটা পর্যন্ত চলবে। তবে এই সময়ের মধ্যে কেন্দ্রের সীমানায় যত সময় ভোটার থাকবে ততক্ষণ ভোট নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে সকাল থেকে শিবির ও ছাত্রদলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, কেন্দ্রগুলোতে শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেওয়ার জন্য এলেও বাইরে তেমন শৃঙ্খলা ছিল না। বিশেষ করে কেন্দ্রের আশেপাশে যেকোনো প্রচারণা এবং ১০০ গজের মধ্যে স্লিপ বা টোকেন বিতরণের ক্ষেত্রে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, তাও মানেননি অনেকে।
বিজ্ঞাপন
এছাড়া প্রার্থীদের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া, কার্ড থাকার পরও ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ ছিল সকাল থেকে। এমনকি সুযোগ থাকার পরও কোথাও প্রার্থী, কোনো কোনো কেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রবেশেও বাধা দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে প্রশাসন উপস্থিত থাকলেও প্রার্থীদের আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ- ভোটের ফলাফল নিয়ে বিতর্কের সুযোগ তৈরি হতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্রদল মনোনীত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম আবিদের বিরুদ্ধে নিয়ম ভেঙে কেন্দ্রে প্রবেশের অভিযোগ করা হয় সকালে। গণমাধ্যমে ফলাও করে তা প্রচারও হয়। কিন্তু পরে জানা যায় তিনি নিয়ম ভাঙেননি। কারণ প্রার্থী হিসেবে তিনি কেন্দ্রে প্রবেশের অধিকার রাখেন।
এদিকে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী অভিযোগ করে বলেছেন, ‘আমরা মিডিয়ায় দেখেছি, শিবিরের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে প্রশাসন কারচুপির প্রমাণ পেয়েছে। এটা এইমাত্র দেখলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, মানুষের বাক স্বাধীনতা যারা বিশ্বাস করে না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কখনোই মেনে না।
উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নিজের ভোট দেওয়ার পর তিনি বলেন, আমরা একুশে হল এবং রোকেয়া হলে দেখেছি পূরণকৃত ব্যালট দেওয়া হয়েছে। আমি রোকেয়া হলে প্রবেশ করেছি তার সত্যতা নিশ্চিত করেছি। অমর ২১ হলে প্রবেশ করেছি তার সত্যতা নিশ্চিত করেছি। সুতরাং আমরা যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আজকে নির্বাচন করেছিলাম সেই আকাঙ্ক্ষাকে ব্যাহত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, আমি আমার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছি মাত্রই। কিন্তু পরিস্থিতি আমার কাছে কোনো সুবিধাজনক মনে হচ্ছে না। গণতন্ত্র মানবাধিকার এবং মানুষের বাক স্বাধীনতাকে হরণ করার নতুন খেলা এবং অপচেষ্টা চলমান চলছে চারদিকে।
আবিদ আরও বলেন, যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো চারদিকে ঘটছে, নির্বাচন কমিশন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এগুলার বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত ব্যবস্থা নিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
এদিকে ডাকসু নির্বাচনে টিএসসির কেন্দ্রে পূর্বে ক্রস দেওয়া ব্যালট দেওয়ার অভিযোগ তোলেন উমামা ফাতেমার প্যানেলের প্রার্থী রূপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গা।
এ বিষয়ে কেন্দ্রের রিটার্নিং কর্মকর্তা ড. নাসরিন সুলতানা বলেন, ব্যালট পেপার নিয়ে বুথে ডোকার পর এমন অভিযোগ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
ওই প্রার্থীর অভিযোগ, তার পরিচিত এক ভোটার বুথে গিয়ে দেখেন সেখানে পূর্বেই সাদিক কায়েম এবং এস এম ফরহাদের পক্ষে ক্রস দেওয়া হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে ডাকসু নির্বাচন কমিশন সদস্য ও টিএসসি ভোট কেন্দ্রের রিটার্নিং কর্মকর্তা ড. নাসরিন সুলতানা বলেন, ‘অভিযোগের পর আমরা সবগুলো ব্যালট পেপার চেক করেছি। কোথাও এমন সমস্যা পাইনি। অভিযোগকারী ব্যালট পেপার হাতে নিয়েই এটি বলতে পারবেন। কিন্তু তিনি বুথে গিয়ে কিছুক্ষণ থেকে তারপর ফিরে এসেছেন। এরপর আবার এমন অভিযোগ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তারপরও আমরা তাকে একটি ফ্রেশ ব্যালট পেপার দিয়েছি।
ড. নাসরিন সুলতানা আরও বলেন, আমাদের ইতোমধ্যে ৬০ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়ে গেছে। নির্বাচনকে প্রশ্নবৃদ্ধ করার জন্য এটি করা হতে পারে। অথবা ওই শিক্ষার্থীই ভুল করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী এস এম ফরহাদ। তার দাবি, ছাত্রদল বারবার আচরণবিধি ভঙ্গ করছে এবং নির্বাচন কমিশন এসব বিষয়ে পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে।
এর আগে ভোটগ্রহণের শুরুর দিকেই শিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী সাদিক কায়েম অভিযোগ করে বলেছেন, ছাত্রদল আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে। নির্বাচন কমিশন যেন এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় সেই অনুরোধও করেছিলেন।
আর ডাকসু নির্বাচনে নানা অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ তুলে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আব্দুল কাদের ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘আমরা এমন ডাকসু নির্বাচন চাই নাই, যেখানে শিবির, ছাত্রদল আর বিএনপি জামায়াত মিলে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করবে। নির্বাচন কমিশন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভাগাভাগি করে শিবির-ছাত্রদলকে নির্বাচনে কারচুপি করতে, অনিয়ম করতে সহযোগিতা করেছে।’
বিইউ/এএইচ






















































































































