বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের তান্ডবে মিরসরাইয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সোমবার (২৭ মে) সকাল থেকে উপজেলার প্রায় ৯০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগবিহীন অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া অতিবৃষ্টিতে মুহুরী প্রজেক্ট এলাকার প্রায় ২৬ হেক্টর মৎস্য প্রকল্পের মাছ ভেসে গিয়ে প্রায় ৭৮ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দমকা বাতাসে ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ১০ হেক্টর আউশ বীজতলা ও ১৮০ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজী ক্ষেত নষ্ট হয়েছে।
জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের তান্ডবে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ো বাতাসে গাছ উপড়ে পড়ে টিনসেট ঘর ভেঙ্গে যাওয়ার পাশাপাশি বিদ্যুৎ লাইনের খুঁটি ভেঙ্গেছে ৩৭টি, তার ছিঁড়েছে ৩৪০টি স্পটে, ক্রস আর্ম ভেঙ্গেছে ৩৬টি।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (২৮ মে) সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত উপজেলায় প্রায় ৯০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগবিহীন অবস্থায় রয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠক রাশেল খান চৌধুরী বাবু বলেন, রেমালের তান্ডবে সোমবার সকাল থেকে এখন ৭টা পর্যন্ত আমাদের এখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎ অফিসে একাধিকবার ফোন দিয়েও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
মিঠানালা ইউনিয়নের বাসিন্দা তপু বলেন, রোববার রাত থেকে আমাদের এখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় ফ্রিজে থাকা মাংসসহ বিভিন্ন জিনিস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও মোবাইল বন্ধ থাকায় কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
অটোরিকসা চালক মো. জয়নাল বলেন, আজ দুইদিন আমাদের এইখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎ অফিসের কোনো লোকজন এখনও আসে নাই। বিদ্যুৎ না থাকায় আজ দুইদিন অটোরিকসা চালাতে পারছি না। অটোরিকসার আয়ের ওপর আমার সংসার চলে।
বিজ্ঞাপন
চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর মিরসরাই জোনাল অফিসের এজিএম প্রকৌশলী উদয়ন দাশ গুপ্ত বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে আমাদের ২২টি খুঁটি ভেঙ্গেছে, তার ছিঁড়েছে ২৫০টি স্পটে, ক্রস আর্ম ভেঙ্গেছে ১৬টি। ১৮ হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আরও ৫৪ হাজার গ্রাহক এখনও বিদ্যুৎহীন রয়েছে। মাঠে ১৮টি টিম কাজ করতেছে। আগামী দুয়েকদিনের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক হয়ে যাবে আশা করি।
বারইয়ারহাট জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. হেদায়েত উল্ল্যাহ বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে আমাদের ১২টি খুঁটি, ৮টি ক্রস আর্ম ভেঙ্গেছে। তার ছিঁড়েছে ৪০টি স্পটে। ৬টি টিম মাঠে কাজ করতেছে। ২৫ হাজার গ্রাহক এখন বিদ্যুৎ সংযোগ পায়নি।
সীতাকুন্ড জোনাল অফিসের ডিজিএম পঙ্কজ চৌধুরী বলেন, আমার অধীনে থাকা মিরসরাইয়ের ওয়াহেদপুর ও সাহেরখালী ইউনিয়নে ৩টি খুঁটি ও ১২টি ক্রস আর্ম ভেঙ্গেছে। ৫০টি স্পটে তার ছিঁড়েছে। ১০ হাজার গ্রাহক এখনো বিদ্যুৎ সংযোগবিহীন অবস্থায় রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে উপজেলার ১০ হেক্টর আউশ বীজতলা পানিতে ডুবে গেছে ও ১৮০ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সবজী মাছা বাতাসে ভেঙ্গে গেছে। দ্রুত পানি না নামলে ক্ষতির পরিমান বাড়বে। পরিপূর্ণ ক্ষয়ক্ষতি আগামী ২দিনের মধ্যে নির্ধারণ করা যাবে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের অতিবৃষ্টিতে মুহুরী প্রজেক্ট এলাকার ৩২টি খামারের ২৬ হেক্টর পুকুর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ৭৮ লাখ টাকার কার্প জাতীয় মাছ পানিতে ভেসে গেছে। মুহুরী প্রজেক্টের পুকুরগুলো পাশাপাশি লাগানো থাকায় পাড় থাকে একদম সরু। ফলে অল্প বৃষ্টিতে পাড় ভেঙ্গে মাছ পাশ্ববর্তী পুকুরে ভেসে যায়।
প্রতিনিধি/ এজে