বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ভারী নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় রেমালে রূপান্তর হয়ে বাগেরহাটের উপকূলীয় উপজেলা মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, মোংলা ও রামপালে ৭ ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালাচ্ছে। রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ৪টায়ও চলছে ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডব। নিম্নাঞ্চল তলিয়ে মাছ ও কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে কাচা ঘর।
চারিদিকে অন্ধকার আর জলোচ্ছ্বাসের পানিতে থৈ থৈ করছে বাগেরহাটের উপকূলীয় এলাকা। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ। রেমালের তাণ্ডব লীলা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কারণে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক আরো বেড়েছে। কয়েক ফুট পানির নিচে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে রোববার সকাল থেকেই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন জেলার অধিকাংশ এলাকা। বিশেষ করে মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা, মোংলা ও রামপাল উপজেলার প্রায় অধিকাংশ এলাকায় সারা দিনই বিদ্যুৎ ছিল না। অন্যান্য এলাকায়ও বিদ্যুৎ ছিল যাওয়া-আসার মধ্যে। তবে জেলা সদরের পৌর শহরে রোববার রাত সাড়ে ১০টায়ও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু পল্লী বিদ্যুৎ সন্ধ্যা থেকে পুরোপুরি সরবরাহ বন্ধ রেখেছে।
ঝড়ো হাওয়ায় বিদ্যুতের লাইনে গাছপালা উপড়ে পড়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক সুশান্ত রায়।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, বাগেরহাট জেলায় ৪ লাখ ৮৫ হাজারের বেশি গ্রাহক রয়েছে। ঝড়ের প্রভাবে পল্লী বিদ্যুতের মূল সঞ্চালন লাইনের বিভিন্ন স্থানে গাছপালা উপড়ে পড়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঝড়ে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়েছে। এতে কমবেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দুর্যোগ শেষ হলে লাইনে কাজ করে বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় চালু করা হবে।
মোরেলগঞ্জ উপজেলার পশুর বুনিয়া সাইক্লোন সেল্টারে আশ্রয় নেয়া মোরারেক হোসেন বলেন, সিডর ও আইলার মত ঘূর্ণিঝড় দেখেছি কিন্তু জলোচ্ছ্বাস এতো দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। আশ্রয়কেন্দ্রের বাহিরে শুধু থৈ থৈ করছে পানি। কোনটা রাস্তা কোনটা পুকুর, বিল কিছুই বোঝার উপায় নাই।
সন্ন্যাসী বাজারের সাইক্লোন সেল্টারে আশ্রয় নেওয়া দেলোয়ার হোসেন বলেন, ৭ থেকে ৮ ফুট জলোচ্ছ্বাসের পানি যদি না নামে গবাদি পশু বাঁচানো যাবে না। মাছ আর কৃষি তো শেষ।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম তারেক সুলতান বলেন, মোরেলগঞ্জ উপজেলার দূর্যোগ প্রস্তুতিতে মেডিকেল অফিসার ডা. শেখ নাদিরুজ্জান আকাশকে টিম লিডার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে এবং ১৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় প্রত্যেকটি টিমে ৬ জন সদস্য নিয়ে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। ৫১টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রাখা হয়েছে। তবে পানি না কমলে দুর্ভোগ আরও বাড়বে।
/এএস